বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

মেঘ অদিতি




মেঘ অদিতি
১৯৫৭
--------
কাহার সাম্পান ভাসে-
কাহারা চিৎকার করে?
দৌড়ে যাই তোমাদের মাঝ দরিয়ায়। ঝিনুক আয়না হাসে। আর যত ফুলডুংরি পুষ্পস্মৃতি দূরে ফেলে গাণিতিক জোন ধরে, বার বাই পাঁচের ভূমিহীন ফিরে আসি অসহ সঙ্গমের কাছে

হাস্নুহেনার মত ছিমছাম, ১৯৫৭ সীমানা ভাঙে, ভাঙে হারমোনিকার সুর.. অনন্ত দহনে সরে ম্যাপেলের পাতা। অন্তর্বর্তী স্মৃতি থেকে ট্রেকিং পরবর্তী ডায়েরির পাতায় বাবার রেখে যাওয়া সেইসব শব্দরহস্য ঘেঁটে তুলে আনি তোমার স্মিতহাসি মুখ।

কাহার সাম্পান তবে ভাসে?

সমুদ্র জানতো, পেবল কুড়িয়ে আনা পুরুষের কাজ। ঝড় এলে আমি জানতাম তুমি আসবে। ৬৮ কিলোমিটারের একটানা বাতাসের বেগে ভেসে বেড়াত তোমার চাপা শ্বাস..

মোহহীন তুমিআর আমার ছায়া পুড়ে যেত ছাতিমের বনে উত্থান-পতনে গর্জে ওঠা সেই ঢেউদের দিনে বাতাস ভরে উঠত অগ্নিচূর্ণে।

কাহারা চিৎকার তবে করে?

সমস্ত পণ্ডশ্রমঅনন্ত আঁধার।
সকলই ফুরায় তবু জাগে অপেক্ষা
ঝরে অজস্র পাতা..







মেঘ অদিতি
চিঠি
-----------
মাঝে মাঝে
বিদ্যুল্লতায়
দেখা দেয় মুখচ্ছবি
মাঝে মাঝে মনে পড়ে
দ্বিধার আরক মোড়া তোমার ঠিকানা
আমাদের পারা ও না পারার দিনে
যতদিন থাকা তার, সবটুকু বাঁচা?

বিরতিতে মনে পড়ে
কোনো কোনো বুনো রাতে
আমরাও ধুলোবালি
স্বরবর্ণ বদলে বদলে
লিখে গেছি নির্জনতার চিঠি...







মেঘ অদিতি
অন্ধকার

বরং দিন থেকে রাত- একা হও আরো
বুঝে নাও সীমান্ত রক্ষীর চোখ
বুঝে নাও জমিনের হলুদ ছোপ
আর মৃত্তিকার ফুল থেকে ঝাঁকে ঝাঁক
উড়ুক মৃত্যুপাখি
লিখে রেখে অমলিন হাহাকার-
ভুল চাঁদে দৃষ্টি ফেরাও যদি

তুমি-আমি
আধভাঙা তেমনই অন্ধকার







মেঘ অদিতি
নামুক অন্ধকার
-------------
কপাল বেয়ে
চোখ বেয়ে
এই যে নেমে আসছে চুমুর দহন
মনে হচ্ছে
লালিমার অধিক আজ অগ্নিসত্তা
বেরিয়ে আসছে খাঁচার বাঘ
মাথার ভেতর ফুঁসে উঠছে স্ফুলিঙ্গ

অতঃপর
বিস্ফোরিত হবার মুহূর্তে
ক্ষীণ আলোয় চোখ দুটো ভেসে গেল যেই
সমস্ত শরীর ভেঙে বেরিয়ে এল সেই উন্মাদ

