নিরঞ্জন
বালো ।
প্রতিপক্ষ
চাঁদ-কে
তো আমি কখনও দেখিনি
তবু সে আজ আমায় দেখছে...
আমার নগ্ন, ছিঁড়ে খাওয়া শরীরে জ্যোৎস্নার আলতো প্রলেপ দিচ্ছে ।
শুকতারা তো আমি নাম-ই
শুনিনি
তবু সে আজ আমায় ডাকছে...
আমার নিমীলিত চোখ-কে
নিরাপদ রাস্তা দেখাচ্ছে !
আমি শুধু আকাশ দেখেছিলাম
তাই বোধহয় আজ মেঘ করেছে...
আমি কুকুর চিনেছিলাম
তাই সশব্দে আমার দেহ পাহারা দিচ্ছে...
আমি কিছু মশা খুন করেছিলাম
তাই আজ মোক্ষম বদলা নিচ্ছে...
ও হ্যাঁ, কিছু পিঁপড়েও মেরেছিলাম
তাই তারাও দেহ দখল নিয়েছে...
না।আমি মানুষ চিনি না।
কোনও দিনই না।
আর বোধহয় চিনতেও চাই না ।।
#নিরঞ্জন বালো ।
নিরঞ্জন
বালো ।
প্রেমিক হতে
একটা দেড়শো পাতার চিঠি পাঠিয়েছি, পড়ে উত্তর দিস
সঙ্গে কিছু বনকুল পাঠিয়েছি, তোর ভালো লাগে,খেয়ে নিস।
এক গুচ্ছ কুন্দফুলও পাঠিয়েছি, তোর পছন্দ, খোঁপায় গুঁজিস
একটা আরশিও পাঠালাম, আড়চোখে একবার উঁকি দিস ।
শুনলাম তোর বিয়ের দেখাশোনা চলছে, তোর অমতেই,বল
রাগ করিস না,ঠাট্টা
করলাম,এসবে আমি দিই না আমল ।
আমি খুব ব্যস্ত, পড়াশুনার চাপ,দু'বেলা টিউশন করি
চাকরি একটা পেতেই হবে,বুঝলি,সরকারী অথবা বেসরকারী ।
অনেক টাকার প্রয়োজন, বাবার অপারেশন, বোনের বিয়ে
তারপর না হয় আমরা বিয়ে করবো,শিরিষগঞ্জের
মন্দিরে গিয়ে ।
আমার ভগ্নদশা,ভয়
নেই,ভালোবাসা আছে বহাল তবিয়তে
দেখিস,অন্ধকার
সমুদ্র পেরিয়ে ঠিক পৌঁছে যাবো একদিন,তোর প্রেমিক হতে ।।
নিরঞ্জন
বালো ।
বিদ্রোহী প্রেম
ভালোবাসা গভীর হলে,চুমুগুলো
অগোছালো
তুই যত দূরে যাস,আমি
তত এলোমেলো
চিরুনির গলা জড়িয়ে ধরে তোর
বিদ্রোহী চুল
একবার ছুঁয়ে দেখ, ভেঙে যাবে সব ভুল ।
প্রতিটি রাত যেন বছর,প্রতিটি
বছর বিদেশ
সিগারেটে সুখটান,একটু
করে ছাড়ছি দেশ
এখনও ঠোঁট কাঁপে, বোধহয় কিছু বলা বাকি
ভূমিকম্পের অপেক্ষায় রিখটার স্কেল
নিয়ে থাকি।
রোজ আমি আর টিকটিকি প্রেমিকার
অপেক্ষায় রাত জাগি
ফাঁকা রাস্তা,কুকুরেরা
করে এলাকা ভাগাভাগি
ছাতে কুমারী মেঘের আনাগোনা , বৃষ্টি ভেজে কলম-নিব
একটু বিদ্রোহী প্রেম চাই,ওৎ
পেতে আছে জিভ ।।
#নিরঞ্জন বালো ।
নিরঞ্জন
বালো ।
বৈশাখী আহ্বান
অতীতের ধূসর পাণ্ডুলিপিরা অসমাপ্ত
আরেকবার বিদায়ের পথে পুরাতন
পালাবদলের অভ্যেস করেছে রপ্ত
প্রাক্তন হওয়ার অপেক্ষায় আসন ।
কালের গর্ভে আরেকটি অধ্যায়
নিঃশব্দে ইতিহাস করে প্রত্যক্ষ
জানি, সবটা হয়নি ভালো ও ন্যায়
ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হোক সুদক্ষ ।
আরেকটু বুঝি বাড়লো বয়স
মনে নতুন কিছু করার চেষ্টা
ভুল হোক, সংশোধনে নেই দোষ
নতুন ভাবেই মেটাবো নবীনের তেষ্টা ।
আর নয় পাশ-কাটানো
প্রতিশ্রুতি
কথা নয়, কাজে হোক কিছু নব্য
অলস জাতি ফিরে পাক দ্রুতি
বর্তমান স্থির করুক আগামীর ভবিতব্য
।
ফেরিওয়ালা করুক আজ প্রভাত-ফেরি
রাশিফল নিয়ে হাজির পঞ্জিকা
বৈশাখী ভোর হতে আর নেই দেরি
নববর্ষের বার্তা নিয়ে প্রস্তুত স্বস্তিকা
।।
#নিরঞ্জন বালো ।
নিরঞ্জন
বালো ।
রোদচশমা
এই যে,
রোদচশমা,তোমায়
বলছি...
কেনো ঢাকো আগুন চাউনি
ভ্রু এর আড়ালে কালবৈশাখী
তুমি কি দেখতে পাওনি ?
এই যে,
রোদচশমা, তোমায় বলছি...
কেনো ঢাকো আঁখি-পাখি
একটু জিরিয়ে নাও
এখনো অনেক ইশারা বাকি ।
এই যে,
রোদচশমা, তোমায় বলছি...
কেনো আটকাও নজর-দস্যি
আলগা করো নজরদারি
আমার বুকে বিঁধুক অতিগোলাপি
রশ্মি।
এই যে,
রোদচশমা, হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি...
কেনো আড়াল করো কণীনিকা
তুমি কি বোঝোনা
ওই চুম্বন-চাউনি
আমার মনিকা ।।