বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

রত্নদীপা




মুখোমুখি রত্নদীপা: কবিতা উৎসব


কবিতা উৎসব: কবিতা উৎসবের পক্ষ থেকে কবি রত্নদীপাকে বৈশাখী সংখ্যায় স্বাগত। ‘কবিতা আর বাঙালি: বাঙালি আর উৎসব’ এ যেন এতটাই স্বত:সিদ্ধ যে, এই নিয়ে কোন সংশয়ের অবকাশই থাকে না। আমরা কবিতা লিখতে ভালোবাসি। কবিতা পড়তে ভালোবাসি। কবিতায় থাকতে ভালোবাসি। আর যে কোন বিষয়ে নিয়েই আমরা উৎসব গড়ে তুলতে পারি। আর কবিতা নিয়ে উৎসব তো আমাদের বারোমাস্যা। তাই কবিতা নিয়ে বাঙালির এই উৎসবকেই আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ মাসিক কবিতা উৎসব, শুধুমাত্র কবিতার জন্যে কবিদের মাসিক পত্র। বাংলার জনজীবনে কবিতার এই যে একটা বিপুল প্রভাব এই বিষয়টি কবি রত্নদীপাকে কি ভাবে প্রভাবিত করে। এবং আপনার কবিসত্ত্বার গড়ে ওঠার পেছনে এই প্রভাব কতটা ক্রিয়াশীল ছিল বলে মনে করেন আপনি?

রত্নদীপা: কবিতা নিজেই একটি উৎসব । আমার মনে হয় , কবিতাই জীবনের একমাত্র সেলিব্রেশন । সেলিব্রেশন অফ লাইফ । সেলিব্রেশন অফ ভারচু অ্যান্ড ভাইস  । অক্ষর এবং শব্দের মিলিত উৎসব । রত্নদীপা সেই উৎসবের সামান্য প্লেটলেট । কবিতাই প্রিয় যানবাহন   । সৌম্যদর্শন রাঙামাটি ... স্বর্গ এবং ভূস্বর্গের সামগ্রিক রাস্তাপথ ... কবিতা যে মায়াময়তা সৃষ্টি করেই চলেছে ... আর দৈনন্দিন আহার যোগাড় ... প্রতিটি তরঙ্গ । মহাকালের সমুদ্রটি ... রত্নদীপা সেই পতঙ্গের দিকে তাকিয়ে ... সোনাতরীর সেই বাৎসল্য , মুহুর্মুহু বাৎস্যায়ন ... কি কোরে অগ্রাহ্য করে সে ... এমন সাধ্য কি তার ... কবিতাই কবির সার্থক অনটন আর দারিদ্রিক সীমারেখা যে  ...


কবিতা উৎসব: সাম্প্রতিক অন্তর্জাল বিপ্লবে বাংলা সাহিত্য বিশেষ করে বাংলা কাব্যসাহিত্যের ভুবন কি বিপুল পরিমাণে বিস্তৃত হয়ে গিয়েছে সেটা আমাদের সকলের চোখের সামনেই ঘটেছে ও ঘটছে। আগে লিটল ম্যাগাজিনের পরিসরের বাইরে অনেকটাই ফাঁকা জায়গা পড়ে থাকতো, যেখানে অনেকেই কবিতা লিখলেও তা চার দেওয়ালের বাইরে আলো দেখতে পেত না। আজ কিন্তু যে কেউই তার কবিতটিকে বিশ্বের দরবারে হাজির করতে পারছে। এই বিষয়টাকে আপনি ঠিক কি ভাবে দেখেন? অনেকেই যদিও বলছেন, এতে কবিতার জাত গিয়েছে চলে। এত বিপুল পরিমাণে অকবিতার স্তুপ জমে উঠছে, যে তার তলায় চাপা পরে যাচ্ছে প্রকৃত কবিতা। এই প্রবণতা বাংলা সাহিত্যের পক্ষে আদৌ কি আশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন আপনি? না কি এটি আসলেই অশনি সংকেত?

রত্নদীপা:  একজন মানুষ কখন কলম তুলে ন্যায় ? যখন তার হেমন্ত সফল হয় । যখন তার কোজাগরী অপূর্ণ থাকে । যখন সে বুঝতে পারে সে আছে অথবা সে নেই ... তখনি তার কলম শব্দচয়নকেই জীবনের ধারাপাত বলে মনে করে । ক্ষতি কি বলো ? খুন ধর্ষণ রাহাজানিতে গা না ভাসিয়ে কলমই তুলে নিয়েছে বেচারা ।। সব কলমেই কি আর জুঁই ফুটবে ? নামহীন অজাতশত্রু কোন হরিণফুলই ফুটলো না হয় ... আমি লাভ বই ক্ষতি দেখিনা তাতে ... কবিতা বাড়ুক গাণিতিক হারে ... আমি বিশ্বাস করি ... এই সূর্যের নীচে মানুষের লেখা প্রতিটি পংক্তি এক একটি কবিতা ... অন্তরজালে হোক আর ইন্দ্রজালেই হোক ... মানুষের আঁকা প্রতিটি শব্দই সার্থক আরণ্যক ... বিভূতির চিক ... ম্যাজিকের মানডণ্ড বুঝতে পারবো এমন ক্ষমতা কোন জহুরীর নেই ... আমি কাঁচা আঙুলের লেখা এবং পাকা হাতের লেখা প্রতিটি কবিতাকে কালো কাজল পড়িয়ে দিই , যাতে নজর না লাগে ...


