মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯

ঊষসী ভট্টাচার্য


ঊষসী ভট্টাচার্য

না বলা বাণী


- হ্যাঁ বলছি
- কচুপোড়া বলছেন।  ঘোড়ার ডিম বলছেন। মাথা আর মুন্ডু বলছেন। যা বলার তা আর বলছেন কোথায়?
- হাহাহাহাহা। শনিবারে শনি চরমে মনে হচ্ছে
- শনি আপনার চরমে। শনির কোপ দেখেছেন? আচ্ছা আমি কি ব্যবিলন?
- নাহ। তুমি শান্তিনিকেতনের ছাতিম তলা।
- সেই। আতা গাছে তোতা পাখি। ছাতিম তলায় ফুল। এত ডাকি তবু আমায় করলেনা কবুল।
- এক মাত্রা বেশি হল
- বিষয় টা মাত্রাছাড়া হল।  এতদিন ফোন ধরেননি কেন? কতগুলো টেক্সট নটরিপ্লাইড জানেন। হোয়াটসএপে অন হচ্ছেন, মেসেজ সিন করছেন,  তবু নিরুত্তাপ?
- উত্তাপ খুব বেশি। জ্বর হয়েছে ।
- কদিন হল?
- দীর্ঘদিন। কোনো প্যারাসিটামলে কাজ দিচ্ছে না।
- ওষুধের আর দোষ কি!  বলছি ডাক্তার দেখিয়েছেন। 
- কি হবে।  তার চেয়ে অলস শুয়ে থাকা ভালই লাগে।
- আপনি একটা উন্মাদ। শুনুন সামনের রবিবার। কোথায় থাকবেন? জ্বর যখন বাড়িতেই নিশ্চই। আমি চলে যাব।
- জলপট্টি দিতে।
- নাহ। পাচন খাওয়াতে।
- তুমি পলাশ দেখেছ? গোছাগোছা পলাশ ?
- দেখেছি।  পরেওছি। মা দুটো পলাশ ফুলের মালা এনেছিল পুরুলিয়া থেকে। তারপর ওগুলো বিছানায় ছড়িয়ে রেখেছিলাম।
- তোমায় চাঁপা ফুলে খুব মানাবে
- আপনাকে হাত ভরে অপরাজিতা দেব।
- অপরাজিতা কেন?
- নীল। বিষ। ধুতরো শুনলেন কেমন যেন ধুত্তোর মনে হয়। তাই বিকল্প ব্যবস্থা
- তুমি বিকল্পে বিশ্বাস কর?
- অকল্পনীয় দূরত্বের থেকে বিকল্পও ঢের ভালো
- জানো ইজিপ্টে একধরণের রঙ্গিন প্রজাপতি দেখা যায়।  খুব উজ্জ্বল। খুব চনমনে। একটি একবার আমার হাতের ওপর বসেছিল
- পুরীর সমুদ্রের ধারে নিটোল একটা সাদা খয়েরী মেশানো ঝিনুক পেয়েছিলাম। আপনার নাম লিখব ভেবেও লিখিনি। রাখাই আছে
-লিখো না।
-  বরং আপনাকে একটা ঝিনুক মালা বানিয়ে দেব।দু হাত ভরে উঠবে দুধ ফেনায়। আহা কী যে মানাবে
- অস্ট্রিয়ায় প্রতি শনিবার সাউন্ড অফ মিউজিকের গানে আজও নাচ হয়। মারিয়া, মেক মি লাফ।
- ডো রে মি ফা সো লা টি মো
- ব্যবিলন হও অথবা মরুদ্যান।   মারিয়া মানে পাগলামো
- শুনুন। এখন সূর্য ডুবে গেছে?
- না।
- একটা ছবি পাঠাবেন
- না। চোখ বোঝো।ছবি একে দিচ্ছি
- বেশ বুজলাম।
- স্থির জলে লাল আভা পড়েছে।  দূরে একটা নৌকো ভেসে যাচ্ছে। তিনটে ছেলে বারবার জলে ঝাপ মারছে। আবার ডাঙ্গায় উঠছে। আস্তে আস্তে ডুবন্ত রেখায় নেমে আসছে। একদম জলের কাছাকাছি
- আর না। অন্ধকার আমার ভাল লাগে না।লাল আভা টুকুই থাক।
- ধুর। পাগলি। অন্ধকার বলে কিছু হয় নাকি  ? যেমন কেউ নিরুত্তর হতেই পারে না। প্রতিটি স্তব্ধতারও প্রবল শব্দ থাকে
- সে কথা শুনিবে না কেহ আর ...
হ্যালো হ্যালো। কই গেলেন। শুনতে পাচ্ছেন।হ্যালো
- The number you are trying to reach this is not in coverage area .









