শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

হাসিদা মুন



হাসিদা মুন

ফেরানো যাবেনা

বারবার ফিরে যাই
নাকি ফিরে আসি
জানিনা
ফিরে যাই তোমার বাসগৃহে
নাকি ফিরে আসি চিরচেনা তোমাতেই আমি
কিছুটাক্ষণ তোমার থেকেই তুমিকে জিতে নেবো বলে
সকালের সিঁথি বেয়ে দ্রুত সময়ের চিবুক ছুঁয়ে প্রহর গড়ায়
অতলান্ত তলানো বুকভরা অর্ঘ নিয়ে
জানাজানির আঙিনা ডিঙ্গিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি
এই মাটি এই এঠেল বাঁধন ধরে থাকে
সব জল ধুয়ে দিয়ে যায় দীঘল ক্ষুধার্ত সৈকত
প্রাচীন স্পর্শ গড়িয়ে নোঙর ফেলে প্লাবনের টানে

ফিরে যাই বারবার
নাকি ফিরে আসি
জানিনা
ফিরে যাই আমার বাসগৃহে
নাকি ফিরে আসি চিরচেনা আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে
মেঘেদের ডানপাশের ছায়ার ঝিমায় নগরী
জানালায় সবাক ছবি উঁকি দ্যায়
চোখ মেলে চেয়ে থাকে মায়াময় মুখ
চোখের পলকে পলকে কথা ঝরে পড়ে
যে চোখ বহুকাল রাতজাগা সকাল দেখে
দেখে সাতরঙা প্রিজমের রশ্মির ছটা
সপ্ত আসমান ভরা তারাদের গতি
দুপুরে ঘুঘুর বিলাপ
স্রোতের উজানে ভরা কাটালের উজান মধুমতী

ফিরে যাই বারবার
নাকি ফিরে আসি
জানিনা
ফিরে যাই আমাদের বাসগৃহে
নাকি ফিরে আসি চিরচেনা সেই অচেনার খোঁজে
এসো আমার আত্মায় ছাপিয়ে দাও শতরং রামধনু
তুমি দিয়ে দেহে দেহাতীত আয়াত খোঁদাই করে দাও
আমাতে ঝিলমিলিয়ে ডুবে গেলে
আমি নেই হয়ে যাই
তুমি অনন্তের পথে থেকে যাও
সেখানের ফলকে একথা লিখে টাঙিয়ে দাও
আমি তুমি জীবনদণ্ডে গেঁথে একাকার হয়ে গেলে
দু'য়েই আমরা অনন্ত 'এক' হয়ে উঠি

ফিরে যাই বারবার
নাকি ফিরে আসি
এতোশত জানিনা
ফিরে যাই বারবার তোমাদের বাসগৃহে
নাকি ফিরে আসি অচেনা আমাদের আমি
পৃথিবীর বিন্দুকে কেন্দ্র করে
সূর্য চাঁদের কৌণিক দূরত্ব যখন
সব ঠেলে দিয়ে এক সমকোণে
প্রশমিত উচ্ছ্বাসে মরা কাটালের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়
তখন তোমার বুকের বাম পাশ ঘেঁষে
ফিরে গিয়ে দাঁড়াই
নাকি ফিরে আর আসিনা
এতো তো জানিনা
তবে এ নিশ্চিত জানি
এখান থেকে আমাকে আর কখনো -
ফেরানো যাবেনা .....








বারবার প্রেমে পড়ে যাই

এখন তখন এসব কোন কথা নয়
প্রায় ই এই প্রায়শ আমি নতুন কিছু প্রেমে পড়ে যাই
যত বেশি প্রেমে পড়ি
ততোই বেশি ভালোবাসি
ইতিমধ্যে যা ভালোবেসেছি
মনেহয় তাকেই জোরদার করার সময়
পাপড়ি বাঁকানো গোলাপকে কাঁটা ডিঙিয়ে আনতে চাই
জবা, নয়নতারা ,বাগান বিলাসের প্রেমে ডুবে যাই
ক্রোধে মুঠো আকাশে তাক করা
ব্যথা, অত্যাচার , দুর্দশাসহ কোন অনাচার
যে পথের সামনে দেখি সেখানেই আগলে দাঁড়াই
কুরুচিপূর্ণ, নোংরা, মুখোশের অনৈতিক কাজ রুখে দ্যায়
এমন কারোর প্রেমে পড়ে থাকি
ভালবাসা বজায় রাখার সময় পুনরাবৃত্তি আওড়াই
প্রতিটি শব্দের অস্তিত্বকে ভালবাসি
আমি শত্রুর প্রেমে পড়েছি
খুনি কিংবা কোন দারোগা বাবু , সাধু, খলনায়ক
আমি সাদা কালো , রঙ্গিন ছবির প্রেমে পড়ি
শেখার জন্য জীবনের অন্যতম কঠিন পাঠ শিখতে
বিদ্বেষীদেরকে দুর্দান্ত উদ্দীপক বলে মনে করি
নিন্দুকরা আমার চরম প্রেমিক
ছায়ার মতো ক্যামন পিছনে হেঁটে বেড়ায়
যে রাখাল পাহাড় হেলান দিয়ে
অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করে তোলার চেষ্টা করেছিল
সেই মেষপালকের রওজা ভালোবাসি
সামুদ্রিক জলের মিষ্টি লোনা গন্ধ জলজের আবে হায়াত
গলুইয়ে দাঁড়িয়ে বাইচের খোয়াজ খিজির
মৃত শঙ্খের ফুঁৎকার দুইপাটি শুভ্র ঝিনুকের কঙ্কাল
ধারালো পাথরের উপকুলের উভচর তাকেও ভালোবাসি
পদ্মা যমুনা মেঘনা ধলেশ্বরীর শরীরে নেমে পড়ি
জল ছলছল প্রেম মেখে নিই যুগল সাঁতারে
আহ , নদী সেও আস্টেপিস্টে জাপটে ধরে
প্রেম সেতো প্রেমই গড়ে