কবিতা উৎসব:  নয় নয় করেও আপনার প্রায় ছয় ছয়টি কাব্যগ্রন্থ প্রাকাশিত হয়ে গিয়েছে এযাবৎবলা যেতে পারে বাংলা কাব্য জগতে এখন রত্নদীপা একটি প্রতিষ্ঠিত নাম। অন্তর্জাল বিপ্লবের আগে প্রকাশিত কাব্যগ্রণ্থের পাঠক সীমাবদ্ধ ছিল কাঁটাতার বরাবর। কিন্তু এখন বিষয়টা ঠিক সেরকম নয় আর। বিশেষত আপনার কবিতার একটি বৃহৎ পাঠককুলই কাঁটাতারের ওপারে। আমরা জানি বাংলাদেশে কবি রত্নদীপার জনপ্রিয়তা রীতিমত সমীহ জাগানো। হয়তো ঈর্শনীয়ও বটে। এই যে বিপুল পরিমাণে পাঠকের আগ্রহ কবি রত্নদীপার কাব্যশৈলীতে, এইটি আপনাকে কতটা অনুপ্রেরণা দেয়।

রত্নদীপা:  খুব মন করছে , এই প্রশ্নের উত্তরটি একটি কবিতায় দিই ...

‘তোমার কাছে ধার করেছি আলো
আলেয়ার অগাধ শিশু
বড় হতেছি ক্রমশ
তোমার স্মৃতির লাঙল
আমার সমগ্র বরাকর জুড়ে
স্নেহচাষ
বারোমাস তুমি রোদ্দুর দিয়েছ
আমি সেই তেজঘোড়াটির
আদুরে ঘড়াটির
মোহরে আক্রান্ত
তুমি বিপুল দেশ
সধবা রঙের নদী
পাঠক হে , তুমি দূরান্তদেশ
দূর থেকে প্রশ্রয় পাই তোমার
হাতছানিতে দিগন্ত মিশে গেলে
তোমাকেই কবিতা বলে ডাকি ’

এই কবিতাটি পাঠকের উদ্দেশ্যে এইমাত্র তৈরী । আমার স্থানীয় পুকুরে যারা বরাভয়ের দীঘি , তাদের ছাড়া আমি কখনো বাজিনিকো ... আমার কবিতাও বেজেছে কি ...

 
কবিতা উৎসব:  অনেকেই বলেন বাংলা কবিতার চেনা ছকের বাইরে রত্নদীপার কবিতা একঝলক টাটকা বাতাস। অনেকটা সঞ্জীবনী সুধার মতো। একবার অবগাহন করলে বারবার করতে ইচ্ছে করে। যে কোন সাহিত্যিকের পক্ষেই এইটি একটি বিরাট প্রাপ্তি, নিঃসন্দেহে। পাঠক যার কবিতা বারবার পড়ার পরেও প্রতিবার কোন না কোন ভাবে একটা নতুনত্বের আস্বাদ পাচ্ছে। নতুন নতুন দিগন্ত খুলে যাচ্ছে পাঠকের অনুভবের পরতে। আর তাই কবিতাটা ঠিক কোন লাইনে এসেই থেমে যাচ্ছে না একেবারে। কবিতাটও চলছে পাঠকের সাথে, পাঠককে নিয়ে। এই চলাটাই কিংবা এই চলতে পারাটাই সৎ সাহিত্য। উৎকৃষ্ট সাহিত্য। এই বিষয়ে কবি রত্নদীপা নিজে কতটা সচেতন?


রত্নদীপা:  কবিতা সচেতন অবস্থায় লেখা যায় না । অন্তত আমি লিখতে পারি না । লিখতে হবে বলেই লেখা. .. সে আর যাই হোক কবিতা নয় । কবিতা লেখা হয় অচেতনে । একটা ঘোরের মধ্যে ... পালঙ্কহীন একটা ঘর । রাজপ্রাসাদ আঁকা বিছানা । শিশিরের বালিশ কুয়াশার পাশবালিশ ... উল্কাপাতের খুদে খুদে পাখি ... যা তুমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবে না ... কবিতা তাকেই দেখায় ... অন্ধকার থেকে জেগে উঠে আমি তাকে দেখি , ছুঁই । স্পর্শের কান্না দিই , দোলাজগতের হাসি দিই ... কচিঘাস ... বারোটি দর্শনের সবুজ বাতাস ...সাহিত্য মাত্রই উৎকৃষ্ট । উৎকৃষ্ট হওয়া ছাড়া সাহিত্যের দ্বিতীয় কোনো চারকোল নেই... কোথায় যেতে হবে জানি না ... কোথায় পৌছব তাও জানা নেই ... কখন কবিতার অসুখে সুখপ্রাপ্তি হবে আমার ... কে বলে দেবে ... সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে কখন ... রাত্রির ঠোঁট ... জলের গতি , ঝর্ণার মথ .. উড়ে যাবে অলৌকিক ... রানারের পলাশ ঝরবে  অঢেল ... অবিরাম অবিরত ভিখারি বনে আছি যে .. আমার ঘুম পাওয়া ঘুম ... আমার ঘুম না হওয়া ঘুম ... কবিতা ছাড়া শুনবেটাই বা কে ...


