বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

রঞ্জনা রায়




রঞ্জনা রায়
আলোকিত বন্দর
                    
এক নতুন বন্দরের স্বপ্নমায়ায় ভেসেছিল সে
নাবিকের তৃষ্ণায় উন্মুখ বৃষ্টিবিন্দুরা ঝরেছিল
ইমনের তানে , আলাপে, উচ্ছ্বাসে নদী হাসে
ঝড়ের উত্তাপে রাতপাখী নীড় খুঁজেছিল ।

পণ্যের রঙচঙে রূপকথা দুহাতে জড়াতে চায়
নাবিকের উপোসি চেতনার বিষাদ শরীর
নাবিক জাগে , নাবিক ঘুমায় , পণ্যের মৃতদেহে
জমা হয় বিলাসের গন্ধমাখা কাগজের ফুল ।

এভাবেই কেটে যায় দিন মাস অনেক বছর
আসে ক্রান্তিকাল ঘন গভীর শ্রাবনে ,
নাবিকের সূর্যমুখী জন্মচেতনা খুঁজে নেয়
এক আলোকিত বৃষ্টি শুদ্ধ বন্দর ...





রঞ্জনা রায় 
নোঙর

অসংখ্য জনতার চোখের আড়ালে
বৈশাখী হাওয়ায় দোল খাওয়া
গাছের পাতারা কখনো গল্প বলে ।

অগণিত রাতের অন্ধকার চাদরের
ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্না সাজানো একটি
রূপালি চাঁদ হয়তো উঁকি মারে ।

স্কাইক্রেপারের ৩৮ তলায় যখন
মেঘেরা নিজেদের সাজিয়ে তোলে
তখন অনুভবে তোমার উত্তাপ
এক অচেনা রোদ্দুর হতে চেয়েও
হটাৎ বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে ।

মারমেডের মত সাঁতার কেটেছি
বসন্ত আগুনে কবিতার খোঁজে ,
তোমার চোখের ঘনপল্লব ছায়ায় ।

৩৮ তলার যে কোন সওদাগর মেঘ
যখন তীক্ষ্ণ নখের আঁচড়ে দিনরাতের
সবকটা সবুজ পর্দা ছিড়ে এগিয়ে আসে ,
তখন কেন তোমার একান্ত রক্তকরবী
হতে চেয়ে মেসেজ বক্সের নীলাভ আলোয়
আমার আমি নোঙরের দড়ি খোঁজে ?






রঞ্জনা রায়
একটি ক্ষণ
            
একটি নিস্তব্ধ ক্ষণ রাখতে চেয়েছি মনের গভীরে ,
বৃষ্টি ফোঁটার নিথর আভাসে
        রামধনু সাগরে জেগে ওঠা বদ্বীপে
         ডানা মেলে রোদ্দুর মাখে
 পৃথিবীর আবর্তনে বাঁধা পড়ে
       বীজময় প্রানের অনাহত পরিক্রমা ।
কাল থেকে কালে যোগ আর বিয়োগের মায়াবী লীলা ,
খেলা গড়া , খেলা ভাঙার খেলায় মেতে
মন ক্লান্ত থেকে ক্লান্ততর রাতে ,
খরচের খাতায় জমার হিসেব মেলাতে বসে ।

মরা ইঁদুরের চোখে কখনো কি শারদীয় জ্যোতি হাসে ?

অসংখ্য বিতর্ক , প্রশ্নের মাঝে প্রাণভোমরা সেই তদ্গতক্ষণ
                         ব্রহ্মে ব্রহ্ম লয়
                         নীল আর নীলে নিরাকার ।                                





রঞ্জনা রায়
অন্তিম নিঃশ্বাস     

আমার অসহায় রাতগুলো এক কঠিন গারদে বাস করে ,
অনেক নিযুত বছরের অভিশাপ , পায়ে জড়ানো
  ঝরে পড়া শিউলি ফুলের অনুভব ।

শিকের ফাঁকে ফাঁকে জমা হয় মুক্তির মায়া ।
দিনে রাতে পুতুলের সাজ পরে
    আমি ঘুরি কয়েদের বাক্স ঘরে ।

শীর্ণ যমুনার তীরে আজো কি বাজে বাঁশি ,
দুঁহু কোঁড়ে এখনো কি জাগে বিচ্ছেদ ভয় ?

৩৬৫টির গারদে বন্দী আমার এই জীবন
বসে থাকে বুকে নিয়ে মধুর বিশ্বাস ,
শ্যামের অভিসারে মোহিনী হবে সে
   গারদ শোনে গারদের অন্তিম নিঃশ্বাস...






রঞ্জনা রায়
বৃষ্টির সাথে পথ হেঁটেছি

অঝোর বৃষ্টির সাথে হেঁটে চলেছি ,
বৃষ্টি নেশায় মাতাল , চঞ্চল
মনে নদী জন্মের কথা
সাগরে হারানোর ভেজা অনুভব ।
স্রোতের সাথে চলতে চলতে
যখন স্রোতের উজানে দিলাম পাড়ি
তখনই বৃষ্টি এলো দুচোখের পাতা আনত ।

রাস্তা জুড়ে অসংখ্য গাড়ি কোলাহল
জীবনপন আমি ছুটি
জন্মজন্মান্তরের চিরায়ত রাধা!
এক শ্যামলা বৃষ্টি পুরুষের সোঁদা গন্ধ
তড়িত করে , পাগল করে মগ্ন উচ্ছ্বাসে ......