শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

রমা সিমলাই


রমা সিমলাই

সত্যিই কি দেরী করে ফেললাম.......

কতগুলো মুহূর্ত পেরিয়ে গেলে নির্বাক দেরী হয়ে যায়!

গান্ধর্ব সভ্যতায় মিশে যায় মহেঞ্জোদরোর নুন,
হরোপ্পার আধখাওয়া শরীর!

ছায়াপথ জুড়ে অপেক্ষায় থাকা উদাসীন বশিষ্ঠ –
ঘরণী  স্তবের মালা সরিয়ে রেখে হেঁটে যান
আরো কোনো ঘন সপ্তর্ষির দিব্যলোকে! - ঈশ্বরীর
অসমাপ্ত মুদ্রাভঙ্গে অযাচিত রামায়ণ!

যতটুকু দেরী হলে, ঋষি পরাশর  মৎসগন্ধার
শরীরময় মৃদু সৌরভে পদ্মগন্ধ রেখে, কুরুক্ষেত্রের
বীজ বপন করে - মহাভারত আলোকিত রাগে ও
জ্যোৎস্নায়!

শরীরের পাণ্ডুলিপি জানে, সব দেরী দেরী নয়!

অশ্রুমতী জন্মদাগ জানে সময় আদতেই এক
প্রবালপ্রাচীর। ছুঁয়ে থাকে স্থির প্রত্যয়ে সাবেকী সন্ন্যাস...

তবু
    তোমাদের
             সারাদিন
                 এই আশ্চর্য তাড়াহুড়ো দেখে মনে হয়

সত্যিই কি দেরী করে ফেললাম.......







কবিকে ঘুমোতে দাও

কবিকে ঘুমাতে দাও
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে এসে
কবির এবার একটুকরো একনিষ্ঠ ঘুম দরকার।
কবি কে ঘুমোতে দাও!
ততক্ষণে স্বাবলম্বী অক্ষরদের শরীর থেকে
গড়িয়ে নামুক সাবলীল গ্রাম্য কুমারী নদীটি,
শান্তনুর ব্যাভিচারী স্পর্শ বাঁচানো অপরূপ ছলাৎ ছল,
জমিদার বাড়ির বনেদী পাড় বাঁধানো সিঁড়ি - বিস্তার।
চাল ধোওয়া নববধুর রোগা ফর্সা হাতের
শাঁখা - চুড়ি - কাকনের  ঝুমঝুমঝুম।
চাল ধোয়া  হাতের কথায় অব্যর্থ মনে পড়ে গেল
আশাপূর্ণা দেবীর কথা! ভাগ্যিস,
কোনো যুদ্ধক্ষেত্র ছিল না সেখানে।
অক্ষরেরা কবির আঙুলের সোহাগ ছুঁয়ে
একটু নির্জন নিরাপত্তা চেয়েছে সারাদিন সারারাত।
কোলাহল থেকে সচেতন দুরে
কী ভীষণ অভিমানী যাপন মাখিয়ে,
সাদাহাঁস ডানায় রোদ্দুর নিয়ে
অব্যর্থ রূপকথার দিকে উড়ে গ্যাছে,
থাক, থাক, দুঃস্বপ্ন দিও না কবি কে।
নিবিড় কোমল নিপুণ প্রশ্রয় দিয়ে ঘুম দাও।
কবি তুমি আশ্চর্য পেলব ঘুমে শুদ্ধ হও।
অভিমানী সাদা হাঁস ফিরে এসে,
ছায়াপথ জুড়ে ঋষিকন্যাদের অমায়িক ঘর
কন্যার গল্প শোনালে,
ঘুম ভেঙ্গে জুঁই আর অতসী ফুলের গন্ধ মেখে,
কবি তুমি জাতিস্মর  দিগন্ত পুরুষ
বুঝে নাও, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাকে মানায় না।
কখনো মানায় না!!







শেষ উৎসব

অসুস্থ অবকাশে গৃহস্থ কিছু বিষাদ
আপনাআপনি জড়ো হয়,
নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে জমা হওয়া কোলাহল
শান্ত হ'তে শেখেনি বলেই
শিরা আর ধমনীতে নিত্য বিবাদ।

অস্থির লাগে

সব কিছু ভুলে,  স্মৃতির অন্ধকার শ্যাওলা-
চিলেকোঠায় তালাবন্ধ ঘরে, এই মুহূর্তে
একটু উঠে দাঁড়াতে চাইছি ।
                                            দু'হাত তুলে
আকাশের দিকে তাকিয়ে
                                  বলতে ইচ্ছে করছে,
" হে অনন্ত !
একবার , অন্তত আরো একবার আমাকে
ভরিয়ে দাও তোমার আলোয় !
বাকী থেকে যাওয়া সমস্তটুকু বাতাসকে
 আরো একবার জড়িয়ে নিতে দাও
                       আটপৌরে শাড়ির মতো !

ফ্যাকাশে শরীরটায়
                    উড়ো খই,
                                    সাদা চাদর
আয়োজনে আরো কিছু দেরী হোক!

আগুনের আগে আর একটিবার
                প্রেমিককে জড়িয়ে ধরি
                                              তীব্র আশ্লেষে!!