ইন্দ্রাণী সরকার
বৃষ্টি
বৃষ্টি নামে চোখে, ঠোঁটে
পরতে পরতে বক্ষ হতে বাহুমূলে
নাভিতে গিয়ে জন্ম নেয়
একটা ছোট্ট দিঘী
বড় শান্ত টলমলে জল
আমি দুচোখ ধুয়ে নিই
সমস্ত ক্লেদ মুছে যায়
কি করে বোঝাই কি করে বলি
সে না এলে ভোরের আলো
ফোটে কি ফোটে না
ফুলেরা লুকিয়ে রাখে মুখ
তার জল জ্যোত্স্না ছুঁয়ে
ভোরের আলোতে মিশে যায় |
ইন্দ্রাণী সরকার
ঠিকানা
সপ্তর্ষি মেলা আকাশে পা দিয়ে
ভাবি
তোমার বাড়িতে ফিরে যাবার কথা
পাঁচিল বেয়ে বোগেনভেলিয়ার
গাছটা
ডালপালা ছড়িয়ে সুন্দর বেড়ে
উঠেছে
রঙিন ফুলগুলোতে রামধনু ফুটে
ওঠে
কিন্তু তোমার দেখা নেই, জানিনা তুমি
এখন কোন সমুদ্রে বালির ঘর
আঁকছ
কালো আকাশে কাজলের মাখামাখি
নীল পাহাড়ের দেশে সবুজের আলপথ
ডিমনা হ্রদের সাজানো বাগানে
এখন
অজস্র ফুল ঝরনার মত ঝরে
যাচ্ছে
তোমার বাড়ির নম্বরটা খুঁজে
পাই না ।
ইন্দ্রাণী সরকার
স্মৃতি আলেখ্য
জ্যোৎস্নার আলপথে আঁধার ঘনিয়ে
আসে
কিছু নর নারী আগুনের ধারে
ছড়িয়ে বসে
সামনে ধু ধু জঙ্গল আর ওদিকে
সমুদ্রতট
কেমন যেন অজানা রহস্য স্মিত
হাসছে
দুরে পাহাড়ের কোলে ঘুমন্ত
চাঁদের উঁকি
আকাশের কোলে পাহাড়, তার উপরে
চাঁদ
চাঁদের ছায়া জলে, তার পাশে
আগুন
আগুনের ধারে গুটিকয়ে মানুষ আর
কথা
এই কি জীবন? এমনি সহজ আর
সরল ?
না, এ শুধু
জীবনের কিছু সুন্দর মুহূর্ত
যা কিনা অনেকদিন পরও মনে আঁকা
থাকবে
যখন কর্মব্যস্ততায় শ্রান্ত
তখন আমরা এই
অতীতের মধুর স্মৃতিতে মনকে
ভারমুক্ত করি
স্মৃতি শুধুই বেদনার নয়, শান্তির
পারাবারও।
ইন্দ্রাণী সরকার
চিলেকোঠায় রোদ্দুর
শুভ্র আঁচলে ঢাকা সন্ধ্যাতারা
আকাশের জমিনে ধীরে ধীরে ফুটে
ওঠে
ঘন অনুরাগ বসনে রাঙা
শুক্লপক্ষের চাঁদ
ভেসে যায় আলোর বন্যায়
বিমুগ্ধ চাহনি দিয়ে ছুঁয়ে
যায় দ্বিধাহীন সত্ত্বাকে
পাথর শরীর কেটে ঝরনার জল
সুমিষ্ট কলতানে মিশে যায়
পাহাড়ী নদীর স্রোতে
ভালবাসার চিলেকোঠা
ছাপিয়ে
একরাশ রোদ্দুর আলপনা এঁকে
দেয় নিম্নগামী শহরতলীতে |
ইন্দ্রাণী সরকার
বনপলাশীর পদাবলী
আঁতুর ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই
সে যেন অনেক বড় হয়ে গেল ।
ঝুমকোলতায় কাঁপন দেওয়া বাতাসে
দোলা লেগে তার মনের কথাগুলো
শিমুল তূলোর মত ছড়িয়ে গেল
এদিক থেকে ওদিক ।
কেন জানি না চাঁদের
ত্র্যহস্পর্শ
লাগার মত তার মনটাকে
করা যেন বিক্ষিপ্ত করে দিল !
অবিমৃষ্যকারীদের কোমল ছোঁয়ায়
কি আশ্চর্য্যভাবে তার উপলব্ধিগুলো
ছিন্নভিন্ন হয়ে পথের ধুলোয়
মিশে গিয়ে
বনপলাশীর পদাবলীতে রইল গাঁথা
।