জাফর পাঠান
অন্তর দহন
দুরু দুরু বিকম্পিত বুকে, শংকার বিউগল
বাজে
বাহুবল বাহুল্যে-দেখি
চৈতন্যের বৈকল্য সমাজে,
মানুষের কামিয়াবী আস্ফালন
গহন-গঞ্জন- নৈতিক স্খলন,
সহেনা এ হৃদয়ে- মানুষে
মানুষে অহম বিভেদ
মানুষ খুনে টিকে থাকার-সহেনা এত
অন্তর্ভেদ,
এইদিকে মানুষ-ঐ দিকে যমে
সততার মরণ মিছিল- ভূমে,
কাঁদতে কাঁদতে কারো হয় অশ্রু
শূন্য-শুকনো
আঁখি
কারো যন্ত্রণা সইতে সইতে- উড়ে যায়
প্রাণ পাখি।
খুনের সংখ্যাধিক্যে- অশ্রুর
স্রোতস্বিনী অসহায়ত্ব
কে দেখে-স্বাধীন
দেশে পরাধীন জনতার দাসত্য,
এ যে এক-মর্মস্পর্শী
অনুভূতি
মানেনা মিনতি-কষ্টকর অতী,
আঘাতে আঘাতে করবে জর্জরিত-প্রাণহীন
শান্ত
এ যেন মৃত্যুহীন প্রাণ
হরণকারী- কোন
কৃতান্ত,
কোথায় সূর্য-কোথায় থাকে
চাঁদ
মনো নদে বহে- মরণের নাদ,
ধিকি ধিকি নিতি অন্তর দহন - নিরন্তর সহন
হুতাশনে পুড়ে অন্তঃকরণ- অনলে
অবগাহন।
জাফর পাঠান
শশীর প্রতিক্ষা
প্রস্ফুটিত তরঙ্গ যৌবনের – পূর্ণেন্দু রোসনাই হাসি
জেগে উঠে পূর্ণিমার শশী-আমি উদাসী
বাজাই বাশী,
আকাশে-বাতাসে-ভূপৃষ্টে-বিলায় যদিবা
নিজকে শশী
নিষুতি ভেঙ্গে উঠে জড়িয়ে ধরে
বলি-আমার
উর্বশী,
নিগূঢ় ভাব সহবাসী।
শুভ্র কাদম্বিনী শাড়ীতে লুকায় যখন
মুখশ্রী - শশী
ইচ্ছে করে স্নিগ্ধ শশীর গায়ে
উড়ে গিয়ে তখন মিশি,
শশী রোসনাই মাখা মুখে-কামাগ্নী
জ্বালিয়ে শুধু হাসে
যাকে আমি খুঁজি-প্রতি
লোমকূপের শিহরণী বিশ্বাসে,
প্রতিটি রাতের সুহাসে।
সবাই উপরকে দেখলেও - দেখবো আমি
ভিতরকে
ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কাদম্বিনীর
শাড়ী-দেখবো
গতরকে,
দেখবো রূপ যৌবনে ভরা- মোহময় গুণের
কায়াকে
অন্তরে অন্তর মিশিয়ে আমি- চাখবো শশীর
মায়াকে,
মনের তবকে-তবকে।
ঝুঝবো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে-কামুক
বাহুডোরের আঁকড়ে
শশী রূপের ঐ কান্তারে- দন্ত কামড়ে-নখের আঁচড়ে,
দেখবো রূপ যৌবনের শুধু কি বড়াই - দেহ ঝলকে
নাকি চিত্তেরও ঝলক বহে - প্রতি পলকের
পলকে।
জাফর পাঠান
মনোমতি
মনকে শুধাই
মন তুমি মনোচরিত্র নিয়ে কিছু
বলো,
কোন্ সুখে তুমি
এই দেহকে ছেড়ে ধোঁয়াসার পথে
চলো।
তুমিতো আমার
তবু কেন ছুটো দিগ্বিদিক
অন্ধের মত,
ধরো তুমি রূপ
মরুভূমির তৃষ্ণা মিটানোর
তৃষ্ণা যত।