কবিতা উৎসব: আমরা দেখেছি রত্নদীপার কবিতায় শব্দের উৎসব। আমরা দেখেছি শব্দের ক্যানভাসে চেনা শব্দের অচনা বিভঙ্গ! শব্দ যেন আর শুধুই শব্দ নয়, সে শুধুমাত্র ভাব বিনিময়ের মাধ্যমও নয় আর। শব্দই যেন জীবন্ত দর্শন! কবিকে ছাড়িয়ে শব্দই তখন তাতে স্টিয়ারিং নিয়ে নিয়েছে যেনঅভিভুত পাঠককে নিয়ে পারি দিয়েছে অনন্ত বিস্ময়ের সাতসুমুদ্র পার করে আরও কোন অজানা পথে! যেখানে কবি রত্নদীপাও একজন নিবিষ্ট দর্শক মাত্র। যিনি দেখছেন পাঠককে নিয়ে তার শব্দমালার অলৌকিক নৃ্ত্য! আমরা সেই দর্শক রত্নদীপার অনুভবের কথা শুনতে চাইছি একটু।

রত্নদীপা: যখন কবিতা লিখি তখন আমি ঘরামি  । তারপরই ঘোর সরে যায় যখন ... তখন কবিতার একনিষ্ঠ আসামি  । দূরের দূরবীন দিয়ে তখন আমি সেই কবিতাকে পড়ি । কাছের অণুবীক্ষণেও তাকে মাপি । ধরা ছোঁয়ার আঁকিবুকিতে পুলকিত হই কখনো । আবার কখনো দেরাজের প্রাচীন পাতায় কবিতার কারুকাজ প্রাকৃত করি নিজের কবিতার কাছে নিজেই মেনে নিই পরাজয় । কোমর বেঁধে ঝগড়া করি কখনো আবার ছুটি পাওয়া ঘড়ির সুরে দমকা হই । মনে হয় কি জানো , আমি এই কবিতার কেউ নই ... আত্মীয় স্বজন ... অথবা পাড়া পড়শি ... দেশ গাঁও কেউই নই ... এমনকি লেখকও নই ... কবিতা যেন নিজেই নিজেকে লিখছে ... নিজেই শুনেছে চউরাশিয়ার পথরেখা ... আবিষ্কারের রত্নাকর , অঙ্গুলিমালের জোয়ার ... রত্নদীপার এমন ক্ষমতা আছে নাকি  যে ... সে কবিতা লিখতে পারে ... এই তো তার সামান্য দুটি আনা আকাশ , চার আনার মাটি ... রাখালিয়ার আসবাব ... দোলাচলের পটভূমি ... কবিতার বিগ্রহ রচনা কি চাট্টিখানি কথা ? স্বয়ং কবিও জানেনা ... কবিতার কতখানি সুমিষ্ট গর্জন ... আর কতখানি  বেদব্যাসের মুনিরচনা ...


কবিতা উৎসব: আপনার সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সম্প্রতি অনেক স্থানেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে বেশ তীব্র ভাবেই। তার আঁচ হয়তো আপনার উপরও এসে পড়েছে। অনেকেই আপনার সাম্প্রতিক লেখাকে অশ্লীলতার দায়ে বিদ্ধ করতে চাইছেন। এই বিষয়ে আপনার নিজস্ব অভিমতটুকু একটু বিস্তৃত ভাবে জানতে চাইবো আমরা। তবে তার আগে একটি বিষয়ে বলতে পারি এই যে অশ্লীলতার অভিযোগ, সাহিত্যক্ষেত্রে এটি কোন নতুন কথাই নয়। বহুবার বহ কবি সাহিত্যিক এই একই অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছেন। যখন বিদ্ধ হয়েছেন তখন অভিযোগকারীরাই পাদপ্রদীপের আলোয় নিজেদেরকে আলোকিত করে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বারবার। সফলও হয়েছেন তখনকার মতোকিন্তু পরে কালের কুলোর বাতাসে তারা কে কোথায় যে উবে গিয়েছেন, সে খোঁজ আর কে রেখেছে। কিন্তু থেকে গিয়েছেন সেই কবি সাহিত্যিক তাঁর সৃষ্টি নিয়ে প্রবল ভাবে যুগের পর যুগ। এটই সাহিত্যের ইতিহাস। তাই কালের কষ্ঠী পাথরে বিচার না করেই আপনার লেখার সম্বন্ধে এই যে অশ্লীলতার বিতর্ক, একে কিভাবে দেখেন আপনি? একজন সচেতন সাহিত্যসেবী হিসেবে। কতটা কষ্ট জমে ওঠে কবির অন্তর্দেশে?

