বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

তন্ময় ধর


তন্ময় ধর

অদৃশ্য কবিতা

শাদা বালি থেকে দৃশ্যহীন একটা শামুক
তোমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না
নির্বাক যুগের জাদুকর তাকিয়ে রয়েছে তোমার আঙুলের দিকে
ভ্রূণের দৈর্ঘ্য বাড়ে নি

দৃশ্যহীন শামুক থেকে ছায়াচিত্রে
ঈশাবাস্যের দীঘল জলোচ্ছ্বাস থেকে
আমি কালো এক কান্না তুলে আনি
ভ্রূণের সময় আমাদের সঙ্গে ভাববাচ্যে কথা বলে

দৈর্ঘ্য বাড়ে না
দৃশ্যতাড়িত পাখি থেকে ক্রমশ নেমে আসে মাতৃসন্ধান
শীতল লবণাক্ত পৃথিবীতে এইভাবে এল নিনো শুরু হয়
অতিবৃষ্টির ভেতর দাঁড়িয়ে থাকেন স্মৃতিভ্রংশ ঈশ্বর

সেই ক্ষয়জাত অন্ধকারের ভিতর
বীজধর্ম থেকে পাখি তাড়াচ্ছি আমরা
সম্পর্কের করুণতম মাছ
ভাঙন ধরাচ্ছে রেসিপিতে

দৈর্ঘ্য বাড়ে নি
পায়ের শব্দের অভাব
আমাদের পথকে অচেনা করল
একটু দূরত্ব বজায় রেখে আমরা ক্ষতিপূরণের লাইনে দাঁড়ালাম।।





দৃশ্য কবিতা

সমীকরণের বাইরে থেকে তুমি তুলে আনছো
পেনসিল, ঈশ্বর ও মাংস
শিল্পের নিয়মে এখান থেকে শোষণ শুরু হয়
আমি তোমার অসুখ থেকে সরিয়ে নিচ্ছি পাখির ভ্রূণধর্মকে

সেই অধর্ম বিফল ডিম হয়ে পড়ে থাকছে আমাদের নষ্টনীড়ে
সাপের দেহবোধ এবং হাওয়াকে বারবার ডেকে আনছে
তার স্মৃতির নীচে, রক্ত ও ঘনজ্যামিতিতে
আমি ব্রেকফাস্টে জল মেশাচ্ছি

একের পর এক মাংস কেঁপে উঠছে
তুমি জানো, এই শীতকাল সহজে যাবে না
খিদেয় খালি হয়ে থাকা পেটে ক্রমশ
আঘাত করে চলেছে পূর্ণদগ্ধ ছাইরঙের একটি পেনসিল-স্কেচ

জাদুকরের কাটা হাত ও আজ্ঞাচক্র ডুবে গিয়েছে
আমাদের রাসায়নিক ধর্মে
অবুঝ এক অম্লগন্ধ থেকে
লাফিয়ে ওঠে সম্পর্কহীন কাঠবিড়ালী




স্পৃশ্য কবিতা

কালো ঘর থেকে শাদা ঘরে চলে এসেছি স্পর্শ ছাড়াই
মাংসের দরদাম থেকে উপড়ে ফেলা একটা নীরবতার ওপর
অসাড় একটা চাল ফেললাম
সম্পর্ক দাঁড়িয়ে রইল আমিষাশী মশলার বৃদ্ধিগন্ধে

সম্পর্ক মুখস্থ হচ্ছে না, প্রম্পটার ছুঁড়ে দিচ্ছেন
জল-মশলার এক নিষিদ্ধ বিনিময়, ভ্রূণহত্যা
মৃত কোষে লুকিয়ে রাখা অন্ধ কাগজে বারবার জাদুকর এঁকে দিচ্ছেন
স্পীডব্রেকার ও ঈশ্বরগন্ধী শালপাতা

মৃত শালপাতা ও নক্ষত্রের ভিতর
আমি বারবার তোমার স্পর্শবর্ণ হই, দৃষ্টিগন্ধ হই
আলোকবিজ্ঞানের সে নিয়মেও
ভ্রূণ নড়ছে না

নিখুঁত জ্যামিতিক বৃত্ত থেকে ছাইরঙা এক মেয়ের আলো নিয়ে
তুমি আমার পাশে খেতে বসেছো
সুগন্ধী চালের ভাত, লালশাক, মুগডাল, সৈন্ধব লবণ-
গবেষকেরা বলছেন, জাতিস্মর চোয়াল ঠিকঠাক নড়ছে না






অস্পৃশ্য কবিতা

রক্তাক্ত বালি বেশীদূর এর অভ্যাস টানে নি উত্তর-শব্দের ফেনা,  হাওয়া,
ঝিনুকের কান্নার মতো স্পষ্টগর্ভ এক ভয়
ও শব্দহীনতা থেকে একটানা আমরা ঢুকে যাচ্ছি একটাই ধাতব শব্দ নিয়ে
শবদীঘল এক পুনর্জন্মে ক্রমাগত প্যাডল করে চলেছে তোমার অভিনয়

মৃত্যুহীন একটা শক্ত মাংস
একদাগ নামে
একদাগ উঠে পড়ে সম্পর্কের ব্যথিত অনুবাদে
আমি তোমারই মতো কেমিস্ট্রির পাতা উলটে যাই

প্লবতায়, স্বরে ও মিসক্যারেজে লুকিয়ে রাখা সেই ঈশ্বরগন্ধী মাংস থেকে
অতীত রঙের একটা হেমন্তে অল্প মশলা মাখিয়ে রাখছো তুমি
মনে পড়ছে না, পুড়ে উঠছে যৌনতা
অন্ধ কুয়াশায় থেমে থাকা কাঠবাদামের কথোপকথন

শূন্যে খুব সামান্য খেলা
তুমি তো বাকিটা দ্যাখোই নি শব্দোত্তরে
একমাত্রিক চলার শব্দ চমকে উঠছে ব্ল্যাক আইবিসে
ভ্রূণহত্যাতেও তুমি গাইছো ফান্দ বসাইছে ফান্দী রে ভাই, পুঁটিমাছ দিয়া...




অজ্ঞাত কবিতা

দৃষ্টিহীন একটা মাছ সাঁতার কেটে এসেছে তোমার অজ্ঞাতবাসে
জীবনের তরল মানচিত্র বড় হচ্ছে
আঁশ, আঙুল, জন্মান্তর ডিঙিয়ে চলে আসছে জলের ছবি
তোমার দৃশ্যহীনতার ভেতর ঘুম পাচ্ছে আমার

স্বপ্নের ওপর স্বপ্নের দাগ পড়ছে না
দেহবোধের পরিবর্তনশীল জলবায়ু থেকে
তোমার অভিনীত মাছ সরে আসছে
প্যালিওলিথ কঙ্কালের প্রসন্নতায়

তোমার মাংসাশী পরিচয় আমি হু-হু করে টেনে চলেছি
একক মৃগশিরা নক্ষত্রের নীচে শব্দহীন সমুদ্রে
হিংস্র লবণের মতো
আমি শুধু তোমার অন্ধতাকে দেখতে পাচ্ছি না

আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না
জলের রঙ কেঁপে উঠছে অকারণ সম্পর্কে
জলের ভিতরে এত জল
কাঁচের নীচেও অশ্বক্ষুরাকৃতি