আলোকিত বন্দর
এক নতুন বন্দরের স্বপ্নমায়ায়
ভেসেছিল সে
নাবিকের তৃষ্ণায় উন্মুখ
বৃষ্টিবিন্দুরা ঝরেছিল –
ইমনের তানে , আলাপে, উচ্ছ্বাসে
নদী হাসে
ঝড়ের উত্তাপে রাতপাখী নীড়
খুঁজেছিল ।
পণ্যের রঙচঙে রূপকথা দুহাতে
জড়াতে চায়
নাবিকের উপোসি চেতনার বিষাদ
শরীর
নাবিক জাগে , নাবিক ঘুমায়
, পণ্যের
মৃতদেহে
জমা হয় বিলাসের গন্ধমাখা
কাগজের ফুল ।
এভাবেই কেটে যায় দিন মাস অনেক
বছর
আসে ক্রান্তিকাল ঘন গভীর
শ্রাবনে ,
নাবিকের সূর্যমুখী জন্মচেতনা
খুঁজে নেয়
এক আলোকিত বৃষ্টি শুদ্ধ বন্দর
...
রঞ্জনা রায়
নোঙর
অসংখ্য জনতার চোখের আড়ালে
বৈশাখী হাওয়ায় দোল খাওয়া
গাছের পাতারা কখনো গল্প বলে ।
অগণিত রাতের অন্ধকার চাদরের
ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্না সাজানো
একটি
রূপালি চাঁদ হয়তো উঁকি মারে ।
স্কাইক্রেপারের ৩৮ তলায় যখন
মেঘেরা নিজেদের সাজিয়ে তোলে
তখন অনুভবে তোমার উত্তাপ
এক অচেনা রোদ্দুর হতে চেয়েও
হটাৎ বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে ।
মারমেডের মত সাঁতার কেটেছি
বসন্ত আগুনে কবিতার খোঁজে ,
তোমার চোখের ঘনপল্লব ছায়ায় ।
৩৮ তলার যে কোন সওদাগর মেঘ
যখন তীক্ষ্ণ নখের আঁচড়ে
দিনরাতের
সবকটা সবুজ পর্দা ছিড়ে এগিয়ে
আসে ,
তখন কেন তোমার একান্ত
রক্তকরবী
হতে চেয়ে মেসেজ বক্সের নীলাভ
আলোয়
আমার আমি নোঙরের দড়ি খোঁজে ?
রঞ্জনা রায়
একটি ক্ষণ
একটি নিস্তব্ধ ক্ষণ রাখতে
চেয়েছি মনের গভীরে ,
বৃষ্টি ফোঁটার নিথর আভাসে
রামধনু সাগরে জেগে ওঠা ব–দ্বীপে
ডানা মেলে রোদ্দুর মাখে ।
পৃথিবীর আবর্তনে বাঁধা পড়ে
বীজময় প্রানের অনাহত পরিক্রমা ।
কাল থেকে কালে যোগ আর বিয়োগের
মায়াবী লীলা ,
খেলা গড়া , খেলা ভাঙার
খেলায় মেতে
মন ক্লান্ত থেকে ক্লান্ততর
রাতে ,
খরচের খাতায় জমার হিসেব
মেলাতে বসে ।
মরা ইঁদুরের চোখে কখনো কি
শারদীয় জ্যোতি হাসে ?
অসংখ্য বিতর্ক , প্রশ্নের
মাঝে প্রাণভোমরা সেই তদ্গতক্ষণ –
ব্রহ্মে ব্রহ্ম লয়
নীল আর নীলে নিরাকার
।
রঞ্জনা রায়
অন্তিম নিঃশ্বাস
আমার অসহায় রাতগুলো এক কঠিন
গারদে বাস করে ,
অনেক নিযুত বছরের অভিশাপ , পায়ে জড়ানো
ঝরে পড়া শিউলি ফুলের অনুভব ।
শিকের ফাঁকে ফাঁকে জমা হয়
মুক্তির মায়া ।
দিনে – রাতে
পুতুলের সাজ পরে –
আমি ঘুরি কয়েদের বাক্স – ঘরে ।
শীর্ণ যমুনার তীরে আজো কি
বাজে বাঁশি ,
দুঁহু কোঁড়ে এখনো কি জাগে
বিচ্ছেদ ভয় ?
৩৬৫টির গারদে বন্দী আমার এই
জীবন
বসে থাকে বুকে নিয়ে মধুর
বিশ্বাস ,
শ্যামের অভিসারে মোহিনী হবে
সে –
গারদ শোনে গারদের অন্তিম নিঃশ্বাস...
রঞ্জনা রায়
বৃষ্টির সাথে পথ হেঁটেছি
অঝোর বৃষ্টির সাথে হেঁটে
চলেছি ,
বৃষ্টি নেশায় মাতাল , চঞ্চল
মনে নদী জন্মের কথা –
সাগরে হারানোর ভেজা অনুভব ।
স্রোতের সাথে চলতে চলতে
যখন স্রোতের উজানে দিলাম পাড়ি
তখনই বৃষ্টি এলো – দুচোখের
পাতা আনত ।
রাস্তা জুড়ে অসংখ্য গাড়ি
কোলাহল
জীবনপন আমি ছুটি –
জন্মজন্মান্তরের চিরায়ত রাধা!
এক শ্যামলা বৃষ্টি পুরুষের
সোঁদা গন্ধ
তড়িত করে , পাগল করে
মগ্ন উচ্ছ্বাসে ......