-  হ্যাঁ কী?
- জ্বর কেমন আছে?  ডাক্তার দেখিয়েছেন?
- আমি এমন হঠাৎ হঠাৎ ডাক্তার দেখাই না।এটা আমার ধরণ না। এখন রাখি।ব্যস্ত আছি
- ব্যস্ত তো আপনি সারাক্ষণ। তাতে রাখবার কী আছে?
- উফ তুমি এতো কথা বল কেন?
- আচ্ছা আপনাকে কী রবীন্দ্রনাথ চিনত?
- মানে?
- চিনত।চিনত। নিশ্চই চিনত। আপনিই তো সেই রাজা ।আচ্ছা শম্ভু মিত্র চিনত না , না আপনাকে? আচ্ছা কত সালে যেন জন্ম আপনার?
- উফ।জানিনা।তুমি রাখবে।এত বাজে বক কেন?
- হাজার টা বাজে বকায় ভরে ওঠে সরণী,
  যাকে তুমি বাতিল ভেবে ফেলে দিয়ে দিয়েছ
সেই সুগন্ধে ভরে ওঠে রাস্তা, 
আমাদের আর কোনো বসতি নেই, রোদ নেই।
শুধুই বলছি রাজা দরজা খোলো।
- রঞ্জনের খোঁজে যাও। বুড়ো রাজা কী দেবে তোমায়
- রাজা, তোমাকে আমার ভয় করে না। একবার এস ।দেখো রঞ্জন আসছে। ওই তো আমার পাশে পাশেই রঞ্জন আসছে
- আজ আর জ্বর নেই। তবে খাবারে তেমন রুচি নেই। ডাক্তার দেখাতে আমার ভাললাগেনা। প্যারাসিটামল খেয়ে নিয়েছি। তোমার গলা শুনে মনে হচ্ছে ঠান্ডা লাগিয়েছ?
- হ্যাঁ। কাল সারারাত বরফ জড়িয়ে শুয়েছিলাম।তারপর মধ্যরাতে দেখি। বরফ গুলো টুকরো হয়ে হয়ে ফুল হয়ে জল হয়ে আকাশে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। ঘরের ছাদ ফুটো করে বরফ কনা মিশে যাচ্ছে। কী অদ্ভুত সেই মিলন।
- দিন সাতেক কথা হবে না। ফোন ধরব না।খুব দরকার পড়লে টেক্সট করে রেখ।
- সাত দিন ধরে গঙ্গায় সূর্য ডুববে তবে কোনো ছেলে জলে ঝাপ মারবে না, সাতদিন আপনার হেলান চেয়ার রিংটোন শুনে বিরক্ত হবে না।সাতদিন সাতরাত আপনার বিছানার চাদর এলোমেলো থাকবে। সাতদিন আপনার বাড়ির সামনে বকুল গাছের নীচে গিয়ে কেউ দাঁড়াবে না।সাতদিন ...
- সাতদিন আমি শান্তিনিকেতনে সেমিনারে থাকব । কলকাতায় না।আর একাই যাচ্ছি একাই ফিরব
- ও সাতদিন তাহলে সাতটা বীজের মালা নেবেন।সাতদিন তাহলে রোজ ছাতিম তলায় বসে সাতটা কবিতা। সাতদিনে দু দিন অন্তত সোনাঝুরি। সাতদিনে সাতটা বনফুল। সাত দিনে সাতবার খোয়াই।
আচ্ছা সাতদিনে এক ইন্টু সাত মানে সাত মিনিটের ফোন এলে ক্ষতি কি?
- সাত মিনিট টেনে টেনে সাত সমুদ্র হবে তো। সোনাঝুরিতে অত গাছ নেই তোমার ঝুলিতে যত কথা আছে । আচ্ছা এত কথা বল কেন?
- sound of silenc শুনেছেন?
- গান তো। হ্যাঁ। বহুবার।
- ওই গানের লিরিক্স গুলো মনে আছে?
- আছে।
- দেখেছেন।গানটার নাম।sound of silence ... অথচ গানের কথাগুলো মনে রেখেছেন।  কী কনট্রাডিকশন
- উফ।তুমি থামলে।
- থামছি। বলছি কি। একপাতা প্যারাসিটামল। একটা কাফ সিরাপ। একটা হালকা চাদর। আর অবশ্যই ওই কমলা শার্ট নিয়ে নেবেন। ও আর
-  আবার কী?
- একটা গোটা পটল নিয়ে যাবেন।
- মানে? কেন?
-  আমায় মিস করলে সবার সামনে আমার ছবি তো দেখতে পারবেন না।পটল দু ভাগ করে দেখবে। পটল চেরা চোখ। মানেই ওই আমিই আর কি।
- উফফফ।
- হাহাহাহহাহাহা।।। একশো দিগন্ত বাতাসী চুম্বন উড়িয়ে দিলাম।