রত্নদীপা:  ৩৬-৩২-৩৪ একটি শক । ধাক্কাও বলতে পারো । পাঠকের কাছে খুব কঠিন এটা মেনে নেওয়া যে রত্নদীপা এমনটি লিখতে পারে । যিনি ‘ আমি ঈশ্বর হতে চাই ‘ বা ‘মৃত্যুকে নিষিদ্ধ করো লিখেছেন ‘ ... তিনি কি করে সীতার যৌনরস খসানোর কথা কবিতায় লিখতে পারেন । পাঠক এমনকি বইটির নাম বা প্রচ্ছদ মেনে নিতে পারেননি । অনেকেই এই কবিতার বইটিকে চটিসাহিত্য আখ্যা দিয়েছেন । আর রত্নদীপার নাম হয়েছে সেক্সকুইন । সব চাইতে যেটা আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছে সেটা তথাকথিত আলোকিত মহিলাকবিদের কথা ... যারা কেবল দলের ভেতরে দল ... দলের ভেতরে কামানের দল ... গর্জে উঠেছেন রত্নদীপার বিপক্ষে ... যে সব ভাষাগুলি ব্যবহার করেছি , সব নাকি পাব্লিসিটির উদ্দশ্যে ... বিখ্যাত হবার জন্যে ...

‘’’’’’ আমি তো ছেড়ে দিয়েছি সব
সম্পূর্ণ কলকাতা ছেড়ে দিয়েছি তোমাদের
তোমরা নাচো গাও
 হাততালির অট্টালিকা বাজাও ...

সব ছেড়ে ছুড়ে
আমি গ্রাম থেকে গ্রামান্তর
গ্রাম্য ঝর্ণার মুখে দাঁড়িয়ে কতখানি
আর লাফাতে পারি বলো

তোমাদের জ্যা-মুখ
তোমাদের ডানা
সবই তীব্র খুব

আমি সেই একই
নীরব উপত্যকা
উৎসমুখ
 ‘’’’’’’

এই কবিতাটি আমার সেইসব বন্ধুদের ডেডিকেট করছি ... যারা মনে করেন আমি অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করছি বিখ্যাত হবার জন্যে ...

তর্কের খাতিরে মেনে নিচ্ছি আমি সামাজিক রীতিনীতি চলন এই কবিতাগুলিতে মানি নি । কিন্তু মানবই বা কেন ... আমি কবিতাতে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছি তার নিজের মত , আমি শব্দকে আঁকতে চেয়েছি ... তার নিজস্ব সুরে ... ব্যাঞ্জনায় ... কোলাহলে । প্রাণপণে বাঁচতে দিয়েছি তাদের ক্রোটন , তাদের সিসমোগ্রাফিক উল্লাসের রিখটার ...

তাই সদর্পে ঘোষণা করেছি বিউগল ...

‘’ যৌনগ্রন্থ
হাজার চানক্যের চাইতে দামী
অর্থশাস্ত্র ‘’

আবার ধরো ,

‘’ আমি এমনকি শুরুও হইনি...
ছিপি খুলে দু’ দাগ মাত্র উঠেছি
তোমার ফুরিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে
আর তোমার সাদাত্ব শুষে নিতে নিতে
নিজের ভেতরেই নিজেকে ঘনত্ব করছি নিয়মিত ‘’’

আমি কবিতাকে বাধা দিই নি , বিপত্তি ও না । তাই তো এরা অশ্লীল‘লুকিয়ে চুরিয়ে মেটাফর দিয়ে অনেক লিখেছি । আর লিখবো না । খিদে পেলে বলবো খিদে পেয়েছে ... সেক্স পেলে বলবো সেক্স পেয়েছে ... ‘’

এই কবিতা আমার নিজস্ব অর্জন আমার নিজস্ব ঘোড়া একদম নিজের আস্তাবল তোমার হিম্মত থাকে তো তুমি তোমার ঘোড়া ছোটাও আমি আমার রাইফেল সমেত আগ্রহে আছি তোমার পিস্তলের বাইবেল শুঁকবো বলে ...


কবিতার উৎসব: আপনার সম্প্রতিক লেখার শিরোনামে মাঝে মধ্যেই দেখা যায় অশ্লীলতার দায় লেখকের নয়? তবে কার? পাঠকের দেখার ভঙ্গিতেই না কি সমাজের অভিভাবকত্বের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে অশ্লীলতার বীজ?

রত্নদীপা:  আমি নিজে সমাজ টমাজ কে তোয়াক্কা করিনি । তবে এই বই লেখার পর ভাবছি কবিতাহীন  সমাজই বোধ হয় কবিতার শ্রেষ্ঠ অভিভাবক । সত্যিকারের পাঠক যে কোন লেখার মধ্যেই কবিতা খুঁজবেন । আর মিথ্যেকারের পাঠক খুঁজবেন অশ্লীলতা / পর্দাপ্রথা ... আমার একটাই কথা ... যা প্রতিদিন বা প্রতিনিয়ত ঘটছে তা যদি তুমি পরিষ্কার ভাষায় কবিতা বা গদ্যে লিপিবদ্ধ করো , তখুনি সমাজ রে রে তেড়ে আসবে ... এই প্রসঙ্গে একটি কবিতা তুলে ধরছি ...