আমি নতুন কিছু প্রেমে পড়ি,
শিশু যুবা বৃদ্ধ তরুণী বয়স্ক হোক কিংবা নারী
যারা আন্তরিক কথাবার্তা বলে হেসে হেসে
ভালোবেসে তাদের সোনা' বলে ডাকি
হিংসুটে আত্মীয় আড়ালে আমাকে শতখন্ডে নিকুচি করে
বাস্তবে অত্যন্ত চমত্কার হাবভাব যেনো সিঁধেল চোর
সিঁধ কেটে আমার ঘরেই জোছনা দিয়ে যায়
বলো , ভালো না বেসে কি পারা যায় ?

ফাটলযুক্ত মাটি , সকালে ফোটা বিলের শাপলা
অ্যান্টিক আসবাব , অসাড় গৃহকোণ
আঁতুড় ঘর , বেশ্যালয়ে দাঁড়ানো রমনীর আলতা মাখা পা' ,
দেবীর থান , বিশ্বাসের ঘোর লাগা বিপথগামী নাস্তিক
কাউকেই ফেলে যেতে পারিনা
সূর্যালোক মেঘ ভাঙ্গা জবজবে বৃষ্টি
নতুন কিছু নিয়ে প্রেমে পড়তে যারা অনুগত সহচর
ভালো , আমি তাদের খুব ভালবাসি
দ্রুত দৌড়ে রাস্তা কাটা কালো বিড়াল
গলির মোড়ে কুণ্ডলিত পুরনো ঘেয়ো কুকুর
বছরের পর বছর ধরে জটাবাধা চুল,
পাগলের কাটা দাগ ভরা মুখ সময়ে গড়ে ওঠা বলীরেখা ,
আঁচিল সেসব এড়াতে পারিনা
অসম্ভব অসম্মতি অসঙ্গতি নেই তো প্রেমে
কারও জন্য তার কিছুই আসে যায় না
শুধু আমিই বারবার প্রেমে পড়ে যাই ...








ক্যানভাস

সারথি - অনেক হয়েছে জিরনো,
এই বেলা ওঠো
চলো , যাত্রায় ফের নিমগ্ন হই
শকট আর সওয়ারী যখন নিজেই নিজের,
নিরূত্তর হয়ে থাকিইনা কিছুটাক্ষণ নিজের নিজেতে...

এতো নির্বাক হয়ে কি দেখছো ?
গৃহস্থালি ধোঁয়াগুলো ক্যামন পরমাত্মীয়ের মতো
আঙিনায় নিকানো উঠোনের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়
এলোমেলো হয়ে মৃদু বায়' মৃদু পা'
এই ধুঁয়ার সাথে বিশেষ একটা
অদ্ভুত চেনা অচেনা গন্ধ ভেসে বেড়ায় ...
ওরা বেশ দলবেঁধে থাকে
তবে এ ব্যাপারে আমি স্থির যে
ধুঁয়ারা উড়ন্ত উঁচুতে উঠে
কখোনোই উড়ানছুট' হয়না ওদের কেউ সহসা...

এই একটু আগেই ধোঁয়াদের যে জটলাটা দেখেছি
ছাতিম গাছের ছায়ায় বসেছিলো
আকাশপানে উন্মুখ হয়ে চেয়ে ...
এ মুহূর্তে হাঁসচরা পুকুরের ওপাশটায়
নারকেল পাতায় লুকোচুরি খেলে
হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে চলে যাচ্ছে
সন্ধ্যের ওই অস্পষ্ট দিকটায় ...

ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখলে বুঝে ফেলা যায়
ওখানেই আছে জ্বলন্ত আগুনের অধিবাস
সব কিছুতেই সব কিছুর যেমন স্বরূপ থেকে যায়
বৈশিষ্ট্যাবলী অজ্ঞান থেকে উপগম্য হয়
কিংবা বোধে আসে পর্যায়ক্রমে
তারপর স্পৃশ্য হতে হতে কাছে এসে এসে
ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় ...
.
বেশ , বলোতো সব বস্তুরই কি সাথে
প্রপঞ্চ গুণ থেকে থাকে ?
তাই কি হয় ?!
অনেক কিছুই গোপনে কথা কয়
বাস্তবেরও কিছু বাস্তব গুণ- রহিত থেকে যায় বাস্তবেই...
থামো , মাথার ভিতরে দু'টো লাইন অবতীর্ণ হলো
অক্ষরের জালে ওদের বেঁধে নিই -

গৃহস্থালি ধোঁয়ার পিছনে
আগুনের স্বরূপ লুকানো অধিবাস
চিত্রশিল্পী আঁকে নতুন ছায়াতে বসে
নতুন রঙের ক্যানভাস .........