শনিবার, ২১ মে, ২০১৬

শীলা বিশ্বাস




দিনলিপি ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮
শীলা বিশ্বাস
চন্দনগন্ধ গায়ে ডানা মেলে ভোরের পাখি
মৃদু উষ্ণতায় চুপকথার কলরোল সরব আঁখি

ঠোঁটে ঠোঁটে অভিঘাত দুজনে দুজনার সঙ্গী
অস্ফুট কথারাও আজ যেন তীব্র অঙ্গাঙ্গী

অলৌকিক সংকেত পর্দা সরায় পৃথিবীর
উচ্ছ্বাস ভাঙে স্বপ্নিল গোপন প্রাচীর।
-:-





জীবনের জলরঙ
শীলা বিশ্বাস
জলে তোমরা রং দেখ না ,আমি দেখি
বিষাদ রঙ  হর্ষ রঙ, বিকাল রঙ
আর কত সুখ-দুঃখের রঙ
সময়ের রঙে রাঙ্গায় সূর্য
ছয় ঋতুও রঙ ঢালে
জ্যোৎস্না রঙ, নিঝুম রঙ দেয় চাঁদ
শুধু কান্না রঙ দিই আমি
জলই তো আমার দুঃখ ভাগ করার দোসর
কান্নার প্রিয় জল; জলের প্রিয় কান্না
জলের মত সহজ কি আর সহজে হওয়া যায় ?
জলেই আমি ভাসিয়ে দিলাম জলীয় দুঃখবীজ
আনন্দচারা হয়ে ফিরে পাওয়ার গভীর প্রত্যাশায়।

-:-





সময়ের সেতু
শীলা বিশ্বাস
গ্রীষ্মের গনগনে আঁচে সেতু পেরিয়ে যাই সময়ের
আলগোছে পড়ে থাকা স্মৃতির লাশ বয়ে নিয়ে যাই সেতুর ওপারে
ইঁদুরের আধখোটা বইএর পাতার অক্ষরে
পাখির আহত ডানার খসে পড়া পালকে লেগে থাকা বিষাদে
বৃষ্টির দিনে যূথবদ্ধ হরিণের মিলিত উচ্ছ্বাসে
বাঁশ গাছে ফুল দেখার মত বিরল দৃশ্যের নির্নিমেষ পলে
আমার শরীরে লেগে থাকা তোমার টুকরো ফ্রোজেন স্পর্শগুলো
কত অনায়াসে চূর্ণ হয়ে ঝরে বালিঘড়ির ছিদ্রপথে
সময়ের সেতু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলে জং ধরা ইচ্ছাতে সান দিই
পারাপারবিহীন সেতু দাঁড়িয়ে থাকে একলা
শুধু তোমারই অনন্ত প্রতীক্ষায় ।
-:-






তরঙ্গ যাপনের কিনারে
শীলা বিশ্বাস
তরঙ্গ তো ওঠে আকছার হারিয়ে  যায় নিজেরই বুকে
একটা তরঙ্গ কক্ষনও হারায় না কেবলি কান্না হয়ে বাজে
সে কান্নায় আমি ভেসে থাকি অনন্তকাল
সে কান্না তুমি কক্ষনও টের পাও না
দুমরাই মুচরাই নিজের ভিতর
মাঝিবিহীন পালবিহীন নৌকায় পাড়ি দিই প্রবালের দেশে
কান্নাতরঙ্গ ছোটো বৃত্ত থেকে ক্রমশ  বড় বৃত্ত হয়ে
সমস্ত পৃথিবীর কান্না শুষে নেয়
এ কান্নায় হৃদয় শুদ্ধ হয়
এ কান্নায় সমাজ শুদ্ধ হয়
এ কান্নায় পৃথিবী শুদ্ধ হয়
আমার বোধ আমাকে তুমি আরো আঘাত কর
কান্না ঝরে পড়ুক আমার ভিতর আঁখির
তরঙ্গ তুলুক আমার যাপনের কিনারে
আমার বোধের তটে আছড়াক
ধুয়ে যাক গ্লানি সন্তাপ
আমি শুদ্ধ হই
পৃথিবী শুদ্ধ হোক।
-:-






প্রিয়তম মুখ
শীলা বিশ্বাস
সন্ধ্যাবেলার গাছ সাক্ষী ছিল, ছিল শুকনো পাতার খসখসানি
নীল আলোর মেঘ, সবুজ প্রান্তর আবছায়া ছিল
স্মৃতিকুঠি থেকে উঁকি দেওয়া প্রিয়তম মুখ
পরিযায়ী প্রেম আভরণহীন সরলতার সব রঙ ধুয়ে দিলে
সাদা রঙ ঢালে জ্যোৎস্না রাতের কল্পিত চকোরী
গির্জা ঘড়ির ঢং ঢং শব্দে উড়োসময়  থেমে  যায় নিদারুন বিষাদে
রাগহীন  দুঃখহীন পরজীবি সুখ -উপকুল বন্দরে
গলুই ভাঙা নৌকা কোন নিষ্কর্মা ব্যর্থ দিনের মত
এঁকে যায় বারে বারে সেই উঁকি দেওয়া প্রিয়তম মুখ
অবিরাম মনের বৃষ্টিতে ভিজে পাঁজরের সিঁড়ি বেয়ে নামা চোখের তরল
ঋণী করে যায় সমুদ্রের লবনাক্ত জল আর সজীব প্রাণকে
এখনও আকাশের গান থামেনি তারাদের সাজ কমেনি  মনের ঊজ্জ্বল ক্যানভাসে
শহরের জরাজীর্ণ বাড়িটিরে আঁকড়ে ধরা অশথ্বের চারা হয়ে জড়িয়ে আছো
জানি আড়ালে লুকিয়ে  তুমি হৃদয়পদ্ম, মিশে আছ আমারই না পাওয়ার ভীড়ে ।।

-:-