বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ফিরোজ আখতার


ফিরোজ আখতার

একটু জীবন চায় মানুষটা

কারাগারের অন্ধকার কুঠুরির মধ্যে থেকে
বেরিয়ে এসেছে একটি হাত,
শীর্ণ, ময়লা একটি হাত
আর, দূরের ছোট্ট একটি জানালা দিয়ে
এসে পড়েছে একফালি রোদ
হাতটা সেই রোদের টুকরোকে মাখতে চায়,
রোদের একটু উষ্ণ পরশ পেতে চায় !
 চওড়া কব্জি, লম্বাটে আঙুল, আর
আধময়লা নখের সারি
চামড়াগুলো কুঁচকে গেছে;
কত বছর, কত কাল হল কে জানে,
আলো মাখেনি হাতটা
 একটু আলো চায় হাতটা,
একটু উষ্ণতা চায় জীবনটা,
একটু জীবন চায় মানুষটা




এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যার গল্প

কোন এক বরষামুখর সন্ধ্যা ছিল সেটা,
কলকাতার এক রাজপথের ঘটনা ছিল সেটা,
একটা মানুষ টানছিল তার রিক্সাখানি;
একজন বাবু তাতে বসেছিল বেশ তা জানি !
.
সারাটা দিন বৃষ্টি হইয়েছিল অবিরাম
রাস্তাগুলো কোমরজলে ডুবেছিল একদম
পঞ্চাশ টাকা দেব তোকে চল’, বলেছিলেন বাবু সুখিরাম
এক কোমর জল ঠেলে হয়েছিল বটে বিক্সাওয়ালা বেদম

বামদিকের গলিবলেছিলেন বাবু আঙুলটা বাড়িয়ে ক্লিন,
ভুলে গেছিলেন ম্যানহোলটা সেথায় খোলা ছিল কয়েকদিন
যমদূতসম ম্যানহোলটা হঠাত গিলে নিল চালকটিকে,
কোনক্রমে বাবু রক্ষা পেলেন, গিয়ে পড়লেন উল্টোদিকে
.
পরদিন ভোরে মিউনিসিপ্যালিটির লোকজন এসে আগে,
পাম্প করে জল সরাল গলির তুলল সেই দেহটাকে
চোখদুটো যেন দেহটা থেকে আসছিল প্রায় ঠিকরে,
নতুন ঢাকনা বসলো ম্যানহোলে বেশ শক্তপোক্ত করে।।




মায়ের পরশ

বহুদিন বাদে কড়াইশুঁটি খাওয়া, মায়ের হাতের ছাড়িয়ে দেওয়া -
রোদে বসে বসে মায়ের হাতের পরশ | টুকরো গাজর খাওয়া ৷
বহুদিন বাদে: মায়ের আঁচল ৷ পরশটুকু মাখা ৷
শান্ত মনের পরম পাওয়া: স্নেহের ছায়া ঢাকা ৷

মায়ের আঁচল; সুবাস আদুর: স্বপ্নলোকের আতর ৷
ছিন্নমূলী অস্তিত্ব মোর: প্রেম পিপাসায় কাতর ৷

ছোটবেলার মায়ের বকা: বাজে বুকের মাঝে,
সকাল, দুপুর, সাঁঝে -
নিত্যদিনের কাজে হাজার সুখের মাঝে ৷
এমন করে দেয় না বকা কেউ এখনো আর ৷
আকুল হয়ে খুঁজে ফিরি, স্নেহের ধমক তার |




দূরের বাঁশি

বহু দুরের বাঁশির আওয়াজ, ভাসে মিঠি সুরে,
বাতাস আরো ঘন হয়: কাছে নাকি দূরে?

মেঠো রোদে হাল্কা তাপে
শীতের মিঠে কড়া ভাপে
কাঁচির করাত কাটতে থাকে রাংতাপাতায় মুড়ে

হিমের পরশ: নরম ওমের ঢেউ তুলে যায় বুকে,
সিগারেটের সুপ্ত আগুন জ্বালায়, পোড়ায় সুখে
স্নিগ্ধ কোমল সুখে




নতুন বছর

সময় তো সময়,
কিভাবে আটকাই বলো তোমায়?
বাঁধবো না আর তোমায়; মাস-বছরের ফ্রেমে -
জীবন চলুক ঢেউয়ের স্রোতে একটুও না থেমে |

বেকার ছেলের চাকুরীর ঐ খয়েরী রঙের খাম
আনবে কি নতুন বছর: তার মিষ্টি প্রেমের ধাম?

অনাথ শিশুর ভরদুপুরের ধোঁয়া ওঠা ভাত -
আনবে কি নতুন বছর: তার মাথার উপর ছাদ?

ধর্মের নামে অধর্মের বিভেদ যারা করে -
দেবে কি নতুন বছর: তাদের মানবপ্রেমে ভরে?

এসব কিছু যদি না-ই হয়, নতুন বছর কিসের?
আসলে তো রঙীন মজা: ফুর্তি করার ফের৷