বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

সুমনা পাল ভট্টাচার্য



সুমনা পাল ভট্টাচার্য

দেখা হবে----

(১)

একদিন দেখা হবে আমাদের
যেখানে পৃথিবী তার সমস্ত বেশভূষা ছেড়ে
নগ্ন সমর্পণে এক দিগন্ত আকাশের স্বরে
মেলে ধরেছে নিজেকে
ঠিক সেখানে
একদিন দেখা হবে আমাদের।

তোমার চোখের কোল বেয়ে
একে একে ভোর নেমে এলে
আমি পাখির ঠোঁটে রেখে যাবো
আমার অবিভক্ত চুম্বন।

সেদিন নতজানু হয়ে চেয়ে নিও
আমায় আমার থেকে
যা কিছু তোমায় দেওয়া হয় নি আমার,
গুছিয়ে রেখেছি পরিপাটি
চেয়ে নিও সেই সবটুকু...

তোমার নতজানু কাঙালপনার গায়ে সেদিন
বেঁচে উঠবে এক মৃত ঈশ্বর।।







(২)

ঠিক শেষ শব্দটি কি বলেছিলে বেশ ?
 গীর্জার ঘণ্টার অনুরণনে ভেসে আসে প্রতিধ্বনি..
আমি ভুলে যাই আজকাল বড়,
তুমি প্রতিটি ডেসিবেলের হিসেব কষে রেখেছো তো?

মলাট ছেঁড়া ধুলোর খাতা উল্টিয়ে,
প্রাগৈতিহাসিক ডাইনাসোরের
কর্কশ গোঙানি পেরিয়ে
আমরা এবার দাঁড়াবো মুখোমুখি।
আচ্ছা, আমাদের চোখ পড়তে পারবে তো
অনেকদিন আগের লিখে রাখা
সেই প্যাপিরাসের গায়ের আঁচড় ?

ভাবি জানো, দেখা হলেই হয়ত,
লাল দগদগে রক্তাক্ত মাংসের শাঁস টুকু
ঢেকে দেবার চেষ্টা করব আমরা
দুজনেই খুব সংযত অভ্যেসে..
তবু
যদি ধরো কোনো ম্যাজিকের জোরেই ছিটকে
বেরিয়ে আসে তোমার লোকানো ক্ষতমুখ
আমার এতোদিনের সঞ্জীবনী হয়ে ওঠার
তপস্যাটুকু কাজে আসবে তবে...
:
দূর্ভিক্ষের অভিশাপে বন্ধ্যা শিকড়
আর কতো জল কুড়োবে বলো তো
এই ইঁটের সংসারে ,
একবার না হয় প্রসববেদনা তুমিও অনুভব কোরো।।







(৩)

দ্রাক্ষাফলের বিষ দাঁতে কেটে সোমরস পান করো
দ্যাখো, অনন্ত আকাশও দুহাত দিয়ে ঢাকছে ক্ষত
তুমি মিথ্যেই রোজ টানেলের পর টানেল অন্ধকার খোঁজো
তোমার পাপোষের গায়ে আমার আলো লেগে আছে আজও...

তোমার দেওয়ালে যে বাঘের মুখ হাঁ করে ঘুমিয়ে পড়েছে
ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দাও,
বিড়ালের নখ ঢেকে নিশ্চিন্ত রাত আসবে নেমে
তারপর আস্তে আস্তে বুকের খাঁচা খুলে দিও
ভোরের আলো ফুটলেই
তোমার পোষা পাখিটি খুঁজে নেবে আমার ঠিকানা
এক দিগন্ত উড়ান শেষে....







(৪)

তোমার জন্য সুজাতার জ্বলন্ত উনুনে
প্রবেশ করি রোজ
পরিণত পরমান্নের জন্ম হবার আগেই
ব্যথার ফেনালো দুধ উথলে পড়ে
আমি আলগোছে অসিদ্ধ চাল মুঠোয় ভরতে গেলেই
হাত ঝলসে যায় তাপে:
তুমি সময়মতো আসবে জানি, তথাগত
তোমার অর্ধ-নিমগ্ন চোখের নীচে
ঘুমিয়ে পড়েছে আমার নারীজন্ম

তোমার সুঠাম শরীরে পুরুষের ঘাম ফুটে উঠতেই,
ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সেই অজাত ভিক্ষুক
যার শিকড়ের বৃদ্ধ জটা কামড়িয়ে ঘরে ফেরার কথা ছিল...






(৫)

আমার দক্ষিণের বারান্দায় বাস্তুদোষ পাওয়া গেছে
স্নানঘরের আয়না দিয়ে তাকালে
স্পষ্ট দেখতে পাই ওর সারা শাড়িতে আগুন

কাল শুনছি ঝড় আসবে!
খবরে বলল একটু আগেই,
আয়নার পায়ে তোমার চটি

আকাশের গা থেকে জ্বলন্ত আঁচল
গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে খসে পড়ছে বারবার
তবে কি ঈশ্বরের আজ মায়ের দুধের খিদে?

উনুনের মুখে দাঁড়িয়ে আছি ঠায় সেই কবে থেকে..
এতো গনগনে আঁচ থেকে বুকের নদী বাঁচাতে পারি যদি,
মোহনার কাছে রেখে যাবো পরজন্মের আশ্রয়..