শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

শিবাশিস দন্ড


শিবাশিস দন্ড

অভেদস্বরূপ

বিগত রাতের সমস্ত দাগ মুছে দেয়
সূর্যের ঢেউ এসে যেমন মুছিয়ে দেয় রোজ পরিপাটি
অচিন আকাশে তবু উড়ে যায় ছন্নছাড়া মেঘের শাবক
অদৃশ্য বৃষ্টির দাগ রেখে যায় ইতস্ততঃ
মন-সরোবরে যেমন এক টুকরো নুড়ির আঘাতে
স্থির জলে জেগে ওঠে অ-স্থির অভিঘাতে শূন্যবলয়
নিভৃত সাধনার দুর্গম তপোস্থলী জুড়ে
আসন্ন প্রলয় আভাসে
ভিড় করে অযাচিত অক্ষরমুখ শব্দমিছিল ছবির কোলাজ
গুপ্তগর্ভে ফুঁসে ওঠে পুঞ্জীভূত প্রবল শক্তি
অতি তীব্র কম্পনের মতো
মৃত্যুহিমেল এক অস্থির অসহ্য স্রোত
ঘূর্ণাবর্তের মতো পাক দিয়ে উঠে আসে কালগর্ভ থেকে...

চূর্ণ বিদীর্ণ হবে এই ঘট, ঘটবন্দি পঞ্চ উপাচার
ভেসে যাবে খরস্রোতে একটুকরো খড়কুটো হয়ে
উদভ্রান্ত বয়ে যেতে যেতে
আবার কোনো মাটির সীমানা পাবে, জীবন কুড়োবে...

এই চক্র ভেদ হবে কবে ???
অন্তরে জাগে যদি প্রবল আকুতি
নিভৃত সাধনস্থলে ধুনির আগুনে
এসো তবে স্থির হয়ে বসি
শান্ত হৃদয়ে জ্বলে ওঠা পবিত্র প্রেমানলে
উদযাপিত হোক তবে উদ্ভাসিত মধুসঙ্গম
বিমুগ্ধ সাধনায় নিঃসংশয় সত্যের মতো
জেনে যাই অভেদস্বরূপ...।







চোখের আলোয়

ওই চোখ কথা বলে
কল্লোলিতা নদীর মতোই
অহর্নিশ ফিসফিস বলে যায় জাগরণী কথা
ঊষর মরুর ধূসর প্রান্তরে এঁকে যায়
সৃজনের নবাংকুর রেখা...

ওই চোখ কথা বলে
নিদ্রায় জাগরণে হৃদয়ের তপোস্থলে
গুঞ্জরিত নাদ ব্রহ্মময়ী
চুরমার দেহভান্ড ধুলিকণা হয়ে
উধাও বাতাসে ভেসে
লীন হয় কোন ছায়াপথের অমৃতধারায়...
জন্ম জন্মান্তরের গর্ভগুহায়
পুঞ্জীভূত যতো হাহাকার যন্ত্রণা বাসনাস্বপন
নিঃশেষে শুষে নেয় ওই দুটি চোখ
স্বর্গীয় আলোর আভাসে...

গাঢ় অনুরাগে ঘণীভূত সজল বাদলে
হৃদয় আকাশ জুড়ে অঝোর বর্ষনে
বেজে ওঠে অনন্ত প্রেমময় মধুর মুরলী
চেতনায় জেগে ওঠা অহৈতুক আনন্দপ্লাবনে
প্রকৃতি ও পুরুষের মধুসঙ্গমে
ধন্য হয় রুদ্রপ্রয়াগ...।







উত্তুরে মৌতাত

আজনবী উত্তুরে হাওয়া
সর্বনাশা মৌতাতে জড়ায় আমাকে নিশিভোর...
নলেন গুড়ের মতো ফোঁটা ফোঁটা আচ্ছন্নতায়
বিবশ বিভোর...

হে কৃষ্ণ, চৈতন্য ফেরাও
ঝরা পাতা ঝরা ফুলে আমাকে মেশাও...।







শীতার্তি

সারা দেশে শীত পড়ে গেছে
তবু কেনো গরমে প্রাণ যায়
খালি গায় ভবঘুরে পাগলের মতো
রাত জাগি...

বালকবেলার কাঠের আগুনে
মাটির মালসার মতো
অনুভবের হুতাশনে হৃদয় পোড়ে
প্রেম রান্না হয়...

কে আনবে পোড়াদেহ জুড়িয়ে দেওয়া শীত ?! 








ছোট্ট নদী তুই

ছোট্ট একটা মিষ্টি নদী তুই
মননগরের ঘাটে ঘাটে
সারাটি দিন আমার কাটে
ইচ্ছে হলেই আলতো করে ছুঁই
ছোট্ট একটা মিষ্টি নদী তুই !!

তিরতিরিয়ে তোর সে চলা
মৌন-মুখর কথা বলা
আলোর মতো ঝিলিক দিয়ে
ছড়ায় কতো শিউলি বকুল যুঁই
ছোট্ট একটা মিষ্টি নদী তুই !!

তোর পরশে হিমেল হাওয়ায়
কতো না গান আমায় গাওয়ায়
জীবন জুড়ায় ক্লান্তি ফুরায়
তোর বুকে যেই মাথা রেখে শুই
ছোট্ট একটা মিষ্টি নদী তুই !!

এমন করেই উত্তুরে এক দেশে
পথের টানে চলতে চলতে
সন্ধ্যারবি ঢলতে ঢলতে
হঠাত্‌ করে তুই দাঁড়ালি এসে
যেন কতো জন্ম ধরে
আছিস আমার হাতটি ধরে
চোখের আলোয় এ অন্তরে
জ্বালিয়ে দিলি সেই স্মৃতিটুকুই
ছোট্ট একটা মিষ্টি নদী তুই !!

এখন আমার বক্ষ গিরিপথে
নিভৃতে তুই বহমানা
উজাড় করে ষোলো আনা
দিলি আমায় পরতে পরতে
পূর্ণ হলাম তোর পরশে
পবিত্র সেই প্রেমরসে
দুইটি হৃদয় থাকলো না আর দুই
ছোট্ট একটা মিষ্টি নদী তুই !!








সূর্যতপা

পেরিয়ে এসে মধ্যরাতের বালিয়াড়ি
চোখ সরে না কাকসকালি উপত্যকায়
পীতাম্বরা সূর্যতপা পূবদিশারী
পালিয়ে গেছে কোথায় তখন সে দৈত্যকায়

স্বপ্নক্লান্ত আর্য কাঁদে নষ্টঘুমে
অন্ধকারের সঙ্গমে তার শিথিল দেহ
বালিয়াড়ি পেরিয়ে এ কোন ভ্রষ্টভূমে
পীতাম্বরা সূর্যতপার পাচ্ছে স্নেহ

আর্য তুমি আর দেখ না হংসমিথুন
অলিক আলোয় কাটিও না আর বিনিদ্র রাত
পীতাম্বরা সূর্যতপা রমণী নয়
হৃত্‌প্রদেশে নির্ঝরিত জলপ্রপাত... !!