মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

গৌতম কুমার গুপ্ত



গৌতম কুমার গুপ্ত

আমার পৃথিবী

প্রতিদিনের নির্বাসনে আজ ও কাল
প্রত্যহ পরশু ও আগামী
সচল বাতাসে নির্জন দোলে
নগরে অবশেষ কোলাহলে
                                       নাগরিক চাঁদ ওঠে

স্রোতজলে সবিশেষ নৌকাগুলি
                                     প্রবল ভেসে যায়
মুখোমুখি বসে থাকি পিপাসায়
গেলাসের বিশুদ্ধ ঠোঁটে

শেষ কবে উঠেছিল দ্বিতীয়ার চাঁদ
নধর আকাশে
মনে নেই স্মরণিকা গান
এত যে আলো খাই
ভুলি কই পরমান্ন ক্ষুধার প্রবৃত্তি

জাগরূক এই সমৃদ্ধ হাওয়া
পাখিদের কথাকলি বিনীত উড়ান
ছুঁয়ে থাকে ওষ্ঠজাত চুম্বনের ভাষা
ছায়া এঁকে রোদ্দুর ডুবে যায় নিরুদ্দেশে

আবার ঘুম পায় জেগে উঠি
মানুষের পাশে অহরহ ব্যবহারে ফিরি

চলাচলে রোজ রোজ আমার পৃথিবী






ব্রা ত্য জ ন

লাগাতে পারে কিনা চেষ্টা করেছিল,
অব্যর্থ নিশানায়
সেখানে একলব্য নয় অর্জুন জানে
দ্রৌপদীয় পদ্মগন্ধা নারীর নিভৃতি মহাসঙ্গ।

একলব্য দলিত দাসানুদাস
                                   প্রতিবন্ধী যোদ্ধা,
পাবে না তরবারি  অধিকার হবে না প্রয়োগ
শুধু শিক্ষায় মহান হলে ব্রাত্য চিরকাল,
আর এককোণে পড়ে থেকে উচ্চারণ হবে।

ছিল,কেউ ছিল।

দূরে ভেসে যায় অধীত মহাকাব্য
এখানে এখনও পড়ে থাকে কেউ কেউ
কাৎ হয়ে একাধারে খড়ের পাদদেশে।

মহামান্য পূজিত হলে মূর্তি শুধু ভেসে যায়
অগাধ সাঁতার জলে।






পরকীয়া

বলেছি কতোবার লাগিয়ো না চাঁদ
চোখে লেগে যাবে রাতের সন্ধ্যা
নাবালক তারারা অবুঝ হাসবে

এইমাত্র জ্যোৎস্না ফুটলে
সবুজ হবে পোশাকের ভাষা
বুকে আঁকা দ্বীপজমি ত্বকের চিত্রকলা
হেঁটে যাবে ছায়াছবি গান

লিখি তবে পত্রলেখা ভাসমান অক্ষরে
প্রিয়তমা চাঁদের পরকীয়া
চন্দ্রোদয়ে রূপশালী চোখের বিভাস
নেমে আসে জলের অক্ষরে

আকুতি কান্না দয়িত ম্রিয়মান
বলেছি কতোবার লাগিয়ো না চাঁদ
দয়িতা চেয়ে থাকে এসো চাঁদ






ঘু ম

লেনিনগ্রাদ থেকে যে পর্য্যটক চাঁদটি
গাঢ় আলো নিয়ে ভেসে এলো পুকুরপাড়ে
তাকে চিনলাম।

বিদেশিনী রাত প্রিজম দিচ্ছে
আমাদের গয়লা পাড়ার ডিহিতে।
আমি তখন ফিলাডেলফিয়ার মধ্য গগনের কথা ভাবছিলাম।

দূরে কারাকোরাম হিমালয় পর্বতশ্রেণী আর
আন্দিজ পর্বতমালার চুম্বিত মাটির শ্বাসরঞ্জন
আমাদের বাঁধের দক্ষিন টিলার সমগোত্রীয়।

আমি দেখলাম দৃশ্যে ভরে গেছে
স্বদেশের ড্রয়িংরুম। টেবিল ক্লথে নীল সূতোর কাশফুল।
দেয়ালে শোভিত মাক্সিম গোর্কি, 
মাও জে দঙ রবীন্দ্রনাথ শক্তি চাটুয্যে।

প্রাতরাশ থেকে মধ্যযামের খাদ্য তালিকায়
আমাদের স্বভুক্ত সরষে পাঁচফোঁড়নের নবরত্ন 
সুগন্ধ।পোশাকের আভাসে মিশরীয়
কটনের তাঁতকল্প চারুচিত্র।
আমার গর্ব দেশজ মৌ পিয়ার কলভাষ প্রেমের।

শুধু চিঠির অক্ষরে আজ আমার প্রাচীন রোমের
ঘুম।নিরোর বেহালায় তাল ঠুকছে আর পুড়ে যাচ্ছে নগর।

ভ্রূক্ষেপ নেই।





অসংখ্য

অসংখ্য ভূগোলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি
এবং নিষ্ঠুর অসংখ্য বৃষ্টি।
এই সূর্য্য এই চাঁদ এই তারা এই জলোচ্ছ্বাস
এই বাতাস চড়ুই বাবুই পরিযায়ী পাখিদের গান
টিলা ও উপত্যকা নদনদী অসংখ্য বন
এই উদ্ভিদের সংসার
এই অসংখ্য জাতি প্রজাতি মাটির দোঁয়াশ।

অসংখ্য ইতিহাসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি
এবং নিষ্ঠুর অসংখ্য রক্তপাত।
পুঁথি ও পত্তর তত্ত্ব জ্ঞানের মধ্য দিয়ে
দেখি কোন এক প্রগাঢ় আলোলিকায়
শুধু একটি বিষুবরেখার পাশে দাঁড়িয়ে আছো তুমি
অসংখ্য তোমার মাঝে অনন্য তুমি।

অথচ
তোমার নিঃশ্বাসের কাছে খুব কাছে দাঁড়িয়ে
কর্কট রেখায় আক্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি
তোমার ভীষণ বিপ্রতীপে
এই অসংখ্য শীত ও বৃষ্টির মাঝখানে
অসংখ্য আমি অসংখ্য তুমি
এই অসংখ্য স্বদেশ অসংখ্য সন্তান সন্ততি
প্রিয় ভূগোল ইতিহাসের মাঝখানে।

প্রভূত অসংখ্যের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা।