মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২০

কল্পদেব চক্রবর্তী


কল্পদেব চক্রবর্তী

চেতনার আমন্ত্রণে চাতক

আমি জানি তুই ফিরে ফিরে আসবি
বিষন্ন চেতনাতে
তারপর আমি কেমন থাকি কি যায় আসে
তোর তাতে
ঝরাপাতার এই মৌসুমে হলুদ পাতা,
প্রতীকি চেতনা অমানিশায়
নিভু নিভু আমি, সবুজ পাতা তোর মন
যেমন ছিল তখন, তোর আর আমাতে।

মনের গর্ভে সুখ করে লালন
ইচ্ছে গুলো করে পলায়ন
তবুও আশায় থাকি নিম্নচাপের বর্ষা শেষে
সূর্যটা উঁকি দেবে কি?

এখন আর সহ্য হয় না আলেয়ার জ্বালাতন।

আগুন জ্বালিয়ে সন্ধ্যারতি
আগুন আবার সর্বগ্রাসী সর্বনাশী
পাষাণ মুরতি
মনটা ভরে বিশ্বাসে
তবুও কেন? পালাই আমি ত্রাসে !

           





ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে

সম্পর্কের স্বচ্ছতা স্বার্থের সুচাগ্রে বন্দি
"বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী "
দুর্যোধনের হুংকার এখনো অনুরণিত মননে।
সংকীর্ণতার নাগপাশে ক্ষুরধার তরবারির নিচে
এখনো পিতামহ ভীষ্ম খুঁজে পাবে ঘরে ঘরে
সত্যের গলাটিপে অনাদরে,
দুর্যোধনের সিংহাসন রক্ষা করে।।

গান্ধারী মাতা যদি চোখের কাপড় সরিয়ে দৃষ্টি মেলে
স্থানান্তরিত হবে বৃদ্ধাশ্রমে
নয়তো নির্বাসিত সাগর সঙ্গমে।।

"কুপুত্র যদি বা হয় কুমাতা কখনো নয় "
মিথ্যা প্রবাদ বচন।
ঘরে ঘরে কৈকেয়ী মাতার অধিষ্ঠানে
সতীনের কন্যার স্থান হয় বেশ্যালয়ে
সৎ পুত্র যায় বনবাসে এখনো।

কিংবা পথে পথে পরিচয়হীন কর্ণ
কুন্তি মাতা বসে আছে রাজসিংহাসনে
এখনো কি নয়?

সতীত্বের সংজ্ঞা কঠোরতার বেড়াজালে
এখন আর আবদ্ধ নয়
মননে দ্রৌপদী গোপন অন্তরালে।

মন্দিরের চাতাল গোলাপজলে ধৌত প্রতিদিন
পবিত্রতা মনে, বাহ্যিক নয়।

প্রেম কত শত রূপে ধন্য, ধন্যা
তবুও ইতিহাসে, হয়তো ভবিষ্যতেও অনন্যা।।

            




খোঁজ নেয়া হয় নি

যার হাত ধরে চাকরি পেলাম
সেই বসাক স্যার 
রিটারমেন্ট করার পরে কোনদিনও খোঁজ নেয়া হয়নি
উনি কেমন আছেন!
একদিন ওনার স্ত্রীর সাথে দেখা হল
জানলাম উনি আর নেই।

এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মৈত্র সাহেব
উনি ও রিটায়ার করেছেন
চাকরি জীবনে আমার গডফাদার
অসম্ভব স্নেহ করতেন আমাকে
দেখা হয়েছিল অনেক দিন আগে
পথ চলতি মানুষের ভিড়ে
পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে
হা হা করে উঠে বুকে জড়িয়ে ধরলেন
আমার পাশের পাড়াতে তার বাড়ি
তারপরে অনেকদিন দেখা হয়নি
মনে হতো কেমন আছেন তিনি
মাঝে মাঝে মনে পড়ত, কিন্তু
যাওয়া হয়ে ওঠেনি!

তার ছেলের সাথে বাসে দেখা একদিন
শুনলাম তিনি আর নেই।

সেই বন্ধুর বৌদি
নিজের বৌদির মতোই স্নেহ করতেন 
সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন
বিখ্যাত লেখকদের কাছে
বলতেন আমার দেওর খুব ভালো লেখে
ওকে একটা সুযোগ দিন।

আজ আমার কত বইয়ে কত লেখা প্রকাশিত হচ্ছে
বৌদি দেখলে খুশি হত
কিন্তু আমার  বৌদির খোঁজ নেওয়া হয়ে ওঠেনি
জানিনা উনি কেমন আছেন!

অবজ্ঞা উদাসীনতা অকৃজ্ঞতা,
নাকি সময়ের প্রভাব?!