জন্ম থেকে আজো
এক ছাতা তলে দুজনে বাস
মিলেমিশে,
হতবাকে ভাবি
তবু যোজন যোজন দূরে জানিনা
কিসে।
বলো তুমি মন
ফুলে বসেও কাঁটায় কেন গাঁথো
মনন,
করো কেন পণ
মনাসনে বসে মনের কেন করো খনন।
জাফর পাঠান
কিছু মানুষ আছে
কিছু মানুষ আছে –
লোভ ইচ্ছার কাছে যারা নিজকে
বিলিয়ে দেয়
জিহ্বায় লালা ঝরিয়ে যত পারে
বাগিয়ে নেয়।
কিছু মানুষ আছে –
যারা অহংকারের কাছে নিজকে
হারিয়ে বসে
তাবৎ মানবকূলের গালে- চড় মারে
কষে।
কিছু মানুষ আছে –
হিংসার ঘোরে ঘুরে যারে তারে
হিংসা দিয়ে মারে
ক্ষমতা যদি থাকে হাতে- মারে তবে
গণহারে।
কিছু মানুষ আছে –
লাজ-লজ্জার মাথা
খেয়ে হয় বেআব্রু বেহায়া
যখনই মনে আসে যাহা- করে বেড়ায়
তাহা।
কিছু মানুষ আছে –
নিজকে বিলিয়ে দিয়ে করে নিজের
স্বার্থোদ্ধার
চরিত্রে কলংক লেপে খোলে
বিলাসিতার দ্বার।
জাফর পাঠান
ভাবাকাশ
সেদিন মাটিতে নেমেছিলো ঐ
আকাশেরা
যার বুকে চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা,
কখনো হয়না দিকহারা।
ভাবের সাথে প্রত্যহ গল্প করি
অলিন্দে
পদ্য রসে গল্প কষি ছন্দে
ছন্দে,
বসি, বৈকাল
পেড়িয়ে সন্ধে।
আকাশরা আড্ডায় আসেনি আজ অযথা
বলে ওদের হৃদয়ে জমা কথা,
মানুষের দেয়া যত ব্যথা।
বোমার শব্দ, বারুদের
ধোঁয়া, আর্তনাদ
চলার পথে প্রতারণার ফাঁদ,
প্রেম পায়না প্রেমের স্বাদ।
আকাশ বক্ষে বহমান- ব্যথার
তান্ডব
কুড়ে কুড়ে খেলেও দেখেনা ভব,
কষ্টকর এক অনুভব।
মানুষ খায় মানুষেরে হাড্ডি-মাংস ছিঁড়ে
বিতৃষ্ণ আকাশ ঘরে যাবে ফিরে,
খঞ্জরে খুঁচিয়ে বুক চিরে।
জাফর পাঠান
দুখ-তরী
দুঃখ আমার পিছু নিয়েছে-সেই শিশুকাল
থেকে
সে জানেনা মায়ের উদরে-সুখকে এসেছি
রেখে,
এসেছি বানে ভাসা, ঐ
কচুরিপানার মত ভেসে
যদিও দুখি মা জন্ম দিয়েছে
আমায়-হেসে
হেসে।
ভয় পাইনা এখন, ভয়ের কারণ ঐ
দুখকে
সুখ পাইনা-চলার পথে
যদিবা দেখি সুখকে,
দুহাত বাড়িয়ে ওরা ডাকে-হাতে হাত
রাখি যাতে
আমি চলি আমার মত করে-কান দেইনা
তাতে।
ধরণীর মেকি সুখকেও, টেনে নেইনা
এ বুকে
ভয় হয় সুখেরে যদিবা, সুখ মারে
ধুঁকে ধুঁকে,
কোথায় সুখ কোথায় দুখ পাইনা যে
খুঁজে তাকে
সুখের মাঝে দুখের বাস জন্ম
তার ঝাঁকে ঝাঁকে।
সুখ সাগরের দোলায় আমি, দুখের তরী
বাই
নাওয়ের নাইয়া হয়েও তটের দেখা
না পাই।