বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ভাস্কর পাল


ভাস্কর পাল

আস্থায়ী মানচিত্র

৭ই ডিসেম্বর তোমার দেশে বৃহস্পতিবার
বার্নিং ইনডেক্স ২৯৬ ছুঁই ছুঁই
আগুনের লকলকে জিভের ছোবলে উত্তপ্ত বেথেলহেম
এদিকে শীত নামছে আমার পৃথিবীতে
লেসবন সামোস চিয়োস ছুঁয়ে
শীত পড়ছে মানুস দ্বীপে
আমি চাঁদোয়ায় আগুন লাগিয়ে
তার নীচে শুয়ে আকাশের দুরন্ত নীল দেখছি এখন
মরশুমি শীতের একএক সময় এক এক নাম
নির্ঘুম সকালের শীতের একটা নাম
ক্ষুধার্ত বিকেলের গায়ে লেগে থাকা শীতের একটা নাম
গভীর রাতের প্রবল শীতের আবার আরেকটা নাম
আসলে বর্ষা আর শীতের একটা অদ্ভুত অন্ত্যমিল আছে
সেটা টুপটাপ কুয়াশা আর বৃষ্টিফোঁটার ছন্দ
উষ্ণ শোণিতের প্রবাহে দুটোতেই আমরা নিজেদের ঢেকে ফেলি
এখন বাইরের আকাশ সূর্যহীন
খুঁজে দেখলে তার পেছনেও পেয়ে যাবে মেঘের গোপন কারসাজি
সৌম সমুদ্রের স্বরলিপির লাবন্য ছুঁয়ে যেতে যেতে
উল্লাসে উল্কারা ভেঙে পড়লেই বিদগ্ধ রাত মেতে উঠবে
কোল্যাটারাল ড্যামেজে
তবুও এগিয়ে যাওয়া
মানচিত্র নিখোঁজ
হাঁটলেই সমুদ্র সরে যায় ………
বিক্ষিপ্ত ভাবনারা তারা হয়ে ফোটে যতিচিহ্নহীন আকাশে
বালিয়াড়ির প্রান্তরে পড়ে থাকা ডাইনোসরের ফসিলেও
নীরবে কাঁদে পুরানো ইতিহাস
জাহাজ ফেরত প্রাচীন বুদ্বুদগুলো কড়িকাঠ নাড়ে বিরামহীন
আমি মানুষ আঁকি রাত আঁকি রাতের গাল ঠোঁট
একটু আড়াল আঁকি
নিজের চোখ মুছে নদীগুলোকে আরও ভরাট জলে আঁকি
রাতের পর রাত চন্দ্রবিন্দু পতনের মাপ নিতে নিতে
অন্তরের আগুন জ্বালাতে পারিনা
জানি একবার জ্বলে উঠলেই শীত চলে যাবে
অ্যামিবা সময়ের হাত ধরে নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলে পৌঁছায় এসে
ইতিহাস বলে যায় তার পরের কাহিনী
প্রতিটি নাবিকের মুখে মুখে
দুনিয়ার নানা উদ্বাস্তু দ্বীপ আর চর জুড়ে জুড়ে
গড়ে উঠবে গ্রাম
নতুন সূর্যের সুনামী ঢেউএ ভেসে ভেসে গড়ে তুলবে দেশ
আমার নূতন স্বদেশ





একজন ঈশ্বর?

