সন্ধ্যাভাষা
মিতুল দত্ত
জলে ও নির্মাল্যে এত ছেঁড়া কাঁথা, বিজ্ঞাপন
তেরাত্তির...তেরাত্তির...হু হু...
আবার জড়োয়া তুমি সমুদ্রের হত্যাপ্ররোচনা
জেল্লায় মেখেছ, ওহো, কী কলঙ্ক তুরীয় পল্লবে!
কীসব মুদ্রার কথা বলেছিলে ঘোড়া না সিংহের
খায় না মাথায় মাখে কী যেন আবাদি অঙ্গরাগ
তবে আয় তবে এসো আসুন বসুন পিঁড়ি
পেতে দিই সন্ধ্যাভাষা একটু শিখে রাখি
রাখি হাত আজানু আজান ওই পাদপদ্মমূলে?
উঁহু না ওহো না ছাড়ো কী বলবে মেয়েলি ওই
ওরা তোরা আমরা, আহা, না হয় আমরাই
আমাদেরই কথা হচ্ছে, কথা হচ্ছে কথার কথারা
কীভাবে এসব নেবে, মানে সেই কমলেকামিনী
যে দেখেছে সে দেখেছে, গেরুয়া নাইটির থেকে
ঝরে পড়া খণ্ড খণ্ড অস্থিপুঞ্জ মেঘ
দাঁতে বিঁধে মর তুই, মরে যা কুলটা, নইলে
তোকে আর বাঁচানো যাবে না –
বলে যে গিয়েছে চলে, সে নিত্য, স্বপরাপর
আমাদের আধো আধো চেনা
ঘরকন্না
মিতুল দত্ত
সবকিছু দাঁড়িয়ে যাবে, যত সব কাহিনীকঙ্কাল
মাছের শরীর নিয়ে জল থেকে উঠে আসবে ঠিক
সমস্ত কুয়োর নীচে
শান্ত এক দেশ আছে মেয়েমানুষের
পুরুষ চায় না তারা, রাতে শুধু উঠে আসে
পুরুষের স্বপ্নদোষ শরীরে ধারণ করে
গর্ভবতী হয়
পুরুষসন্তান হলে কুকুরের মুখে ফেলে দিয়ে
বাসনমাজার গল্পে ফিরে যায় তারা
আমি সেই দেশে যাব
কুকুরের মুখ থেকে তুলে আনব ঠাণ্ডা হাড়গোড়
এই ভেবে আজ
কুয়োর দড়ির ফাঁস দুপায়ে পরেছি আর
আমার মৃত্যুর পাশে গল্প জমে উঠছে খুব –
সকালে কী রান্না হল
বিকেলে কী জলখাবার হবে...
যাপন
মিতুল দত্ত
যেভাবে আমিও বেঁচে থাকি এই মোহে ও সম্মোহে
যেভাবে তুমিও বেঁচে থাকো এই মুগ্ধ দিনরাত
যেভাবে আমার দুঃখ তোমার দুঃখের সঙ্গে
ওতপ্রোত হয়ে যায়, আমাদের দেখা হয়
ঝুলবারান্দার নীচে মৃদু এক আবেশমণ্ডলে
যেখানে শরীর সব আয়োজন রেখে দেয় কল্পবিছানায় আর
বিছানার মধ্যে থেকে কালো ঘড়িপরা এক
হাত উঠে এসে প্রহর ঘোষণা করে
সঙ্গম অপূর্ণ রেখে দু’জনেই উঠে আসি
চেনা রাস্তা, চেনা হাসপাতাল
মুহূর্তে অচেনা লাগে, হলুদ ট্যাক্সিতে উঠে পড়ি
আমাদের অনন্বয়ে থাকে কালো ব্যাগ, কালো ছাতা
পরস্পর বসে থাকি, মানে খুঁজি, সময়নষ্টের কথা ভাবি
বেঁচে থাকা শেষ হয়ে আসে
মেয়েদের কথা
মিতুল দত্ত
খালাসিটোলার গল্পে মেয়েরা থাকে না
মেয়েরা তো পরি পরি, ডানায় নিন্দুক
সিন্দুকের ঘটিবাটি জানে তারা
ঋতুর নোটিশ, জ্বর হলে জলপটি জানে
সপাটে থাপ্পড় আমি শেখাতে চেয়েছি মেয়েদের
বলেছি ঢ্যামনামো ছেড়ে কপিকল শেখো
আষাঢ়ে গল্পের চাষ হচ্ছে খুব ফেসবুক অরকুটে
অথচ মরকুটে প্রেমে না বাঁচি না মরি
না যাতনা শিখে শিখে
যা তা গন্ধ মাড়িয়ে চলেছি
হাল্লাবোল উঠেছে যদিও আজ সাইনাসের দিনে
যদিও হাঁটুর কাছে টিউমারের বেদনাবিহীন
নিঃসঙ্গ চুড়োয় উঠে ভেঙে দিতে চেয়েছি অনীহা
তবু আপোশের কথা যত ভাবি হেঁচকি ওঠে
পাপোশের কথা ভেবে কষ্ট পাই খুব
জুতো লুকোনোর ছলে
লুকিয়েছি তাকে যে কোথায়, সে কি জানে?
সেই সমুদ্রে নেভানো সিগারেট?
চতুরঙ্গ
মিতুল দত্ত
কলের শব্দের মতো তবু কিছু দ্বন্দ্ব বেঁচে থাক
ফেরিওলা, মৃত রোদ, যেভাবে সন্ধের দিকে যায়
ঘুমন্তের চাকা ঘোরে, ওড়ে পাখা, পাখির বিশ্রাম
গাছের শাখায় তবু বেজে ওঠে গাঢ় কোলাহল
কে বলেছে হে চণ্ডাল, আমি আর দ্বিজত্বে যাব না
বেড়াব না, উপবীত, অন্যথায় যমুনাপুলিনে
যেন বাঁশি বেজেছিল, যেন শঙ্খ লেগে আছে বুকে
যামিনী, যামিনী, কেন দুপায়ে পেরেক আজও বিঁধে
শহর আত্মার মতো লেগে আছে ঘুমে ও কফিনে
মোমবাতি, ভাঙা চাঁদ, কাদের নিশ্বাস উড়ে যায়
কাদের নিশ্বাস লেগে নষ্ট হয় পৃথিবীর আয়ু
যেন অভিশাপ, যেন চতুরঙ্গে এসেছ সন্ন্যাস
মৃত্তিকার পরপারে তবু রোদ, চোখের আড়াল
নাভি ও আগুন তবু চেটে খায় পরস্পর ক্রোধ
তবু বাঁশি বাজে, তবু মৃত যায় মৃতের সমীপে
যামিনী, যামিনী, কেন দুপায়ে পেরেক আজও বিঁধে...