৪৩ নম্বর কবিতা

আপনাদের বিশ্বাস হয় ?
সীতাকে বাগে পেয়েও রাবণ কোনোদিন
ধর্ষণ করেনি ...

অথবা সীতা নিজেই আলোড়িত
যৌনরস খসাতে
রাবণের কাছে যায়নি
বুকে হাত দিয়ে বলুন তো
বিশ্বাস হয় ?
আমার তো হয় না

আফটার অল
সীতা একটি আতাফল
আর রাবণ মারাত্মক
তোতাপাখি ...

এই কবিতাটিকে উদাহরণ হিসেবে নিলুম । ভেবে দ্যাখো , আমি নতুন কিছু লিখিনি কিন্তু রাম যা ভেবেছিলেন , যা বিশ্বাস করেছিলেন তাই এই কবিতায় লেখা হয়েছে । রাম যদি কবিতা লিখতেন তাহলে এই কবিতাই লিখতেন । রাম এটাই বিশ্বাস করতেন যে সীতা ধর্ষিত হয়েছিলেন ... আর সেই জন্যেই সীতার বনবাস । প্রজাদের মুখ চেয়ে রাম সীতাকে ত্যাগ করেছিলেন , এ আমি বিশ্বাস করি না । সীতার তথাকথিত সতীত্ব নিয়ে রামের মধ্যে যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ না থাকতো তাহলে তিনি সীতাকে ছেড়ে দিতেন নানিজে সীতার সাথে রাজ্যপাট চুলোর দোরে দিয়ে অযোধ্যা ত্যাগ করতেন ... কিন্তু তিনি তা করেননি ... অথচ তিনি আজো পুজো পেয়ে যাচ্ছেন । মহিলাদের কাছ থেকে বেশি পাচ্ছেন ...

তা এই কথাই যখন আমি কবিতা করলুম তখন দুটো জিনিস হোলো ...  
এক: রত্নদীপা একজন সেক্সকুইন
দুই: রত্নদীপা শৃঙ্গার রসযুক্ত চটিলেখক
  

কবিতা উৎসব: কেউ কেউ মনে করেন কবি যদি মহিলা হন, তাহলে তাঁর লেখায়, তাঁর শব্দ চয়নে অনেক বেশি সংযত হওয়া উচিৎ। একজন পুরুষ কবির শব্দবিভঙ্গে নারীর যেনিচিত্র বিভাসিত হলে সেটা কাব্য, অথচ একজন মহিলা কবির শাব্দিক ক্যানভাসে শিশ্নযোনির যুগলনৃত্যে সমাজরক্ষকরা গেল গেল রবে সোরগোল তুলে ফেলেন এইবুঝি সমাজ রসাতলে গেল। এই যে দ্বিচারীতা, পুরষ হলে একরকম, আর নারী হলে তার সীমারেখা আরেক রকম। একজন কবির কবিতার থেকে তাঁর লিঙ্গই যেখানে কাব্য বিচারের প্রাথমিক মাপকাঠি হয়ে ওঠে- সেই অবস্থাটি কবি রত্নদীপাকে কতটা অস্থির করে তোলে। বিশেষত সেই দুর্ঘটনা যখন তাঁর কাব্য বিচারের ক্ষেত্রেই ঘটে?

রত্নদীপা: আমি এই শব্দ ভাগাভাগির মধ্যে নেই । এই এই শব্দ পুরুষ লিখবে । নারীরা লিখবে না ।

নারীরা আরও বেশি করে লিখবে । নিজস্ব উদ্ভাসের কথা আলোকের কথা অন্ধকারের কথা কইবে । নারীরা ধর্ষিতা হবে , বাসে ট্রেনে , ফেসবুকে ইনবক্সে নারীরা আক্রান্ত হবে আর এইসব লিখতে পারবে না ? পুরুষরা খুল্লমখুল্লা ভোগের কথা লিখবে , আর নারী তার দুর্ভোগের কথা লিখবে না ... বাহ ! দারুণ  মজা তো ।

আমার যা ইচ্ছে তাই লিখবো । আমি কারাগারের কথা লিখবো সংশোধনের কথাও । ঈশ্বর টিশ্বর অল দ ফাকিং থিংস নিয়ে অনেক লিখেছি । এইবার লিখবো ... লিখবো শুধু না , চিৎকার করে লিখবো ...

স্বাদ পাবো না জানি
তবু তোমার বাঁ দুধ চুষবো আমার ডান ঠোঁট দিয়ে
বাঁ ঠোঁটে জাগাবো তোমার লিংগ
আগ্নেয় অস্ত্র
তারপর ন্যাংটো তোমাকে
দেখাবো জাহান্নম
চোখ আধাআধি খোলা
মুখ আধখানি বোজা
ক্লান্ত হবো না
কখনো আড়াআড়ি
কখনো সোজাসুজি
রগরগে চটিমার্কা করবো তোমাকে
ঠিক তোমার মতো কোরে ...