আলো নেভাও
আলো নেভাও
আহ .. দেখিও না মায়া
আমি তোমাকেও ঘৃণা করতে শিখেছি প্রভু

প্রতিবার আর্তনাদ, অনেক তো হলো..
এবার ফুরাক খেলা এমন ঘৃণার







মেঘ অদিতি
সালতামামি
কেমন গেল ব্যক্তিগত এ বছর? এ প্রশ্নে পিছন ফিরলে দেখি- ঝড় থেকে ঝিনুক আয়না, সন্দীপন থেকে সমুদ্র, পাহাড় থেকে পালাজ্জো কী নেই।
সমগ্র প্রাপ্তির ভেতর তবু জন্ম ও মৃত্যু খেলা করে। শার্সিতে খেলা করে কার্নিভাল রঙ। অহোঃ ব্রহ্মাণ্ড, এমন নবীন দেহে পুরোনো মিথেরা কেন ভীড় করে আসে। নাভিপদ্মে ক্ষণে ক্ষণে জন্ম নেয় পুরাণ প্রহর।

পার্সিউসের ডানা, মেডুসার মাথা আর উড়ানে ভেসে আসা অ্যান্ড্রোমিডার ডাকে আকাশ খুলে খুলে পড়ে পায়ের নুপূরে। লাল ক্রূরচোখ, মধু ও মদের নেশায় ঘন হয়ে আসে। স্নায়ুতোলপাড়ে ফিরে আসে অভিব্যক্তি যত- বছরের শেষ এই দিনে। ডগমার বিপরীতে আমার আঙুল ধরে উঠে আসে এক একটি ধর্ষিত রাত। অভ্রের দানা ভেবে তাকে রাখি অস্পষ্ট তিলের খাঁজে। অদূরে পতন পতন বলে দৌড়ে চলে কেউ। চন্দ্রমল্লিকার সাথে কমলালেবু ও শীতকালীন জ্বর হেসে ওঠে। ডুবে যায় বাকি সব মুখাগ্নিবেলা।

শ্যাম্পেন ও স্কচের ফোয়ারায় এইবার নিভে যাবে শীতার্তের চোখ। 
কেমন তবে এ পনেরর সালতামামি? নকশা শিশু, ক্রিস্প সম্পাদনা না কি প্লুটোর কাছে উড়ে যাওয়া নিউ হরাইজনস? ওবামা না পুতিন? দু কদম এগিয়ে এ প্রশ্নে তবু আরেকবার পিছন দিকে ফিরি। দেখি আয়লান কুর্দি থেকে রক্তাক্ত প্যারিস, সর্বত্র উত্তাল ঢেউয়ের তাল। দুলে দুলে ওঠা কৃষ্ণ পতাকা। আর আমি মুখ ঢাকি দ্রুত। শূন্যতার ভেতর নগ্ননির্জনে ধেয়ে আসে অন্ধকার। উদাত্ত সর্বনাশা খড়গটির কাছে নতজানু, বলি ওই দেখো আমাদেরও পথজুড়ে নিথর শরীর কত। কত যে নগ্ন শীর্ণ হাত। ভাঙাচোরা মুখগুলো দেখ একবার। হিমঘরে চেয়ে দেখ কিভাবে ঘুমিয়ে পড়ছে একে একে যতিহীন বোধ।

ব্যক্তিগত আখ্যানে ভরে ওঠে ডায়েরির পাতা। বছরের শেষতম রাতে আবার বংশীবাদকেরা ডাকে, হাতে হাত, হাউই ওড়ার ক্ষণ। আসে উৎসব বেলা। আসে চাঁদ ও চুমুক পেয়ালা। দূরে নদীতে এক অবাক ডুবুরী তুমুল রিদম তুলে ডাক দেয় আমাকে আবার। দূর থেকে দেখি তার দীর্ঘতর ছায়া কিভাবে লীন হয় জলের ভেতর।

এক একটা উৎসবের রাত যেমন আড় হাসির ঝিলিকে কন্টকময় তেমনই আমার ঘরের ভেতর সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। অতলের কোনখানে আমি তবে গভীরতা মাপি! নীল থেকে সবুজাভ পৃথিবীর বাঁকগুলো ঘুরে লোকালয় ক্রমে দূরে সরে যায়। কথাভাষ্য থেকে সরে আসে উড়ালমাছেরা।

জেগে শুধু বিষণ্ণ সোনার।
আর ওই ঘোর জাগা ইশারাটি, কোড নেম যার- শূন্য শূ্ন্য শূন্য...