বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

প্রণব বসু রায়




প্রণব বসুরায়
রাতের সেলাই কল  - ২ 
কাপাস থেকে কিভাবে সুতো
জেনেছিলাম সেইই ভোরবেলায়, তখন
হাতের নীল গোলাপ, ভালোবেসে
মূর্খের মতো অনায়াসে দিয়েছি প্রেয়সীকে
খেলাচ্ছলে সে একটা একটা পাপড়ি ছিঁড়েছে
গোলাপের রক্তে হাত ভরে গেছে তার.
অলীক গোপনে;
সহজেই ছোট্ট রুমালে হাত মুছে, সে
চলে গেছে ড্রয়িং ক্লাসে, বিমূর্ত্ত শিল্পের মতো
সে কারণে শিখতে পারি নি সুতো থেকে
আস্ত কাপড় তৈরীর কূট কৌশল...
*
সেলাই কল ঘুরতেই থাকে, তার চাই
কাপড়ের অফুরাণ জোগান
স্টিল শট জুড়ে জুড়ে
সে বুঝি কোলা্জ করবে সময় শিল্পের!





রাতের সেলাই কল – ৩ 
শোনো, যখন তুমি 'নেই' 'লে ন্যাকামি করছিলে
তোমার ওড়না দেখা যাচ্ছিল।
বীট পাহারায় ডিফেন্স পার্টির ছেলেরা তখন রাস্তায়
মহল্লার কুকুরগুলো ওদের চেনে, বিস্কুট টুকরোর লোভে
পায়ে পায়ে ল্যাজ দুলিয়ে ঘোরে...
এসব এড়িয়ে তুমি ঢুকে গেছো নীল বাক্সে
*
ঘড় ঘড় শব্দ ক'রে রাতের সেলাই কল
জুড়ছে ভাঙা পাঁজর, মাংস তন্তু দিয়ে
*
মধ্য চল্লিশেও চামেলির গন্ধ মেখে
কেন তুমি আন-পথে যাও !




রাতের সেলাই কল ৬
বাতাসে উড়ছে মৃত কথা
ছেঁড়া চিঠির টুকরো বিপজ্জনক ঢুকে যাচ্ছে
হাসপাতাল ও আদালতে,..
মানুষের শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এতে--
এই সত্য জেনেও প্রেতনীর মতো
খুবলে নিয়েছো চোখ, আর
নাকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছো গ্যাস মাস্ক।
#
এরপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সর্বাঙ্গ দেখে নাও
পূর্বতন সফরের কোন চিহ্ন আছে কিনা!
টিস্যু পেপারে মুছে সামনের নরম সোফায়
'সে পড়ো, পরের ফ্লাইটের জন্য, কফি খাও--
দু'এক কলি রবীন্দ্রসঙ্গীতও মনে আসে, এ সময়ে
রবীন্দ্র-জারণের শংসাপত্র যেহেতু তোমার ''লকারে’’
#
রাতের সেলাই কলে
কাপড়ের সঙ্গে চামড়া সেলাইয়ের
উপযুক্ত সূচ থাকে না প্রায়শ...




রাতের সেলাই কল (৮)
সন্ত্রস্তের যে ছবি দেখাও, তাতে
কিছুটা হলেও, খাদ থেকে যায়--
ঐ বিম্ব জানে রূপটানে কতটা বদলায়
কালোর পোঁচড়ে করো ভয়ের তালাশ
চিবুকের মাঝখানে
এঁকে নাও রক্ত-লাল আর তিল রাখো যেখানে রাখার
স্প্রে করে সফল ফোটাও তাড়া খাওয়া ভাব
মুহূর্ত ব্যবধানে...
*
মঞ্চে, আলোর বৃত্তে নির্ভুল অভিনয়ে
বয়ে যায় লাভা স্রোত... আলোর ভেল্কি
দর্শকরা স্থানুবৎ, নড়তে পারছে না।
*
দৃশ্যগুলি গেঁথে রাখে
রাতের সেলাই কল...



রাতের সেলাই কল  (৯)
বাস স্টপে দাঁড়াতে ব’লে নিজে যাও ট্রেনপথে
এমন মহান রসিকতা এ্কুশ শতকের নতুন ধারণা।
চাঁদ ও সূর্য ডুবে যায় নদীর এপার ওপারে
মাঝে শধু ধোঁয়ার অছিলা...
#
কতদিন শুঁড়ি পথ ধরে বন ও ঘাসের সান্নিধ্যে
বৃষ্টি মেখেছি, কদম তুলেছিকেন, জানো তুমি
আগুনের কাছে হেঁটে গেছি চোখেতে রুমাল
মাঝ রাত্তিরে লঙ্কা মেখে পান্তা খেয়েছি
চন্ডাল আমি--বসেছি সদ্য নেভানো চিতার পাশেও
#
তাও, দ্যাখো দাঁড়িয়েছি বাস স্টপে ঘন্টা দুয়েক
আর তুমি গ্যাছো ট্রেন ধরে উল্লাসপুর!
#
রাতের সেলাই কলে সুতোর নতুন রীল
বসিয়ে দিয়েছে পড়শিরা...