তারপর দৃপ্ত পায়ে ফিরবো সংসারে ... ‘’’

এই তো আমাদের বাস্তব সমাজের ছবি । আমি সেই ছবির মুখে লাথি আঁকি ...
এবং তা প্রকাশ্য রঙতুলি দিয়ে ।


কবিতা উৎসব: আমাদের বাঙালিদের একটা অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে চলে। ইংলিশ ভাষার মাধ্যমে আমরা যখন বিশ্বসাহিত্যের সর্বভুখ পাঠক, তখন সাহিত্যে শ্লীলতা অশ্লীলতার বিষয়ে আমাদের বিশেষ মাথাব্যাথা থাকে না। কিন্তু নিজের মাতৃভাষাতেই যখন কিছু কিছু অচ্ছুৎ শব্দের সাহিত্যিক ব্যবহার দেখি, তখনই আমরাই সমাজের চরিত্র রক্ষার বিষয়ে অতি তৎপর হয়ে উঠি। এর দুটি কারণ হতে পারে। এক আমরা সমগ্র সাহিত্যের অভ্যন্তরে প্রবেশ না করেই কিছু অচ্ছুৎ শব্দের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে গিয়ে সেই শব্দের ব্যবহার নিয়েই বিচার বিতর্ক জুড়ে দিতে আনন্দ পাই। দুই, অনেক ক্ষেত্রেই আমরা লেখকের প্রতি আমাদের ঈর্শাজনিত বিদ্বেষেও এইটা করে থাকি। আমরা যারা কলমের অক্ষমতায় যে কোন বিষয় নিয়ে যেকনো শব্দ নিয়ে স্বাধীনভাবে কিছু সৃষ্টি করে উঠতে পারি না, তারাই হয়তো বিশেষ করে শ্লীলতা অশ্লীলতার বিতর্ক উস্কে দিয়ে নিজেদেরকে হাজির করতে তৎপর হয়ে উঠি পাদপ্রদীপের আলোতে। বাংলা কবিতার পাঠকের পক্ষ থেকে আমরা কবি রত্নদীপার অভিমত শুনতে চাই এই বিষয়ে। তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে।

রত্নদীপা: ঠিক কথা । বিশ্বসাহিত্যের সর্বভুখ পাঠক অশ্লীলতা নিয়ে মাথা ঘামায়নিতো । বরঞ্চ মাথায় তুলে নেচেছে । জাত গেলো জাত গেলো ইত্যাদি মুখর হয়েছে , প্রশ্নবাণে জরজরিত করেছে মুক্তমনা এই সমাজ ... যখন দেশগাঁয়ের লোক , তকমাআঁটা সুশীলতা থেকে বেরিয়ে কিছু একটা লিখেছে ।সে নিজের বঞ্চনার কথাই হোক অথবা সেক্স চাহিদার কথাই হোক । লিখবে কেন ?

এই প্রসঙ্গে আরেকটি কবিতা । মাত্র চার লাইন । ৩৬-৩২-৩৪ কাব্যগ্রন্থের ৬ নং কবিতা ।

‘ তোমার পেনিস আমি দেখিনি
দেখিনিকো
শুধু তার নড়াচড়া
শুনেছি তার সি শার্প পর্নো ‘’’

পেনিস দেখিনি ? কি ভয়ঙ্কর কথা ‌, গোল্লায় যাক রত্নদীপা ... ওর হাবি কিছু বলে না ওকে ? বেলেল্লাপনা করে বেড়াচ্ছে চারদিকে ... এত বড়ো মেয়ে রয়েছে একটা ... লজ্জা শরমের বালাই নেই ।। অসভ্য মেয়েছেলে একটা ... চিপ ভেরি চিপ মহিলা ...

কেউ একটিবারও  ভেবে দেখলো না ... কেন এমনটি লেখা হল ...

একটি মেয়ে যখন ধর্ষিতা হচ্ছে সে ভয়ে লজ্জায় বিবমিষায় চোখ বন্ধ করে রাখছে ... সে পেনিসটি দেখছে  না , দেখতে চাইছে না ... অথচ সেই অস্ত্রটি তার শরীরে প্রবেশ করছে / নড়াচড়া করছে ... আর সেটা তার অনুমতি ছাড়াই ...
তবে বিদেশী সাহিত্যে এই কবিতা লেখা হলে কবির মান বাড়তো বই কমতো না ...

এবার আসি প্রশ্নের দ্বিতীয় পয়েন্টে 

যারা বা যে সমস্ত কবিরা আমার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার কথা বলছেন ... তারা ঈর্ষার কারণেই বলছেন , এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই আমার । তবে এইসব ঈর্ষা টিরসা নিয়ে মাথা ব্যথা করি না আর ... কারণ ... আমার কোথাও কোন প্রাইজ পাবার নেই / মাইক হাতে জীবনানন্দ সভায় জীবনানন্দ সাজবার নেই / ট্রফি হাতে গদ্গদ কণ্ঠ হবার ও নেই । এবং সব চাইতে বড়ো কথা ... কবিতা ছাড়া আমার কোথাও পৌঁছোবার নেই । আমি বিখ্যাত হবার বাসনায় কবিতা লিখি না ... আমার জগতে আমি সম্রাট ... বাকি পৃথিবী আমি তুচ্ছজ্ঞানে হেয় করি ...

