বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

জয়ন্তী কর্মকার




জয়ন্তী কর্মকার

অমোঘ শক্তি

চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা এত মানুষের গভীর
পতন থেকে উত্থান,
আমি কুড়িয়ে নিই টুপটুপ করে।
ভরতে থাকি, আমার ভেতরের খালি থাকা
ভীতু থলিটায়,
জমা করি শক্তি।
বোঝা হাল্কা করে বুঝতে চাই, ভারী জীবনে
হাল্কা থাকার মানে।
আঙুলের রামধনুকে বিদায় দিয়েছি
মনের তেজকে জ্বালিয়ে।
ভেঙে পড়া ম‌ই সিঁড়িটাকে বেঁধে
ঠেকিয়ে রেখেছি আকাশে ,
যেখানে কলুঙ্গিতে সারি সারি সাজিয়ে রেখেছি
স্বপ্নদের।
ভেঙে পড়া স্বপ্নদের,
হেরে যাওয়া স্বপ্নদের,
পড়ে যাওয়া স্বপ্নদের আর
বেঁচে ওঠার স্বপ্নদের।
নড়বড়ে পা ম‌ই সিঁড়িতে ভর ক'রে উঠে যাবে
যেইদিন আকাশে
স্বপ্নরা সেইদিন তাদের ঠিকানা বদলে
আকাশকে ছুঁয়ে
পদার্পন করবে এই পৃথিবীতে।।




জাতিয়ানা

তুমি রাজনীতি কর?
অথবা তাবেদারী?
তবে কি অন্যের ঘর ভাঙায়
লেলিয়েছো নর-নারী!
তুমি পড়তে জানো?
বানান লিখতে?
তসমিনা, সাবানা বা লিনা!
হাতেখড়িতে লিখেছিলে কোন শব্দ
    না আরবিয়ানা?
তুমি প্রসাদ খাও?
পুজোর প্রসাদ!
ইদের বিরিয়ানি?
দুটোয় যখন উদরস্থ
তবে জাতে কেন কে আশীষ আর কে আজাদ?
তোমার রক্ত কি?
গাড় নাকি ফ্যাকাশে?
,বি নাকি শূন্য ?
কোন যন্ত্র মাপ করে দেয়
কোন জাত কোন রক্তে মেশে?
তুমি মাজার যাও?
মন্দির , আর ডিসেম্বরে চার্চ !
তবে শিখ বাবার জন্মদিনে
ফ্রিতে প্রসাদটা কেন নাও?
নাথুলা গিয়েছ?
কাশ্মীর? বা.....
অমৃতসর !!!!
কোনটা ভালো!
কোন জাত বেশি ওখানে?
চোখে পড়েছে?
মনে ধরেছে কেউ?
সব শেষে বৈষ্ণোদেবি!
জাতের মা জাতের বাবা
তবে জাতের ঠাকুর বিচার পাবে না
এ কেমন মানুষের ঢেউ॥
                                    



অলীক প্রদেশ

দুটো আ়ঁকিবুকি আ়ঁকি বরং
দুটো জলতরঙ্গ বয়ে যাক
দু'চোখের দুই  দ়ৃষ্টিকোণ মাপুক
যে নদীর অন্তরাল পুড়ে খাক ।
দুটো চাঁদহীন আকাশ গড়ি
দুটো তারা হোক ধুমকেতু
একটা সূর্য খসে পড়ুক
যে গ্রাম ধ্বংস হয়েছে অন্ধকারের হেতু।
দুটো জলহীন ব-দ়্বীপ বানায়
দুটো মরুভূমি হোক সবুজ
একটা কাঠের প্রাসাদ হোক
যে প্রদেশে বন্দ়ুক -তলোয়ার সব বোবা
শুধু ভালোবাসা হবে অবুঝ॥





পদ্যের ছায়াছবি

গদ্য লিখিনি বহুদিন
যবে থেকে রাঙা ব‌উ চলে গেছে
এলোমেলো বাক্যরা আজ পাগল
শব্দ ওদের ঠকিয়েছে ।
তুই কি জানিস কথার ওপর কথা বসে
দমবন্ধ হয়েছিল যেই পদ্যটার,
গত পরশু প্রাইজ পেয়েছে সে
অমিত বাবুর নতুন ব‌ইয়ে স্থান পেয়ে
 নাম বদল হয়েছে ওই প্রবন্ধটার।
তিস্তা পিসির উপন্যাসে
মাঝ প্যারাতেই ছন্দ কাটে
দাদুর যেইদিন মৃত্যু হল
ওই ঘটনাই ঘোরে গল্পের তল্লাটে।
বিশু কাকু পদ্য লেখে
জোয়ার-ভাটায় জীবন ডোবার
মিনিও এখন জেনে গেছে
কোন পতাকা কোন নেতার।
কবিতাগুলো বড্ড কাঁদে
ছেঁড়াপাতা কাঁদায় আজকাল
গল্প খুড়ো ভুলেই গেছে
শেষ পূর্ণিমায় কি গল্প ছিল তার।
গত রাতে ছায়া পড়েনি জানালায়
একটা কবিতাও শেষ হয়নি
তখন‌ও আকাশে পূর্ণিমার চিহ্ন জ্বলজ্বল
রাঙা ব‌উ আর ফিরে আসেনি।





বহমান

জীবন আঁতাতের ঘা থাকে না
বয়ে যায় খরস্রোতে ,
যে মাটি শুকিয়েছে দু'দিনের
বৃষ্টিহীন আকাশকে দেখে
সে জানে গর্ভে লালিত সোনালি বীজকে
আঁকড়ে ধরার মানে।
যে নদী খরস্রোতা
আবর্জনা রাখে না বুকে ধরে
তার ভিতরে গিয়ে তলিয়ে দেখো
পলির বুকে জমা পড়েনি যে পাথর
তার বয়ে যাওয়া নিয়তিকে সে জানে।
খাঁ খাঁ  করা ধূ ধূ মাঠ
আর ফাঁকা হওয়া রাতের আকাশ
বুক চিরে তারা খসার গল্প শোনায়,
মাঝ বুকেতে জমে থাকা
হাজার তারার আর্তনাদ
সেই তো মুখ লুকিয়ে মাঠের বুকেই কাঁদে॥