বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

মোকসেদুল ইসলাম




মোকসেদুল ইসলাম
মহাজাগতিক গল্প এবং আমাদের শখের ভুগোল পাঠ
................................................................................
এবং তোমরা যেসব হাসি-কান্না মেশানো ভোর ডেকে আন তাতে রাতের
বিন্দুমাত্র গন্ধ নেই। ইদানিং চন্দ্রের প্রসারণে পতন ঘটে সন্ন্যাস জীবনের।
রাত্রি জেগে থাকা ডাহুক পাখির মত করে আমরা অমরত্ব চাই না। পরিপাটি
জীবনে মাটির গন্ধই ভাল লাগে। এই পরম সত্য জানার আগেই ধ্বসে পড়ে
তোমাদের মহাজাগতিক বোধ, আকাক্সক্ষা ছাড়া মানুষের আর কিছুই অবশিষ্ট
থাকে না। মৃতরা যেমন করে রাতকে ভালোবেসে দৃশ্যময় হতে চায় বিছানায়
আমিও নিশ্চিত, ক্ষুধার্ত এই পাঠশালায় শেখার কিছুই নেই। শুধ শখের ভুগোল
পাঠ করে কেটে যায় দিনান্তের সময়।



মোকসেদুল ইসলাম
ধর্ষিত নদী শিল্পের কথা
.............................................
বুকের ভেতর একটা ভয়ংকর খেয়ালি নদী বইছে
কচ্ছপ গতিতে এলোমেলো হেঁটে বেড়াচ্ছো সেথায়
আঁধারের বিছানায় ঘুমাতে গেলেই হারিয়ে ফেলি সুর
পৌরাণিক ঘোরের মধ্যে পড়ে খুঁজি ভৌগলিক সীমারেখা
নতুন চোখে সেই পুরোনো দৃষ্টি-তুমি আগের মতই আছো
শুধু প্রত্যাশার চাদরে ঢেকে যায় অদৃশ্য চাওয়াগুলো।

ইদানিং ডাকপিয়নের হাতে আর কোন কাজ নেই
ডাকবাক্সের নীল চিঠি ধর্ষিত হয়েছে বহু আগেই
শখের খামটি খেয়ে ফেলেছে উইপোকায়
কৌতুহল শেষ হলে নদীটিও ধর্ষিত হয় বারবার
মুখোশে নিজেকে আড়াল করে ঢেলে নিচ্ছো শিল্পের নির্যাস।



মোকসেদুল ইসলাম
ভেঙ্গে যাওয়া সময় এবং আমার অপেক্ষা
......................................................................
দিন পাল্টাচ্ছে। তুমুল আন্দোলনে ভেঙ্গে পড়ছে সময়ের ঘড়ি। সমুদ্রের উন্মত্ত আওয়াজের
মতো করে এখন বোবা বৃক্ষরাও কাঁদে। স্বশব্দে ভেঙ্গে পড়ে হৃদয়ের বাঁধ। আমি তো ভাষাহীন
নই, আরক্ত কষ্টে গড়া সবুজ বনানীতে মেঘের মৌনতা ভেঙ্গে কিছুটা বৃষ্টি চেয়েছিলাম। জানি
পোশাকে ঢেকে কখনো পাপ লুকানো যায় না তারপরেও মৃত্যুময় রাতে স্বপ্নে দেখি নাগরিক
জীবনের ভোর। জীবনে প্রেম আসে, দ্রোহ আসে, শূন্যে শূন্যে কথা ভাসে। যাযাবর রমণীদের
মতো করে কেউ স্বাধীনতা পায় না। এখন তো নোটিশ বোর্ডে ঝুলে থাকে বাক স্বাধীনতা। এই
শহরে প্রেমিকার রাঙা চোখে দেখা মেলে শেষরাতের তারা। বোবা বৃক্ষের মতো বেঁচে থেকে
ছিন্ন মানুষেরা স্বপ্ন আঁকে। কেউ কেউ বলতে চায়, ভরা চাঁদের জলে পা ডুবিয়ে গাইতে চায়
শিকল ভাঙ্গার গান। ঐতিহ্যের সমাজ ভেঙ্গে আনতে চায় মুক্তির বারতা। বাঁধ ভেঙ্গে গেছে,
ক্রোধের ঢলে ভেসে যাচ্ছে অসাড় মানবধর্ম, ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। উন্মুক্ত তরবারির নিচে
মাথা নুয়ে বসে আছে প্রলুব্ধ সভ্যতা। আমি অপেক্ষায় আছি আর একটি বায়ান্ন, ঊনসত্তর
কিংবা একাত্তুরের জন্যে।



মোকসেদুল ইসলাম
মৃত্যুও যেখানে পরাজিত
..........................................
প্রতিনিয়ত আমরা মৃত্যুকে ডিঙিয়ে যাই ঈশ্বরের মত
ভবের মাঝে কাম-ক্রোধে মত্ত থাকি শালা ইব্লিশের ন্যায়
কেউ অন্ধকার ভালোবাসে, মসৃন বিছানায় শুয়ে স্বপ্নে
উন্মত্ত নারীর অনাবৃত স্তনের নাচ দেখে।

সামান্য ধূলির ক্রোধ থেকে যে বাঁচতে পারে না
সে আর যাই হোক মহাপুরুষ যে হতে পারে না
এবিষয়ে কেউ নিশ্চিত না হলেও পুরুষ কিংবা নারীর
রতিক্রিয়ায় সামান্যতম ভুলও যে হবে না এটা সবাই জানে।

প্রশস্ত রাঙা ঠোঁট, মাংসল নিতম্ব, ফর্সা নাভি, সুডৌল স্তন
নারীর সবকিছুই ঈশ্বর এমনকি মৃত্যুকেও ছাড়িয়ে যায়
পুরুষ তাঁর সমস্ত অর্ঘ্য ঢেলে দেয় নারীর নিষ্কলুষ শরীর দেখে।



মোকসেদুল ইসলাম
ভুগোল পাঠ
...............................
ঘনিষ্ঠ অবসর আর তির্যক রোদে তামাটে হয়েছে প্রেম
নাভি মূলে এখন আর আছড়ে পড়ে না সমুদ্রের ঢেউ
শব্দের খেলা, শীতের ওম! দিনান্তের হাসি সব ভুলে যাই।

ভুগোল পাঠের মত করে ইদানিং তোমাকে পাঠ করতে গেলেই
হারিয়ে ফেলি প্রভাতের আলো, বিভ্রমে কেটে যায় সময়
দিক নির্ণয়ে ভুল করেছি বলে দীর্ঘ অন্ধকারে পড়ে আছি
অনিশ্চয়তার দুঃস্বপ্নরা হেঁটে আসে, আমি ঘুমোতে পারিনা।

সত্য সুন্দর জীবন যাপন করবো বলে নীতির ভুগোল পাঠ
করতে করতে ভুলেই গেছি সৌন্দর্য়েরও পূজা করতে হয়
ভুগোল ভুলে দীক্ষা নিতে হয় নতুন প্রেমের।

তোমার কাছে ভুগোল পাঠের দীক্ষা নিয়েই জেনেছি-
মৃত্তিকা শুধু ফলসই উৎপন্ন করে না মুখে হাসিও ফোটায়।