মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল


লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

সুর

সুর খুঁজছি হৃদয়ের শব্দ থেকে। তাই চুপচাপ চোখ বন্ধ
নিজেরই তৃতীয় নয়নের দিকে তাকিয়ে আছি । সেখানে
আগুনের শিখাগুলি নীল থেকে ক্রমশ সাদা হয়ে যাচ্ছে ;
কয়েকটা বক উড়ে যাচ্ছে রৌদ্রে, আমি হাত পেতে ধরতে
চাই তারই ছায়া
নিচে জল টলমল,  ছায়ার আঘাতে কেঁপে কেঁপে উঠছে
পথ, হঠাৎই বাউল : আমার পূর্বপুরুষের একতারা এগিয়ে
যাচ্ছে  শিরায় শিরায় --
               


 




আগুন

আগুনের নাম খুঁজতে থাকি। শরীরের যত জ্বর একসাথে
গুচ্ছ করে বাঁধি ফুলের মত ; পথের বাঁকে বসিয়ে দেই
আশ্রমে আশ্রমে  -  শুরু হয় মন্ত্রোচ্চারণ ।
দুর্যোধনেরর শত শত সহোদর ঝোড় পোকার মত পুড়তে
থাকে হোমাগ্নিতে । সেই আকাশ শান্ত নীল, তবুও  - 
মাটি ফেটে চৌচির  ; মায়ের শরীর জুড়ায় না -  সে মঙ্গল চায়,
সন্তানের  মঙ্গল 
সমস্ত শেওলা চেঁছে একঝাঁক মমতা ছড়িয়ে দেন মাটিতে
আমি পৌঁছে যাই  আমার জন্মের কাছে

               







জ্ঞান

পায়ের শব্দ দিয়ে সে চলে যায় শুধু মোরামের কর্কশ স্পর্শ
ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না -  খালের জলে পা ডুবাতে
গেলে অনেক নিচে নামতে হয়, এই সজ্ঞানে আমি আকাশের
দিকে তাকাতেই  - অন্ধকারে ডুবে থাকা কালো অশ্বত্থ পাতা
নড়ে উঠে  ; আমি আমার নিঃশ্বাসের সাথে হাত মেলাই
অপেক্ষা করি উত্তমের ফিরে আসার সময়টুকু - 
আমি একা আর কৃষ্ণপক্ষ । মাঝে কোন দূরত্ব নেই । ঝোপ
থেকে আমাকে ঘিরে ধরে হেনাফুলের সাহস  









পাপ

আমার মৃতদেহ শুয়ে আছে কেলেঘাই নদীর চরে। আমি
তখন বাইশ  -  সমস্ত লোমকূপ দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে নোনা জল
ক্রমশ জারিত হতে হতে তাকিয়ে আছি সূর্যমুখীর উপর
বসে থাকা প্রজাপতির দিকে, সেও আমার দিকে -
চলে যাচ্ছে  বুদ্ধপূর্নিমার রাত্রি  ;  প্রজাপতির ডানা ভিজিয়ে
দিচ্ছে শিশির  - এত জানাশোনা পৃথিবীতে কেউ নেই -
সাঁকোটা নির্লিপ্ত মায়ায় ধ্বংস স্তুপ আর কিছু উড়োপালক  -
অন্ধত্বের সমবেদনায় জমাট মেঘগুলি পালিয়ে যাচ্ছে  দেশান্তরে ।









আলো

আধপোড়া কয়লাগুলো এলোমেলো শশ্মান সুন্দর,
কলঙ্কের এত রূপ মাটি তা বুঝিয়ে দেয়,  নদী ভাসিয়ে নেয়
জীবন, তৃষ্ণাময় চতু্র্দিক আচ্ছন্ন কুয়াশার বসবাসগুলি
মাটি খুঁড়ে চলছে,  তাপ বাড়ছে চুল্লির দিকে
আগুন পুড়ছে আগুনে
ছাই হয়ে যাওয়া গাছের শিকড়ে সূর্য ডুবতে ডুবতে
চাঁদ বিল পেরিয়ে যায়, অপেক্ষা বাড়ে, আর বিছানার
চারপাশে অথৈ পৃথিবী

কয়লার সাথে ভাবতে ভাবতে কয়েকটা রঙমশাল 
গা ধুইয়ে দেয় বাতাসের , নিঃশ্বাসের গতি বাড়ে  - সেই
ছটপটানির ভিতর গায়ের গামছা উড়িয়ে দিগন্তের কৃষ্ণরাগে
সন্ধ্যারতির সহ্য  শক্তি বাড়িয়ে নিই  -