- হ্যাঁ বল
- ব্যস্ত?
- নাহ। কী হয়েছে কন্ঠের রূপনারাণ গেল কোথায়?
- শিবতরাই এ নিয়ে যাবেন আমায়?
- মুক্তধারার খোঁজ পাওনি এখনো ?
- কই। আপনি যে বলেছিলেন আমাকে বিশল্যকরণী এনে দেবেন।
-সব্বনাশ।  আমাকে শেষে রামভক্ত বানালে বন্যা?
- বন্যা? আমি শোভনলাল চাই না ।
- তুমি বীজের মালা পরবে?
- বোলপুরের?
- হ্যাঁ। তোমায় মানাবে। আর একগুচ্ছ বনফুল এনে দেব।
- সেমিনারটা কবে?
- এই তো সামনের সপ্তাহে। শোনো।
- কী?
- বাবার বুকের ব্যথা বেড়েছে?
- হু।
- আচ্ছা তুমি শ্বেতপাহাড় দেখেছ?
- সেটা আবার কী? শ্বেত পাথর দেখেছি।
- না না।  পাহাড়। ওই যে ঝিনুক কুড়িয়েছ বলছিলে না? পাহাড়ের গায়ে হাজার লক্ষ টা ঝিনুক কেমন লাগবে?
- ঠিক আপনার মতো দেখাবে।  তবে সে জায়গা ট্যুরিস্ট স্পট হলে উইথ চামুন্ডে মন্দির
- হাহাহাহা।নামের জোরে সাধিব কাল .. শান্ত হ মা শান্তি দে মা সন্তানে মিনতি!
- ও উপেক্ষায় হচ্ছে না এখন আবার বাৎসল্য। 
- শোনো।
- কী?
- ডাক্তার কী বলল?
- ওই যে বিশল্যকরণী। সঞ্জীবনী । আপনি তো সব পারেন।  সব
- কই আর পারি বল?  কিছুই তো পারি না!
- বাজে কথা এ সব আমায় এড়িয়ে যাওয়ার কথা। আপনি বললেই নক্ষত্রলোকের দরজা খুলে যায়,  আপনি চাইলেই এই ডিজেলের শহরে হাজার টা জোনাকি উড়ে আসে,  আপনি দেখা দিলেই আকাশে রামধনু জলে এসে পড়ে,  আপনি ছুঁয়ে দিলেই ছু মন্তুর
- ওটা আমি না। রবীন্দ্রনাথ । পূর্ণেন্দু বা জীবনানন্দ ভাবলেও দোষ নেই।
- আমি তবে বনলতা।
- না।তুমি বন্যা
- কেন? 
- সহজ অথচ সহজ লভ্য নয়।
- আপনি বুঝি দুষ্প্রাপ্য পছন্দ করেন?
- না। রক্তকরবী
- আচ্ছা। রঞ্জন কবে আসবে?
- এসেছে তো
- তবে যক্ষপুরীর দেওয়াল এখনো ভাঙ্গলো না কেন।কেন চারপাশে এত ধ্বজার ওড়াউড়ি। কেন এখনো সেই আলো এলনা?
- এসেছে। চোখ বোজো।দেখো সব আলো এসেছে। দেখো শিবতরাই থেকে অভিজিৎ,  চিঠি হাতে অমল,  রক্তকরবী হাতে কিশোর, আর দেখো পঞ্চক কেমন আলোর নীচে ছুটে বেড়াচ্ছে ।আজ আমরা একসাথে সূর্যাস্ত দেখতে যাব তো।
- সূর্যোদয় নয় কেন?
- সূর্য না ডুবিলে উঠিবে কেমনে?
- আমায় বীজের মালা এনে দেবেন তো?
- দেব। এখন একটু ঘুমোও। দেখো চারপাশে কত জোনাকী
- হ্যাঁ  কত জোনাকী।  কত ........