শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

কাকলি দাশ ব্যানার্জী


কাকলি দাশ ব্যানার্জী

দ্বিতীয় নির্মাণে

আমার জন্ম দাতা তুমি নও,
তবু হলুদ বিকেল করেছো আমায়,

এই প্রথমবার আলোর দিকে মুখ তুলে ,
দিনলিপিতে রাখলাম কলমের লিঙ্গোচ্ছ্বাস ,
শ্বেতপর্ণার ডিম্বাশয়ে এখন আঁতুড় ঘরের গন্ধ

সংসারের কৃষ্ণগহ্বরের অধ্যায়ে
সাবানের ফেনায় যে রামধনু থাকতো
তার সাথে ভার্চুয়াল সম্পর্ক থাকাই ভালো জেনে-
সিদ্ধান্ত নিলাম, দহর হয়ে থাক  ডোমেস্টিক বায়োলজি ,

বজরা সাজিয়ে দ্বিতীয় নির্মাণে  চলছে আত্মার বিচ্ছুরণ ;
আমি এখন ট্রেক করতে ব্যস্ত ।







হাতছানি

ছোট্ট ছেলেটা রোজ ঠাকুমার কোলে বসে
বন্ধুত্ব পাতাতো দূর আকাশের চাঁদের সাথে ,
মেঘের গায়ে লেগে থাকা চাঁদকে দেখে হইচই করতো
তার  অন্তহীন দুধ স্নানের ইচ্ছে,

ঠাকুরদার জন্য ছিল একটা কাঙালপনাও
মান্যগণ্য লোকটার  মনের মধ্যে থাকা কাশবনে
সব সময় উৎসবের ঢাক বাজার গন্ধ -
ছেলেটার বুকে নিশ্চিত রোদ্দুর হবার ইচ্ছের বিশ্বাস
পুঁতে দিত,

উঠোনে বাউলদাদু এসে গান গাইলেই
ছেলেটা যেন "অমল" ,
তার স্বপ্ন বিভোর ডাগর চোখ নিয়ে
সে বর্ণময় পৃথিবীর প্রতিটি খিড়কিতে উঁকি দিত
ফুরফুরে হাওয়ার সাথে ,
ও তখন দইওয়ালা
নাকি বাউল ?

তুলির রঙে হেলান দিতেই সে - রাতচরা
অনায়াসে মেঘের গায়ে প্রজাপতির রঙ জুড়ে দেয়
তাকে আদ্যোপান্ত প্রেমিকা করবে বলে,

কিশোরী কবিতার ছন্দে
ঘুঙুরের সঙ্গম রেখে
ঋণের দম্ভে  ময়ূর হওয়ার ঘোরে
পাটিগণিতী হিসাবে বাবার জীবনের দিনসংখ্যা
কমিয়ে দিয়েছিল অপত্যের থেকে ।

দুর্দম অভিভাবক এই স্খলনের  অপরাধে
স্তবকের সব তন্ময়তা তছনছ করার জন্য
প্রয়োগ করলো অস্ত্র ,
আভিজাত্যের এমন শ্বাসকষ্ট দূর করতে
গলিপথই ধার্য তার জন্য,

গুমরে উঠলো কোণঠাসা ছেলেটা,
দুর্বিনীত তার্কিক  মেজাজ
আচমকা নগ্ন করে দিল তাদের 
রূপকথার বন্ধ দরজার ওপারের অভিসন্ধিকে ।

সন্তান কেরিয়ার গ্রাফে যদি অসংলগ্ন পদক্ষেপ রাখে ,
বাঁ হাতের খেলা দেখিয়ে
সে যদি সুবর্ণরেখা না হতে পারে ,
তবে সুনিশ্চিত কল্যাণের স্বরলিপিকে
গেস্ট রুমে বসিয়ে রাখতে হবে চিরতরে ।

আজ কর্পোরেট বলয়ের উদ্ধত মেহগনির
ব্যালকনির সব গাছে জাহান্নামের সংসার ,
ছেলেটা নিজের নাম দিয়েছে ক্রীতদাস ,
নেশার ঘূর্ণিঝড়ে হিজিবিজি কাটে ও
সাদা পাতার দেহে -
নাম দেয় জীবন ।

ওর বুকের ভিতর নরম রোদের শব ,
বাদাম খোসার মত টাকা ছুঁড়ে দেয় জন্মদাত্রীকে,
চূড়ান্ত আর্তনাদ করে জন্মদাতার কাছে
চন্দনকাঠ ভিক্ষা চায় রোজ ।

বহমান জীবনের যে কোন স্টেশনে নেমে
খোঁজ নেয় রিটার্ন টিকিট পাবে কি না ?

কাল ওকে আমি  "রূপসী বাংলা" দিয়েছি
অনেকদিন বাদে ও হাতছানি দিল --
বলল , ওকে ডাকছে বাস্তুভিটেটা।







নিঃস্বার্থ স্বার্থ

নিঃস্বার্থ কথাটা এখন শুধুই আভিধানিক ,

ওটার ভান করেই সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়া যায়
শোবার ঘরের অ্যাটাচ ব্যালকনিতে ,

এভাবেই চারিদিকে পার্থেনিয়ামের ঝাড় বেড়ে উঠেছে -
ছড়াচ্ছে অসুস্থ উল্লাস ,

ন্যায়এর শরীর থেকে ঘাম জল 
বেরোতে বেরোতে শেষে
বেরিয়ে এসেছে নগ্ন পরাজয়ের কাঠামো,

স্পর্ধিত কপটতা মোচ্ছবের পোষাক পরে 
সস্তা স্বরলিপি হতে পারলেই কেল্লা ফতে।

মায়াবী হরফে ন্যাকা কান্নার
নোনা জল ভরে দিলেই
আলো পাবে বিবর্তন ।

তারপর প্রেসার কুকারে সিটি পড়বে ,

পেকে ওঠা বিষ ফোঁড়ার থেকে গড়িয়ে আসবে
সর্পিল স্বপ্নের গায়ের পুঁজরক্ত ।

আর একটা নিঃস্বার্থ হাত সন্তর্পণে ঘায়ে মলম লাগাবে
নিজের আঁচল দিয়ে ঢেকে দেবে গৃহদাহের ছাই,

তারও স্বার্থ আছে
টিঁকিয়ে রাখতে চায় মরুদ্যানের ভ্রম
আর এ সাতজন্মের বন্ধন ।