বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য




সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য
মানো না মানো

প্রতিটি জয়ের পাশে এক খানি
আস্ত পরাজয়
আলিংগন করে পরস্পরে।
ভূমিহীন বাস্তুহারা স্মরণ অতীত
বাস করে হা হা অলিন্দে
ঝটপটায় কবুতর
ছটফটায় স্মৃতি সৌধে
একক অভিনয়ে
হে কাল মহাকাল অবিনাশী আবেগ
ছুটে চলে দিগচক্রবাল ছুয়ে
অসীম শূন্যছায়ায়
এক ও অধিকের নাভিমূল
ছিন্ন করে দুরন্ত স্বাধীন
বিপথ গামীতায়
রিক্ত অভিপ্রায়ে
হে মহর্ষিগণ,
শান্ত করো শান্ত করো
কুন্তী গান্ধারী সহ
সমগ্র মাতৃকূলে
হে কৃষ্ণা, পাঞ্চালতনয়া তুমি
ক্ষয়, লয় সহ কুরুকূলে আলো দেখাও। আলো দেখাও
নিজ সন্তানেরে-
দ্বৈপায়ন ব্যাস, শোনো
তুমি নও
একমাত্র অশ্বত্থমাই জানে
তন্ডুল দুগ্ধে এখনও জমাট বেঁধে আছে
ধ্রুপদী সুর, ঠমক আর ছন্দের সুঠাম বন্দীজীবন।






সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য
ভাবি, ভেবো না তুমি

তোমার এমন সোনার বরণ
আগুন রঙা উরনি
খসে পড়ে
ঝটকায়
তুমি রঞ্জন
তুমি অনির্বান
তুমি অমল
তুমি ঝটিকা সফর
কিন্তু স্বচ্ছ থেকো
আমার সোনামন
ভুলি নি তোমার ঈপ্সা
ভুলি নি ভালোবাসা
তুমি আর ডেকো না ওই মধুনামে
ও ভোলামন
জানি তুমি
ঘূর্ণী মায়ায়
আটক কায়া
জন্ম কবচ
কমন্ডুল ছাড়াই
ভ্রমণ
অসুখ
খুনসুটি
ভেঙ্গে দিয়েছ তুমি
রাঙ্গা আয়না
বোতাম

কবিতার
সমস্ত রসায়ন
শিয়রে অসুখ
তবু
খুঁজে যাও অন্ত্যমিল
শরীর খুঁড়ে শান্ত হল শৈশব
কল্পনা, জল
কঠিন হৃদয়
জল জানে
আমি খুব কাছাকাছি চলচ্চিত্রের
কুয়াশা ফ্রেম বন্দী
অরণ্যে
নক্ষত্রের মৃত্যু
জন্মকাল ও ছাড়িয়ে যায়
তোমার হাসি রহস্যময়
শোনো,
শোনো তুমি
আমি তোমাকে চিনতে পারছি না, পারছি না





সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য
আমি

হায় জন্ম,
হায় জন্ম বদলের দিন
নদীতে
প্রগাঢ় রাত্রির
নির্জনতা
হায় দিন
হায় রাত্তির
গুঞ্জা ফুলের মালা
টুপ টুপ ঝরে
নীলিমায়
প্রবাসীর চিঠি
হ্যাঁ যে কথা বলছিলাম
তোমার কন্দর্পকান্তি রূপ
তোমার বাগ্মীতা
তোমার সূর্যের মত
ব্যক্তিত্ব
স্নেহময় উদারতা
আমিত্ব
বিশালতা
সব কিছু ছাড়িয়ে
এককন্ঠ বরাভয়
আমাকে মুগ্ধতার ঘোরে
আবর্তিত করে রোজ
প্রতিদিন রণ
প্রতিদিন ই রণে ভংগ
দিই আমি
হাঁটু মুড়ে বসি
সহস্র সহস্র আলোক বর্ষ
তছনছ করে
এলাচ গন্ধী আগুন
উড়তে উড়তে
অসংখ্য আকাঙ্খার
উন্মোচন করে
দ্যুলোক ছাড়িয়ে
অযুত অভিমান
করজোড়ে
মুষ্ঠিভিক্ষা নেয়
কে তুমি
নিজ কল্পনা
অভিমান
অনস্তিত্ব
নির্বাসন
চূর্ণ ভুল
আবরণহীন
আঙ্গুলে ছোঁয়ানো
থুতনি
স্নেহ-কাঙ্গাল মন
মাঝখানে
সেতুবন্ধনে
বিরস চন্দন
দুর দেশী সেই রাখাল ছেলে






সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য
বর্তমানের অতীত

মাঠের সামনে
দাড়িয়ে আছে
শৈশব
একা
শন শন হাওয়া
উত্তুরে
উনুনের ধোয়ায়
চোখ জ্বলছে চোখ
এত ধারা জল
এখনও গড়ায়
প্রকৃতির উৎসবে
আত্মপরিচয়
আগুন, জল
ধানের অঙ্কুরে
কাচা রং
অহল্যা জাগে
জীবন অপর্যাপ্ত
স্বগত উক্তিতে
রাখীবন্ধন
"হাজার বছর পার হয়ে আজ আসি তোমার কাছে"
রূপান্তরিত হয়েছেন রাজা
রূপান্তরে নন্দিনীও
নীরব মন্ত্রোচ্চারণ
এখন অভিনয়কে বলা হয় রূপনাট্য





সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য
সূচনায় তুমি

শেষ প্রহর শুরু
নিজের ভেতর থেকে
স্বাধীকার ভঙ্গেরর প্রস্তাব
আসছে। এ বড় ভয়ঙ্কর দিন।
বাতাসে আতস কাচ হাতে
দাঁড়িয়ে রয়েছে সময়
স্মরণকাল অতীত
অবিমিষ্যকারিতায়
ভেঙ্গে ভেঙ্গে বর্তমান
শ্বাস ফেলছে
অনাগত ভাবীকালের দিকে
তাকিয়ে
তোমার হাতছানি বড় নির্মম
মহাকাল,
বজ্রনির্ঘোষে সুদূরের দীর্ঘশ্বাস
ছাপিয়ে উঠে আসছে
অশ্বক্ষুরধ্বনি, হ্রেষা
বাঙময় প্রেতলোক
নূপুর ও শাস্ত্রীয় সুরের
আলয়
তুমি ভোর শঙ্খ বাজিয়ে
ভোলাতে চাইলেই
অর্জুন কি ভুলে যাবে
পাখির চোখ,
কুন্তীপুত্রের কবচ কুন্ডল!
দ্রোনাচার্য জানেন তন্ডুল কণায়
জড়ানো মাতৃদুগ্ধের ঘ্রাণ
কতটা নৃশংস হতে পারে,
হতে পারে পুত্রহন্তারক
এস, ছোঁয়াও
হাতের ওপর থেকে ওম নিয়ে
জমাট প্রতিচ্ছবি ছিনিয়ে নাও
জোয়ারে
আরও নিকট শকটে
নতজানু হও