পৌনপুনিকতা
শীলা বিশ্বাস
আকাশ- বাতাস- নক্ষত্রকে এখনও ভাগ করতে পারিনি
পারলে কবেই বিভাজনরেখা টেনে দিয়ে
বোলতাম
এটা এলিট আকাশ, ওটা স্লাম আকাশ
এটা ধনী বাতাস, ওটা দরিদ্র বাতাস
এই সূর্যকিরণ মহাজনদের, ওই কিরণ কৃষকের
পঞ্চপাণ্ডব ভাগ করেছিল দ্রৌপদীকে
আমরা ভাই- বোনেরা মাকে ভাগ করেছি
জাতির মহান নায়করা দেশ
অর্থে ক্ষমতায় ভাষায়
আর ধর্মে
ভাগ হয় মানুষ সাদা কালো দুরঙে
ভাগাভাগি অঙ্ক কোনোদিন মেলেনি
একই
ঐতিহাসিক ভগ্নাবশেষ
পৌনপুনিকতা চলতে থাকে
যীশু বুদ্ধ চৈতন্যের পৃথিবীতে
কালভেদে প্রস্ফুটিত হয় ক্লেদজ কুসুম ।
-:-
একই প্রবাহে
শীলা বিশ্বাস
মা দুর্গার ভাসানের দিনে
নদীতে ভেসে যাচ্ছে মেয়েমানুষের লাশ
পাশটিতে আড়াল করে মা যেন নিয়ে যাচ্ছেন কৈলাসে
মাছ খুবলে খায় নগ্ন দেহ
কোথা থেকে পাখি এক বসে লাশের ভেলায়
ভেসে যায় জল মেয়েমানুষ মাছ পাখি আর
উমা
আমাদের লক্ষ্মী ভালবেসেছিল ওপাড়ার
কাশিমকে
লক্ষ্মী কাশিমের প্রনয়ের কথা ছড়িয়ে
যায়
গেল গেল রবে সালিশি সভায় নিদান হাঁকে
মোড়ল
একঘরে লক্ষ্মীরা
সে রাতে কারা যেন তুলে নিয়ে যায়
লক্ষ্মীকে ...।
পরদিন ভোরে লক্ষ্মীর নগ্ন দেহ চাষের
ক্ষেতে
চুপি চুপি মা বাবা ভাসিয়ে দেয় মেয়েকে নদীর জলে
কেউ জানল না
উমার সাথে কৈলাসে চলেছে আমাদের
লক্ষ্মী
একই প্রবাহে
-:-
দুঃখ কথা
শীলা বিশ্বাস
সব নুন শুষে নিয়ে ভিতর অববাহিকায়
গোপনে চোখের জলও বিশ্বাসঘাতক
শূন্য শূন্য শূন্যতায় হারিয়ে গেছে
সুখ পাখিটার সহজিয়া কত গান
পান্তা পড়ে আছে অনন্ত নুনের অপেক্ষায়
নিভন্ত উনুন আর কারো অপেক্ষা করে না
দুঃখ কথা উড়িয়ে দিই গাছের শরীরে
জবাবী খামে ফিরবে না আর তারা ।।
-:-
এ তোমার কেমন চাওয়া
শীলা বিশ্বাস
সর্বক্ষণ খোলা লেভেল ক্রসিং
মিথ্যে সিগনালে অবশ্যম্ভাবী দুর্ঘটনা
কিভাবে এড়িয়ে তুমি যাও?
নট-ফাউন্ড সিল মারা
পিওনের ফেরত চিঠিটা
অপরিবর্তিত ঠিকানায়
পোস্ট করে
কি সুখ তুমি পাও?
আলগোছে পড়ে থাকা শীতল সম্পর্ককে
শীতের উনানে সেঁকে ভাসিয়ে দিই
এই কি তুমি চাও?
-:-
অন্দরমহল
শীলা বিশ্বাস
তুমি এলে তাই
এক চিলতে ছুঁড়ে দেওয়া রোদ সূর্যের খবব আনে
সমুদ্রতলে
আনন্দধ্বনি শ্রুত হয় নদীর নিস্তরঙ্গ বুকের ভিতর
প্রবল ঝড়ে উড়ে যায় বিষাদ গাঁথা আঁচল, দীর্ঘ শ্বাস
অবসন্ন আবেশ অতিক্রম করে অনায়াসে
লক্ষনরেখা বৃত্ত
অলৌকিক উজানে ফিরে আসে ইপ্সিত ছায়া শরীর
তুমি হাসলে তাই
সূর্যাস্তের স্বর্ণ আভায় ছবি আঁকে
পাখিদের সমবেত উড়াল
নৃত্যরত পাহাড়ি ঝোরা কবিতা ছড়ায় অনুষ্টুপ ছন্দে
শানিত চাঁদ যাপনের ঘর খুজে পায় পার্থিব মায়ার শরীরে
সব কান্নাগুলো গীত হয় আনন্দ রাগে উদাত্ত কণ্ঠে
দুঃখরা মুখ লুকায় নিকষ কালো মেঘের ফাঁকে
তুমি ছুঁলে তাই,
দাবদাহে তৃষ্ণার্ত মাটি কেমন দ্রবীভূত
লাজুক বারিধারায়
বোধের ভিতর নুইয়ে থাকা অভিজ্ঞান কেমন উন্মুক্ত উদার আকাশের পায়ে
শরীর মানচিত্র থেকে মুছে দেয় সব ভৌগোলিক দ্রাঘিমা- অক্ষাংশ ফাঁক
ইমনের সুর তুলে জ্যোৎস্নার অনুরণন
অরণ্যের অন্দরমহলে
দেখো সোনালী শস্যের আলোয় ভরে গেছে নিষ্ফলা জমি ।।
-:-