বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

সবর্না চট্টোপাধ্যায়



     সবর্না চট্টোপাধ্যায়

আমি ধ্বংস হলে..

আমি ধ্বংস হলেও,
জ্যোৎস্নায় তখনও তাজমহল 
নিরুত্তাপ এক ডাহুক ফিরবে সন্ধ্যায়,
এভারেস্ট ছুঁয়ে যাবে হিম বাতাসিয়া মেঘ
তবুও তো মন কেমন হয়..

আমি ধ্বংস হলেও জানি থামবে না এ হিংসা
মরবে তখনও হাজার হাজার সেনা
পুড়বে মানুষ কুশপুতুলের ছাই
দেশভক্তির পাখিপড়া উপকথা

আমি ধ্বংস হলেও বদলাবে না রং
আঁতকে ওঠবে না রক্ত মাখা কেউ
শান্তি হারাবে পৃথিবীর সব দিশা
স্বার্থপরের থাকবেনা জিজ্ঞাসা।

বসন্ত আসবে ঠিক,যেমনটি আসে
ফুটবে গোলাপ গোটা বাগদাদ জুড়ে
কাশ্মীরে তখনও জ্বলবে সেনা শিবির
দেশের মাটিও রক্তিম!অস্থির....






স্বপ্ন নিয়ে..কিছু কথা (২)

বুকের ওপর ওল্টানো পাতায়, সৌকান্তেয় চাঁদ। পূর্ণিমা ভাসে অন্দর থেকে মহলে। ঝলসে যায় মরণদশাও।

বহুদূরে, স্তম্ভিত জীবন উঁকিঝু্ঁকি দেয় চাঁদের ফাটল থেকে। জ্যোৎস্না পুড়িয়ে দেয় মসৃণ সুখ।  সারা শরীর জুড়ে দগদগে ফোস্কাগুলো চিড়ে সারে সারে গজিয়ে ওঠা কঙ্কাল হাত, গলা টিপে ধরে খিদের জ্বালায়।

কত খিদে ছড়িয়ে আছে আকাশের নগ্ন শরীরে। ঘাসগুলো মরে গিয়ে থেকে গজিয়েছে মাটিমাখা হাত । পাথরের ফাঁকে ফার্ণের পাতার মত গুটিয়ে শরীর...

এখন চারদিকে শুধু ঘন হয়ে আসা হাতের ঝোঁপ। বাতাস ঝিম হয়ে আসে রুটির গরম ভাপে ।

তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ হতে হতে খরা নেমে আসে শরীরের কণায় কণায়। খিদের আগুনে গনগনে নাড়ি।

হাতগুলো জ্বলে ওঠে।  হিম হয়ে আসা শরীরে নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে ক্রমশ ডুবে যায় চাঁদ অন্ধকার সাগরে। আমিও দুহাত ছড়ানো নামগোত্রহীন এক অনাহারী লাশ মাত্র…..







কতটা ভালোবাসি তোমায়..

আমার তোমার সম্পর্কটা  খানিক কানামাছি খেলার মত....

এই আঠাশটা বছরে একবারও বলিনি, ঠিক কতটা ভালোবাসি।অথচ চোখবুঝলেই কি অনায়াসে টের পাই হাওয়ার চলাচল।
             জলের মত খুলে দাও সমস্ত যন্ত্রণার গিঁট।
শত কাজের পাহাড় ডিঙিয়েও কি সহজেই বুকে টেনে নাও,  জুড়িয়ে যাই মৃদু আস্কারায়।
            ক্লান্তির ঝরণায় ভেজা ঐ শরীরে একটা গভীর সুড়ঙ্গ দেখি। বুকে মাথা রাখলে নিঃশ্বাসের গান আসে। চুপিসারে, রেখে আসি দিনের গোপন ফিসফাস।
              আঙুলগুলো চুলের এদিক থেকে ওদিকে...ঠিক হাওয়ার মতন। সারাদিনের জমানো ব্যথা টেনে নেয় স্বচ্ছল আনন্দে।
         অথচ বিশ্বাস করো,একদিনও বলতে পারিনি তোমায়, ঠিক কতটা ভালোবাসি!
  
নোনতা আঁচলের তেলঝাল ছাড়িয়ে পিঠ জোড়া  স্নানজল যেন মিঠে আতর। কেমন পুজোপুজো গন্ধ ছড়িয়ে লুটিয়ে দাও ঘরের সব কোণে। মখমলে গলায় বেজে ওঠে পরম সমর্পণের শ্লোক।
                   সবকিছুই এঁকে রাখি নিখুঁত ক্যানভাসে। চোখ বুঝলেই আমি আজও তোমার ছোট্ট 'খুকু' হয়ে বোঁটা থেকে টেনে নিই সমস্ত আদর।

তবুও কেন যেন বলতে পারিনি আজও, ঠিক কতটা ভালোবাসি তোমায়...।







এক একটা দিন


একএকটাদিন পথপেরিয়ে অনেকদূর
রোদ ঝলমল প্যাচপেচে ঘাম সমস্তই
বৃষ্টি হলে একটাদুটো ব্যাঙের ডাক
ঝলসে ওঠে আজও কেমন শিমুলপুর।

শিমুলশিমুল লালথোকাফুল আমার ঘর
ঘরের ওপর হাজার হাজার মেঘের ঘর
বাঁক নিয়েছে বিলের ধারে তেপান্তর
কোথায় কেকোন ছড়িয়ে আছিস? হাজির কর।

ব্যস্ত শহর চটপটে ঘুম এখনকার
মুখ খোলাটাই ভীষন রকম অদরকার
হাল্কা হাওয়ায় মন ভাসাতে গড়েরমাঠ
সপ্তাশেষে বাদামবিলাস। নে চটপট...

কোথায় আমার ঘরবাড়িগ্রাম শিমুলপুর?
সময় কোথায় ভাবব নিয়ে আমারগ্রাম?
উড়ালপুলে ছুটছে হাওয়া দুরন্ত
একএকটাদিন পথচলেযায় অনন্ত







তুমি আমি

একমুঠো ঝুরো বরফ গলে যায়
মধ্যমার ফাঁক দিয়ে
তর্জনীতে তখনও তোমার লেগে থাকার
হালকা আভাস।
আলতো টোকায় শিশির পড়বে তরাই এর ঘাসজমিতে,
পাইনের পাতায় চুঁইয়ে বৃষ্টি নামবে আধঘুম চোখে।
কত রাত জাগে তারা,জোনাকীর আলো,
আমারই মত।
গ্রীষ্ম পেড়িয়ে শীত ঝরে পড়ে ছাঙ্গু লেকের জলে।
তবুও
ঝুরো বরফে তখনও লেখা
তুমি-আমি!