দীর্ঘ নীরবতার পর আবার কথা হলো
কথা হল অসম্ভব স্বপ্নের
নক্ষত্রের রাজত্ব হারানোর ব্যাথা বুকে নিয়ে
আগলে রাখা হয়নি
হাতুড়ির তুমুল শাসন ।
শব্দের ওপারে
একজন ভণ্ড?
একজন ঈশ্বর?
একজন সহজ কোনও মানুষ?
কেবলমাত্র তামাশার জন্য
পদদলিত মাটির এদিক সেদিক শায়িত রয়েছে
রক্তপূর্ণ আমাদের সাংবিধানিক শরীরগুলো ?
তাদের কাফন রক্তাক্ত ও ঠোঁটগুলো সিক্ত
রক্তকোষ চুম্বনরত ঠোঁটগুলো কখনো কখনো
অনুভব করে কর্তব্যরত সাম্য অস্ত্রের দীপ্তি
অনুভব করে প্রগলভ শোণিতের বিচ্ছুরিত উষ্ণতা
ক্ষরণের সময় কুশলী পেশিগুলোর  অনিয়ন্ত্রিত নিষ্পেষণে ।
আস্থা, যা মুছে দিতে পারতো আমার তোমার অতীতের সমস্ত দুঃখ
এবং তোমাকে মুক্তি দিতে পারতো সেই বন্দীত্ব থেকে
যার নাম দেয়া হয়েছে ধর্মপ্রেম
ভালোবাসতে সক্ষম তোমার সেই হৃদয়ের সন্দেহপ্রবণ বিশ্বাস থেকে
এবং পৃথক করতে পারতো অস্পষ্ট ধর্ম থেকে তোমার সগৌরব প্রত্যাহার
পৃথক করতে পারতো সেই কপট দৈব নির্দেশ আর
সেই ভেক রূপী ঈশ্বরদের দেহ সভ্যতা
আজও সমীকরণের দিকে চোখ, চেয়ে আছি
সভ্যতা তাকিয়ে আছে তার অন্তর্গত ক্ষয়
আর প্রশংসিত পচনের দিকে






কাঁচের দেওয়াল

আমি ঈশ্বর দেখিনি
সম্ভবত তিনিও আমাদেরও দেখেন না
কাদাজলে পা ডুবিয়ে নতজানু হয়ে
যখন তারা রোপণ করে
স্বেদ আর ধান
তার নির্মম রোদের কষাঘাতে
ঐশ্বরিক ভালোবাসা দেখি না ।

তুমিও ঈশ্বর হতে পারো
পালনহার শব্দটা বড়ই বেমানান
আগাপাশতলা সমাজতন্ত্র গন্ধে মোড়া
তুমি দন্ডমুন্ডের কর্তা ভাবতে পারো
ফুলের স্তবকে স্তবকে স্তাবকে মোড়া
তোমার সামিয়ানা

তোমার অঙ্গুলিহেলনে চাকা থেমে যায়
পিঠ পেট শরীর ভরে যায়
কালসিটে উল্কিতে
আমি থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে মূর্চ্ছা যাই
আমি মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠি

তুমি কে ?
ঈশ্বর , চুপিসারে কতটা আমার  ভেতরে পেতেছে সংসার ?
যে স্বচ্ছ কাঁচের দেওয়াল তোমাকে ঘিরে
আজও পারিনি ভাঙতে





ডিগবাজি

আমার আশপাশ দিয়ে ঘন্টায় 74 কিলোমিটার বেগে
উড়ে যাচ্ছে ডিজিটাল ঝড়
কব্জিতে বাঁধা ঘড়ির কাঁটা দেখে হাঁক পারে হিসেবি মানুষ
এমন আর কত দিন চলবে ?
গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে মিড ডে মিলের
খিচুড়ি খেলাম পুরো এক মাস
কলকারখানা গুলো বন্ধ অনেক অনেক কাল
সারাটা ভারত জুড়ে এখন অভিন্ন কর নীতি
হাতুড়ির তুমুল শব্দ অট্টহাসি তোলে কামারের ঘরে
লাল জোনাকির মত উড়ে যাওয়া আগুনের ফুল
প্রতি রাতে জমাট বাঁধা রক্ত হয়ে ভেজায় ফুটপাত
ফ্রি wi-fi কলকাতা এখন শিখে গেছে
হাতে মোমবাতি নিয়ে হেঁটে হেঁটে
সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি ভোরে তোলাই কলরব
একটা দুটো ডিগবাজি , ভোলবদল
দুটো বক্তৃতা দারভাঙ্গা মঞ্চে কিংবা অবনী সভাগৃহে
আমিও মনীষী হয়ে যাই
কড়কড়ে ধুতি পাঞ্জাবি পরে বাঙালিয়ানার মুড়ে
সংস্কৃতির জোয়ারে ভেসে পরের লক্ষ্য নির্বাচন






