শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

শাকিলা তুবা


শাকিলা তুবা

প্রাণকাকলী

এভাবেই শরীর থেকে খসে পড়ল একটা একটা করে তাজা পালক!

দেখছিলাম পালকহীন গোল কুন্ডলী কিংবা বলা চলে বে-আব্রু একটা শরীর আর বাড়তি ক্রোমোজম থেকে পাওয়া বিশ্লিষ্ট কিছু অনুভুতি। যার নামকরণ আগেই হয়েছিল, যার আকার দেখে বলা যায় এটাই সেই ডাউন সিন্ড্রোম। বিভ্রান্তিকর বর্ণগুলো ছিল ঠোঁটের নিখুঁত ছবি। অলক্ষ্যে কেবল বললাম, চিনেছি তোমাকে। অথচ ছবিটা কাঁপতে কাঁপতে ভেঙে গেল, গুঁড়িয়ে গেল আর আমি অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী কুঁড়িটির পরিপূর্ণ পরিস্ফুটন দেখব বলে।

পালকগুলো হয়তো আবারো সন্নিবেশিত হবে। আমরা বরং আমাদের অটিস্টিক ভাবনাগুলোর দিকে তাকাই, একটি অতিরিক্ত ক্রোমজম যেগুলোকে প্রতিনিয়ত খুন করছে।

সূর্য ডুবে গেল ইত্যবসরে আর আমরা স্তবগান গাইতে গাইতে বাসার পথ ধরলাম। বাজী রেখে বলতে পারি, নিহত ভাবনাগুলো আর অনুশোচনায় বিদ্ধ করবার মত প্রসারিত হতে পারবেনা।






কথায় কথায় চারকথা

কোথাও নেই, কোনোদিন ছিলও না কেউ
চারিদিকে ধু ধু তেপান্তর
যারা কথা দিয়ে পালায়
যারা ভুল বুঝে চলে যায়
যারা পশ্চিমে দক্ষিণ বাহু মেলে ধরে
তারা সরে গেলেই লাফিয়ে উঠি
মনে হয় কেউ নেই কোথাও,
ছিল না কোনোদিন।

যেসব হরিণীরা সুখ কেড়ে নেয়
তাদের বলতে ইচ্ছে করে
একদিন তোমারো মনে হবে,
কেউ নেই; ছিল না কোথাও।

চলা শুরু হলে আমি আকাশ দেখি
সমান্তরালভাবে দেখি নীচের পলিমাটি
যদিও দু’টোর মানেই শূন্যতা
তবু কেন ঠকাবার জন্যে
বারবার তুমি আমাকেই বেছে নাও?

এসো তোমাকে কবিতা শেখাই---

যখন তুমি মধুর রসে ভিজিয়ে দাও মন
উপর থেকে নীচ পর্যন্ত মেখে নেই সুখ
এভাবে একটার পর একটা সুখস্মৃতি
বিরহ তাপে কমে বা বাড়ে ছন্দের গতি
অক্ষরবৃত্তে মেপে মেপে ভালবাসা
আবার মাত্রার বৃত্ত ঘিরে উত্তাপের হেরফের।

প্রেমে প্রেম মিলিয়ে লিখতে চাইলাম পদ্য
তুমি ভালবাসা শেখো কিংবা কবিতা---

আসো বেলেল্লাপনা করি
আসো বিলেতি মদ খাই
আমার কটিতে তোমার
তোমার পিঠে আমার হাত রাখি
আসো সিগারেটের ধোঁয়া ছুঁড়ে দেই
আসো রাত চাদরে এলোমেলো ভাঁজ ফেলি
এর বেশি মন্দ হতে জানিনা-----






ঝগড়া

তর্ক করবি আয়
আয় ঝগড়া করি মন ভরে
তোর নাক আমি ভাঙ্গি, আমারটা তুই
তুই যাবি উত্তরে, আমি পশ্চিমে
আমার নাটাই, তোর ঘুড্ডি
তোর নাড়া, আমার লাট্টু---

আইসক্রিম ভেঙ্গে আয় আধখানা দিই
খেলে খা, না খেলে যা ভাগ
সাত চারার ঘর ভেঙ্গে চল আপোষ করি
ঝড় যদি ওঠে সামলাবি তুই
আমার গরজ কিসের?
বেহায়া হলে তুই হ, আমি কেন!

কথা বলব না- বলেছি, আড়ি
তুই কেন নাছোড়বান্দা, করছিস বাড়াবাড়ি
কোন একদিন আবার খেলব কাটাকুটি
তর্কের লাল দাগ হয়ে যাব পার
এখন তবে আর কাঁদছিস কেন?
ধ্যাৎ ঝগড়াটাই যে ভিজে হলো সার।






সেইলফিন

আমার বিশ্বাস হয়না এতটা ভুল কেউ হতে পারে
হাতের ভেতর গোটা নদী পুরে দিলেও
কেউ ছুঁড়ে ফেলতে পারে এত এত মাছ।

আমি তার নীতির কিনারে গিয়ে দাঁড়াই
রেলিং ধরে উবু হয়ে মুখে রক্ত তুলি আর
লেখা হয়ে যেতে থাকি কারো দীনতার দলিলে।

এই যে ফুটে ওঠা শৃঙ্খলিত একমুঠো হাত
যাকে বাঘের থাবা ভেবে একদা আমিও ঘুমিয়েছিলাম
এখন কিনা দাঁড়িয়ে আছি কানকো বাঁধা তার দড়ির এককোণে।

হয়তো আমিও জাতিতে মাছ অথচ রেলিং ছেড়ে
উড়ে যাচ্ছি ঠিক যেন পাখি,
অবিশ্বাসী আমিও উড়তে পারছি সেই একই মাত্রায়!

সরভরা মেঘের বিচরন পথে
ক্রমাগত ছুঁড়ে দিতে পারছি নবীন সব পাখি অলক্ষ্যের মতন
আর দলিল লেখকের জাল ভরে উঠছে একঝাঁক লজ্জা।