নুন ও
নিমকহারামি
মলয়
রায়চৌধুরী
তুই তো আমার ঘাম জিভ দিয়ে
ছুঁয়ে
বলেছিলি অবন্তিকা, 'আহ কি নোনতা
অন্তরতমের প্রাণ...পুরুষালি
ঘ্রাণ...'
সেই দিন, লকআপ থেকে
আদালতে
হাতে হাতকড়া আর কোমরে দড়ির
ফাঁসে বাঁধা, হেঁটেছি
ডাকাত-খুনিদের
সাথে ; রাজপথে
সার্কাসপ্রেমীদের ভিড়...
বিশ্বাসঘাতক যারা, আমার
বিরুদ্ধে
আদালতে রাজসাক্ষী হয়েছিল, তারা
কাঠগড়া থেকে নেমে বলেছিল, নুন
তো পায়নি, মিষ্টি ছিল
আমার ঘামেতে :
তাই, বিশ্বাসভঙ্গের
প্রশ্ন নেই কোনো --
নিমকহারামি বলা চলবে না তাকে
।
প্রজাপতি
প্রজন্মের নারী
মলয়
রায়চৌধুরী
রবীন্দ্রনাথ, এটা কিন্তু
ভালো হচ্ছে না ।
অবন্তিকা বলছিল আপনি প্রতিদিন
ওকে রুকে নিচ্ছেন আপনাকে
সাবান
মাখাবার জন্য, বুড়ো হয়েছেন
বলে
আপনি নাকি একা বাথরুমে যেতে
ভয় পান আর হাতও পৌঁছোয় না
দেহের সর্বত্র চুলে
শ্যাম্পু-ট্যাম্পু করা--
পোষাক খুললে আসঙ্গ-উন্মুখ নীল
প্রজাপতি ওড়ে ওরই শরীর থেকে
আর তারা আপনার লেখা গান গায় ।
এ আপনি কী করছেন ? আপনার
প্রেমিকারা বুড়ি থুৎথুড়ি বলে
কেন
আমার প্রেমিকাকে ফাঁসাতে
চাইছেন !
ঘুণপোকার
সিংহাসন
মলয়
রায়চৌধুরী
ওগো স্তন্যপায়ী ভাষা
পিপীলিকাভূক মুখচোরা
ভূচর খেচর জলচর দাম্পত্যজীবনে
তুষ্ট একশিঙা
নীলগাই বারাশিঙা চোরাকিশোরীর
হাতে মূল্যবান প্রাণী
স্হলে বিচরণকারী উদবিড়াল
গন্ধগোকুল বিনোদিনী
শব্দগহ্বর খেয়ে নোকরশাহির
রাজ্য এনেছ এদেশে !
আলো
মলয়
রায়চৌধুরী
আবলুশ অন্ধকারে তলপেটে লাথি
খেয়ে ছিটকে পড়ি
পিছমোড়া করে বাঁধা হাতকড়া
স্যাঁতসেঁতে ধুলোপড়া মেঝে
আচমকা কড়া আলো জ্বলে উঠে চোখ
ধাঁধায়
তক্ষুনি নিভে গেলে মুখে বুট
জুতো পড়ে দুতিনবার
কষ বেয়ে রক্ত গড়াতে থাকে টের
পাই
আবার তীব্র আলো মুহূর্তে
জ্বলে উঠে নিভে যায়
গরম লোহার রড খালি পিঠে মাংস
ছেঁচে তোলে
আমাকে লক্ষ্য করে চারিদিক
থেকে আলো ঝলসে ওঠে ফের
আপনা থেকেই চোখ কুঁচকে যায়
দেখতে পাই না কাউকে
একসঙ্গে সব আলো নিভে গেলে
পরবর্তী আক্রমণ সহ্য করার
জন্য নিজেকে তৈরি করে নিই ।
গা
মলয়
রায়চৌধুরী
নোংরা-ঘোলাটে পদ্মা আর গঙ্গা
যেভাবে বঙ্গোপসাগরকে নীল করে তুলেছে
ঠিক সেভাবেই আগুনের দুচার কলি
নিঃশ্বাসে গড়া গান গেয়ে আমি
রুদ্রাক্ষহীন আঙুলে হাওয়ার
শুঁটি ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে জব্বর এক গপপো বানাই
অনেকটা যুবতী শোকাতুরাকে
জড়িয়ে মৃতকে ভুলে দেহতাপের মাতনে
আমারই দুটো ছায়ার মাঝখানে যেন
কানে-কানে বলছি :
হ্যাঁগা মেয়ে, ব্যাকরণ যদি
জানো, তো
বলো দিকিন এই 'গা' ব্যাপারটা
কী ?