 সুতরাং বন্ধুগন ... আপনারা দলে দলে রত্নদীপার বিরুদ্ধে দলাদলিতে যোগ দিন ... কলকাতা থেকে পৌঁছে যান কোন্দলের শহরতলিতে ... তাতে কবির কিছু ইতর বিশেষ হবে না ... রত্নদীপা থাকবে রত্নদীপাতেই ...

আমাকে কি একটু অহংকারী শোনালো ? শোনাক । কবিতা তো অহংকারী জড়োয়াই । না হয় আমিও একটু গয়না হলেম  ...

‘’ মাত্রই তো তিনটি মিনিট ...

হে বোধিপুরুষ
এমন বিচি নেই
এমন বিচি নেই তোমার বোধিফলে
যে আমাকে বুদ্ধি-ইজম দিতে পারো ... ‘’’

বাই দ ওয়ে , বোধিপুরুষ এবং বোধিমহিলা ... আমি এখানে দুইপক্ষকেই মিন করলাম কিন্তু ...


কবিতা উৎসব: “৩৬ -৩২ -৩৪”যে কাব্যগ্রন্থ নিয়ে এত বিতর্ক, যে কাব্যগ্রন্থে পাঠক এক নতুন দিগন্তের উদ্ভাসন অনুভব করতে পারছে। যে কাব্য কবি রত্নদীপার পূর্ববর্তী কাব্যধারা থেকে আনেকটাই দূরবর্তী। আবার দূরবর্তী হয়েও রত্নদীপার নিজস্ব স্বাক্ষরচ্যুত নয় কোনভাবেই , সেই কাব্যের প্রেরণা বা উন্মেষের বিষয়ে যদি একটু বিস্তৃত ভাবে বলেন। এই লেখাগুলি লেখার সময়ে কবি রত্নদীপাও কি তাঁর পরিচিত ভুবনের দিগন্তকে অনেকটাই বাড়িয়ে নেন নি? তাঁর অনুভবের সাহিত্যিক মাত্রায়?

রত্নদীপা:  নিশ্চয়ই । এই কাব্যগ্রন্থটি সম্পূর্ণ সৎ গ্রন্থ । কোন লুকোচুরি নেই । শব্দ দিয়ে শব্দকে মারার চেষ্টা নেই । কসরত নেই । কোন ভোজবাজিও নেই । যা আছে , তা সেক্সযৌনতার কুসুম । সেই কুসুম কখনো আগুন । আবার কখনো আলুথালু বেবুন ... এই কাব্যগ্রন্থে আমি যতখানি প্রসারিত হয়েছি ...আর কখনোই আমি তা হইনি ... হয়তো আর কোনোদিন হতেও পারবো না ...

 যেন এই কাব্যগ্রন্থে ... কয়েক শতাব্দীর পুরনো নক্ষত্রধারা বসেছে আলাপনে ... কোটি যুগ বাদে ... যেন এইসব কবিতা আমার ভেতরে জমে ছিল বহুকাল আগে ... যেন আমি গতজন্মের লুডোহারার শোধ নিতে পারলুম এই জন্মে এই কবিতাবই লিখে ...

২৪ নম্বর কবিতা থেকে ক’ খানা লাইন তুলে দিচ্ছি ...

‘’ আমার সাধ আছে সাধ্য নেই
মন করে সেক্সমুহূর্তটিকে বেঁধে রাখি
সোনার পাথরবাটির মত জৌলুসটুকু
ন্যাপথলিনের কৌটোয় জড়িয়ে মুড়িয়ে রাখি
যেন মাত্র দু’দিনের শিশুটি
দুধ চাইছে খুব ...

দৃশ্য দেখি বহুক্ষণ ধরে
কুসুমে কুসুমা
লক্ষ লক্ষ যীশু ... ‘’’

একজন কবি তিনি যেই জেন্ডারই হন না কেনো ...এই কয়েনসর্বস্ব পৃথিবীতে তিনি যদি অর্গাজমের কয়েনেজটিকে তাবৎ যীশুদর্শনের সাথে একছন্দে নাই বাঁধতে পারলেন ... তাহলে তার কবিতা লেখাই বৃথা । তাই বলছি ...  ৩৬-৩২-৩৪ ... আমার আর কবিতার রিলেশনশিপ আঁকা যৌথজাহাজ ... বাকি সব ছল আর চাতুরির ছলাত ... আসাযাওয়ার কদাচিৎ মাত্র ...


