সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১৬

দেবাশীষ মজুমদার


দুপুর তোমাকে
দেবাশীষ মজুমদার

দাঁড়িয়ে রয়েছি, দুপুর তোমার টই টই রোদ্দুরে, এতো আলোড়ন, এতো উত্তাপ! কাকে পোড়াতে চাইছো? আমার শহুরে চোখ, নুন জলে স্যাঁতস্যাঁতে হৃদয়, জানে, ছেড়ে দিলেই তুমি ফেটে পড়বে, আর ওরা হাততালি দেবে ঈশান নৈর্ঋত কাঁপিয়ে তাকে পোড়াতে গিয়ে হররোজ কি ভীষণ পুড়ছো তুমি! হাজার মুদ্রায়, অযুত দেয়ালে, নিযুত গালে, এ দৃশ্য দেখছে সবাই তবুও এড়াতে চায়

আমি জানি ঠিক কতটা দিন দুপুর তোমাকে ছুঁয়েছি কেননা কবি জানে, শুধু কবি জানে দুপুরকেও ভালবাসতে হয়




সায়াহ্নের গান
দেবাশীষ মজুমদার

এসো রাত্রি তাবৎ রক্ষণশীলতা ধুয়ে, বধিরের কাছে, এই জন্মান্ধের কাছে নিজেকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমাকে সম্পূর্ণ করে নাও, অন্তত একদিন তুমি সেইরকম তালে বাঁজাও আমায়, ঝাঁপতালেও বাঁজাতে পারো, আলো ছায়া আলো ছায়া উন্মাদের মত; উড়িয়ে নাও মেঘলোকে কিংবা জ্বেলে দাও আলো কোটি কোটি শীতল জোনাকীর শবদেহে, আমি আজ অশ্বমেধের ঘোড়াকে মুক্তি দেব

এসো স্পর্শ কর, ছিন্নপত্র নয়, ছেঁড়া পাতা, অত্যন্ত নীরবে




পঙ্খী
দেবাশীষ মজুমদার

সন্ধ্যা নেমেছে কিছুকাল, সমস্ত পাখিরা ফিরেছে নীড়ে। কোন ফুল ফুটেছে কোন বাগানে, নতুন ফল কোন গাছে, এখন জলের ক্ষরা নেইএই সমস্ত গল্পের ফাঁকে সূর্য সোনা গলিয়ে ডুবে যায় জলে। খানিক ভালবাসাবাসি এবং তর্কাতর্কি শেষে প্রায় সবগুলো পাখি ঘুমিয়ে পড়েছে। সুনসান।

আর শুধু একটা পাখি কেবল এপাশ-ওপাশ, মনের মতন ঘর মেলেনি তার।




অসম্পূর্ণ গ্রহণ এবং অতৃপ্তি
দেবাশীষ মজুমদার
বেদান্তবাদী সন্ন্যাসী হয়ে হিমালয়ে চলে যাওয়া যায়, সংসার বড্ড ক্ষুদ্র জায়গা। কি আছে বল এর - আনন্দ, বেদনা, প্রেম , প্রতিশোধ, ব্যর্থতা, রিরংসা, পাপ, সারল্য এ সমস্ত পরম্পরা, একের পর অন্য আসে, আমি স্রেফ দুচামচ নীরবতা চাই। এখানে কিছু নাই, যবনিকা উঠে আর নামে, স্বনামে-বেনামে, ঠিকানাবিহীন খামে। বয়স ঘন হয়। মায়ার ফ্রকের তাড়নায় স্মৃতির দুর্লভ মোহর আগলে বেঁচে থাকা। যাচ্ছেতাই।

প্রতিরাতে,
জ্ঞানের মন্দিরে প্রদীপ জ্বেলে বসে থাকে মধ্য রাতের পূজারী, খোঁজে উৎস ও পরিণাম। সে কবি, মানুষ ভাবলে বড্ড ভুল হয়ে যাবে।




সম্পর্ক, তুমি এসো
দেবাশীষ মজুমদার


পুড়ে গেলে প্রাচীন পুঁথি ও পান্থশালা কবিতার পাণ্ডুলিপি ধীরে ধীরে জেগে ওঠে, প্রায় সমস্ত অংকের সব কাটাকুটি উড়ে যায়, নিক্ষিপ্ত বিদ্রূপের দিকে, উল্লাস করে বলে, ওহে শোনো তোমরা শোনো, আজ আনন্দ দেখবার দিন, আজ আনন্দ গিলবার দিন, আজ আনন্দ শুনবার দিন। তোমার আঙুলের উষ্ণতা হাতে লেগে আছে বলে ছুটে এসেছি, বিগত রাত্রিগুলো কিছুই নয় জানো, দিনের কষ্ট ভুলবার দাদন প্রস্তাব। প্লীজ এসো।

বদলে গেলে সম্পর্কের রঙ, স্পর্শ সুখে বুক পুড়ে যাবে।




বিসর্জন
দেবাশীষ মজুমদার

শেষ মুহূর্তটুকু
ঘুরে ঘুরে পাড়ায় পাড়ায়, কখন যেন কপাটের আড়ালে এসে দাঁড়ায়, চূড়ান্ত প্রহরে যেদিন
উচ্চারিত হবার তাগিদে আর একটিও শব্দ বাকী থাকবেনা, কান্নার করুনতম ঢেউ গুণে গুণে
অহেতুক নৈশ বিলাস, ফুরবে; শুধু শূন্য ঘরে বেজে যাবে দক্ষিনাবর্ত শঙ্খের নিনাদ, বিসর্জনের সুর অনায়াসে বাজিয়ে যাবে উদ্দাম ঢাকির দল, জলের বুকে রেখে স্বাক্ষর চলে যেতে হবে।
শান্ত হবে কি তবু মন!
করবীর ডালে বসে যে পাখিটা গান গায়, তাকে থামিয়ে দিওনা, শঙ্খের মধ্যে সমুদ্র শোনা যায়, 
কান পেতে জেনে নিও আপাদমস্তক ডুবে গিয়েও -
কোথায় ভেসেছি আমি।

অস্থিরতার নাম দেশলাই কাঠি কাব্যগ্রন্থ থেকে