ভাগ্যনিয়ন্তা

যারা মাটি কাটে তাদের করতল বড় শক্ত
কোদালের হাতলে লেপটে থাকে তাদের ভাগ্যরেখা
কাদা জলে হাত ধুয়ে মেলে ধরলে
দুই হাত জুড়ে ধু ধু করে মরুভুমি ।
অথচ , ঠিক তার নিচে সারা শরীর জুড়ে
আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে
টকটকে লাল ফল্গুধারা
টগবগ করে ফুটছে
ছড়িয়ে পড়ছে মাথা থেকে পা অবধি
প্রতিটি শ্রমআন্দোলনে ।
যারা শাসন করে , হাতে ধরে থাকে বেয়নেট
তার ভাগ্য ধার নিয়েছে
ভাগ্যনিয়ন্তা
তাই, যান্তবের মত প্রতিটা সিগন্যালে
শিরদাঁড়া জুড়ে স্ফুলিঙ্গ তোলে বাইনারী কোড
আন্দোলিত হয় স্পন্দনহীন রনসাজে।
যারা দাগ কাটে কাগজে , সাত রঙ দিয়ে
কখনও আঁকে আকাশ সূর্য বা ঘর
আঁকিবুঁকি কাটে হাত জুড়ে
দাড়ি কমার ভেতর থেকে তুলে আনে গুপ্ত সংকেত
তাদের ভাগ্যও  সমাহিত
দিকচক্রবালে
রোদে জ্বলে ছায়ায় বসলে
আড় চোখে তাকায় ঈশ্বর
জনাকীর্ণ ঘন অরণ্যে পথ বেছে নইলে গড়ে নিতে হয়
চুলোয় যাক যত নকল বুদ্ধিজীবী
আর একরোখা একটি কপট জার
লজ্জা না পেয়ে
বরং চোখে ঠুলি এঁটে থাকি আর বিজ্ঞাপনে ভরাই
কাগজ ব্যানার রাস্তার এখান সেখান ।






ক্রমাগত

যেদিন মানুষের আদর খেতে পাথরের নুড়ি
অধিকার করে রুপোর সিংহাসন
আমরা নতুন করে হারিয়ে ফেলি নিজেদের।
চারিদিকে এত উৎসবের ভিড়
তবুও আমরা পারিনা আমাদের নিজের মৃত্যু উৎসবে
যোগ দিতে
যদিও শত উৎসব আতিশয্যে আপ্লুত আমার অস্থিমজ্জা
আজকাল আমি হীন অবয়বকে কেমন নপুংশক মনে হয়
সকালের ভেসলিন লাগানো ত্বক
জলজ মাংসের ভেতর প্রলম্বিত শয়নে
এলোমেলো আমার ২০৬ খানা হাড়
নির্বোধ রক্তপূর্ণ মেধাবী মাথার খুলি, খুঁজে চলেছে
ক্রোমোজমের সিঁড়ি ধরে অলৌকিক দেবতাদের কারখানা
এই বৈজ্ঞানিক মিডিয়ার যুগে গেয়ে চলেছে বর্ণাশ্রমের গান ।
পাশে রাস্তায় একজন আর একজনকে মারছে, তাকে
 প্রশ্ন কোরও না , মারলে ব্যথা লাগে কি না ?
অর্ধক্লিষ্ট জীবনের দুর্দশা দেখে জেগে থাকে উদ্বাস্তু রাত
 প্রশ্ন কোরও না, নগ্ন মানুষ কেন একা কাঁপছে হিম বিছানায় ।
এসো আমরা ফিরে যাই আদিম গুহায়
আবারো নুড়িকে নুড়ি দিয়ে মেরে জ্বালাই আগুন ।