কবিতা উৎসব: বাংলা সাহিত্য বাংলা সংস্কৃতি বাংলার সমাজ জীবন। সর্বত্রই নিরন্তর ভাঙাগড়ার কাহিনী। ৩৬-৩২-৩৪ প্রকাশের অভিঘাত কবি রত্নদীপার ব্যক্তি জীবনে কতটা ভাঙাগড়ার সাক্ষী হয়ে উঠেছে। আমরা জানতে চাইছি, চেনা জানা বন্ধুপরিজন কিভাবে এই নতুন রত্নদীপার প্রকাশকে গ্রহণ বা বর্জন করেছে। অবশ্য যদি আপনি বলতে চান কিছু তবেই।

রত্নদীপা: আমি সোজা কথা স্পষ্ট চোখে কইতে ভালবাসি । এই বই প্রকাশের পরে নিচের কয়েকটি ব্যাপার হয়েছে ।

এক: খুব পরিচিত কয়েকজন ভাই-বন্ধু –বেরাদর  আমাকে ত্যাগ করেছেন
দুই: কেউ কেউ বলেছেন , আমি চরিত্রহীন
তিন: কেউ বলছেন চমক দেবার জন্যে আমি নিজের বোধিকে নামিয়ে দিয়েছি 
চার: আড়াল থেকে আমার ওপর নজরদারি
পাঁচ: স্কুল কলেজের কমনরুমে রত্নদীপার পোশাক এবং কবিতা দুই নিয়েই প্রখর আসর বসছে কোন ছবিতে রত্নদীপার ক্লিভেজ দ্যাখা যাচ্ছে এবং কতখানি
ছয়: কেউ কেউ বলছেন আমি খুব সাহসী । যুগের তুলনায় এগিয়ে
সাত: কেউ বলছেন কতটা প্রাসঙ্গিক এবং কতটা দরকারি ছিল এইসব অশ্লীল কবিতা ।
আট: অনেকেই এই বই পড়তে চাইছেন । পড়ছেন / তারপরে জানতে দিচ্ছেন না তিনি এই বই পড়েছেন
নয়: কেউ বলছেন , এইরকমই লেখা উচিত মহিলাদের , ব্রেভো রত্নদীপা । তারপরেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন , মহিলারা যৌনতা নিয়ে লিখবে কেন ?
দশ: ঈশ্বর প্রজাতির মানুষরা তুলোধোনা করছেন রত্নদীপাকে অথচ কবিতাগুলিতে চোখ এবং ভুরু বোলাচ্ছেন নিয়মিত একটি পংক্তিও মিস করছেন না
এগারো: কেউ কবিতাগুলি পড়ে জিভ চাটছেন আর ভাবছেন ... একবার যদি কবিকে হাতে পাওয়া যেত ...


কবিতা উৎসব: সব শেষে জানতে চাইবো, সাহিত্যে শ্লীলতা অশ্লীলতা বিতর্ক ও সাহিত্যিকের স্বাধীনতা এই বিষয়ে কবি রত্নদীপার সামঞ্জস্ব বিধানের চাবিকাঠিটা কি? কারণ অধিকাৎশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সাহিত্যে শ্লীলতা অশ্লীলতা বিতর্ক সাহিত্য ছাড়িয়ে সাহিত্যিককে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতে থাকেযেটা স্বভাবতঃই খুবই দুঃখজনক।

রত্নদীপা: সামঞ্জস্য বিধানের প্রশ্নই ওঠে না । কারণ আমি নিজেকে এইসব বিতর্কের মধ্যে রাখিও না , থাকিও না । সুদূর কর্ণাটকের প্রত্যন্ত গ্রামে বসে আমি নিরীক্ষা চালিয়ে যাবো । লাগাতার ।  আমি শত্রুর মুখে ছাই দেবো না শুধু , বন্ধুবেশী শত্রুদের মুখেও ঝামা ঘষে দেবো ...

অই যে বল্লুম না ... যারা মাইক হাতে মঞ্চে মঞ্চে ঘুরে নৃত্য পরিবেশন করে / যারা কবিতার থেকেও বেশি পিঠ চাপড়ানি আর কান-সুড়সুড়িতে বিশ্বাস করে আমি তাদের মধ্যে নেই । আমি কারুর সাথে নেই । কোনো দলে নেই । আমার জন্যে আমি একাই যথেষ্ট । আমার দলহীনতাই প্রমাণ করে ... আমি শুধুই কবিতার দলে ।

আমি স্বাধীন
আমি যা চাইবো তাই
আমি যতদূর ইচ্ছে ততদূর
আমি মাস্টারবেশন
আমি অর্গাজম
আমি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পক্ষের লেসবিয়ান
আমি বুক আর ব্রেসিয়ার
আমার কাপসাইজ ৩৬ বি
আমি শানিত কীট বাদামী ক্লিটোরিস
আমি মা- দুধ
আমি ধর্ষিতা বালিকার দুধে-দাঁত
এবং ইতিমধ্যেই
আমি আমার মেয়েকে জানিয়ে দিয়েছি  
পৃথিবী একটি ফাঁদ

প্রেম একটি প্রতারণা
শরীর একটি ফুটো
হাজার গর্তের মধু
লাখ মৌচাক সমান

হা হা হা ... এই দ্যাখো , তোমার প্রশ্নের উত্তরে আবার একটি কবিতাই তৈরী করে ফেল্লুম ...

শ্লীল এবং অশ্লীল ... দূরের কথা ... কবিতার আসলে সংজ্ঞাই হয় না 
নীল আর আকাশ
দৃষ্টি আর রেটিনা
ক্লোরোফিল আর ক্রোমোজোম
নদী আর পাহাড়ের যৌথ অর্গাজম

বোরখা আর ঘোমটাহীন  সেই অলীকস্রাব
কোনো চিরুনিতে আঁচড়ানো যায় না ...