শনিবার, ২১ মে, ২০১৬

ফেরদৌস নাহার




কত পথ বাকি ছিল কত যে নদী
ফেরদৌস নাহার
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে মনে হয় আমি কপিলাবস্তুর গৌতম
ফেলে এসেছি রাজ্যপাঠ, সংসার, পিতা শুদ্ধোদনের স্বপ্ন-অভিষেক
মরমি আয়ুর পাখি আমাকে ডেকে নিয়ে চলে গেছে দূর বহুদূর
আমার পৃথিবী জুড়ে আশোকস্তম্ভের মেলা, হাজার বছরের অস্ত্রোপচার
জরুরি বিভাগ আর তার অনর্গল চিৎকার

গৌতম গৌতম বলে ডাকছে অচেনা রাত, শনশন বইছে উত্তুরে বাতাস
কোনো ডাক লাগে না কানে। সারারাত কুড়িয়েছি বিজন আধোঘুম
মেলা শেষে ফেলে যাওয়া অসংখ্য পণ্যের বিচ্ছিন্ন টুকরো রাশি 
মনে পড়ে সন্ধ্যার মুখ, ভোরের অসুখ, নরম আলোয় গড়া সূর্যের ছবি
কত পথ বাকি ছিল কত যে নদী






চোখের কষ্ট জানুক জলের বিস্ময়
ফেরদৌস নাহার
কাঁদাতেও জানতে হয়
অনেকেরই নেই এই বিরল প্রতিভা
শূন্যঘাটের দিকে চেয়ে চেয়ে
যায়, কেটে যায় দিন ও সময়
সুনয়ন বেদেনির কাজল মরদ
ঝরঝর ঝরঝর ভীষণ বাদল
থৈ থৈ তলদেশ উগরে দিয়েছে যে
তার নাম নিতে নেই
সুনয়ন সখী তুই কোথায় যাবি
কাজল মরদ তোর কোথায় পালায়
কার হাতে বেঁধে দেয় প্রাণের কবজ

কাঁদাতে যে আসে তার কপালে ছোবল
নীল বিষ, নীল-নীল খানিক কালো
প্রতিভা বিকাশ হোক ঘূর্ণিবেশে
লুকিয়ে কান্না নয়, প্রবল বেগে
আকুলি বিকুলি জল ঝরুক এখন
পাখি আছে পাখা নেই, তবু তো আছে
এরকম বিশ্বাসে না-যাক বেলা
কাঁদাতে যে এসেছে সে নিজেই কাঁদুক

অনেকেরই নেই সেই বিরল প্রতিভা!





এমুখ দেখবে না ম্যাজিকআকাশ, বৃষ্টিনিশ্বাস
ফেরদৌস নাহার
রাতের রোদ, দিনের জোছোনা কেউ জানে না
এজীবনে বেঁচে থাকতে এমুখ দেখবে না ম্যাজিকআকাশ, বৃষ্টিনিশ্বাস
দূর নক্ষত্রের কথা অনেকেই জানে, তারপরও অন্ধকার জড়িয়ে থাকে                                হেঁটে যাই মেখে যাই মিটে যাওয়া দীর্ঘশ্বাস রাত                                                                 গাঢ় শব্দের প্রাচীন কম্পন গভীর অতল থেকে একবার মাথা তুলে                                   আবারো ডুবে যায়, অনেক চাঁদের ঘাটে গলে পড়ছে নিয়নের আলো                                  শরীরের দেশে লেগে যাচ্ছে তামা রং ক্ষুধা, জাগো অথবা না জাগো                                        ভোরের আঁচল খুলে দেখাও আরেকটি পৃথিবী, চেনা নয় তবু খুব আপন                              কপাটের মৃদু দূ্রত্বে দাঁড়ানো একটি নিশ্চুপ একাকীত্ব সারারাত হেঁটে হেঁটে                          মুখস্ত করছে বিমূর্ত সহবাস, তামাম ঘুমের মাঝে শব্দ তুলছে নাগরিক করাত
মনে থাকবে না এসব অনেক কিছু। তবু যা থাকবে তার জন্যে                                         একবিংশ শতাব্দীর কবি কোনোদিন ভুলবে না লাবণ্য লেখা, ভুলবে না                               অজানা স্পর্শের ভেতর লুকানো ব্যথিত আয়োজন






পথের ধুলায়
ফেরদৌস নাহার
কিছুটা ভূতের মতো দাঁড়াতে এসেছি পাশে
কিছুটা গায়ে পড়া কিছুটা যায় আসে

তোর লেখা পড়ে আজকাল মুগ্ধ যন্ত্রণায় বহুক্ষণ কথা বলতে পারি না আমি
তুই একটা অদ্ভুত মানুষ বুঝলি হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলিস অথবা
কাঁদতে কাঁদতে হেসে উঠিস খুব, অদ্ভুত মানুষ তুই অন্যরকম রাজ্যের পাখি
লাল মাটির পথে পথে যন্ত্রণার প্রাকযুগে আমাদের দেখা হলো
কান্না এলো হুরমুড় করে সে কী কান্না- সে কি তবে লুণ্ঠন চিত্রের মাঝে
দু-একটি ফলাফল? তোর লেখা আজকাল আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে
ঘরের আসবাব সব বিক্রি করে দিয়েছি পথের ধুলায় বসব বলে
তোর লেখা কাগজগুলো বিছিয়ে নিয়েছি সামনে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাব এবার






চাঁদ ও আত্মহত্যা বিষয়ক
ফেরদৌস নাহার
আত্মহত্যার রক্ত পড়ে আছে মেঝেতে, সেও লাল ও পরিচিত
রাতের আকাশ জুড়ে আদিবাসী চাঁদ গান গাইল আর
কোনো রকম মিশ্রণ ছাড়াই তোমাকে লাগছে ঘোর আদি অধিবাসী

পর্দা উঠে গেলে যেভাবে জানালা দেখে নতুন প্রকৃতি
সেভাবে তোমাকে দেখা, গুহাচিত্রের মাঝখানে অন্যরকম
দক্ষিণের সুপারি সারি মাথা দুলিয়ে ডেকে নিতে চায়- যাবে কি
প্রতিবছর প্রতিবার এমন ডাক নাও দিতে পারে, তবে ঠিক
একবার যদি যাও তাহলে বারবার যাবার প্রবণতা বাড়বে
তাই আগেই স্থির করো আমাদের পুকুরগুলোর পাশে সারারাত
আদিবাসী চাঁদের সাথে বসবে কিনা

যারা আত্মহত্যার সমর্থক তাদের কেউ কেউ আমার বন্ধু
আমাদের প্রায় সব বন্ধুরাই পরস্পরের কাছে খোলামেলা
তারা তাদের বন্ধুদের প্রতি অমায়িক আস্থাশীল এবং ক্রমাগত
কিন্তু সব বন্ধুরা জানে না আত্মহত্যার পর রক্তের চরণধ্বনি
চাঁদ হয়ে ডাক দেয় প্রতিজন্মের ভেতর