মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

অদিতি চক্রবর্তী



স্মৃতিকথা   
অদিতি চক্রবর্তী

চল্ স্মৃতি তোকে শব্দঋণী করি
মাটির জলে আকাশ ছেঁকে তুলি
রুমালে,কাঁথায়,বালিশে,সবখানে
টুকরো টুকরো সাজাই, ভাঙি,খুলি।
আমার এখন লম্বা ছুটির দিন
চোখের কোনে শুকিয়ে জলের দাগ
গিলতে গিলতে ভুলেছি চিবিয়ে খাওয়া
বুকের খাঁচায় পোষমানা শেষনাগ।
সাপুড়ে বাঁশিটা কার ঠোঁট ছুঁয়ে বাজে?
সাপুড়ে বাঁশির সর্বগ্রাসী ধারা
সাপুড়ের বাঁশি ঘাতক উপাখ্যানে
মরণ ডেকেছে বিশ-এ দিতেই পাড়া।
সহবাস ছিলো মাত্র একটি বছর
লোফালুফি খেলা বাথরুম, আলনা
মরশুমি ঘ্রাণে আঁচলে কুচির টান
অথচ সেদিন যুধিষ্ঠির তো ছিলোনা।
অঙ্ক যেভাবে না মিলে ঘামের মেলা
শিউলি যেভাবে গোধূলিতে ডাকে বেলা
শিশির যেভাবে পাতাতে মুক্ত খেলা
স্মৃতিপথ ভাঙে সেই পথে কাদাজলা।
সময় হারিয়ে নিঃস্ব সমসাময়িক
সময় এখন দর বুঝে ফেলে কড়ি
জল হয়ে আছে তোর ভালবাসা আজ
ভালোবাসা আজ বুনছে স্মৃতির ঘরই।







বৃহন্নলা স্বপ্নসুখ
অদিতি চক্রবর্তী

যে পুরুষ হররোজ রাতঘুম বায়নায় ফেরে  
স্বপ্নে কাটাব রাত আজ তার সাথে ।  
চৌকি পেতে বসেছি সমাপ্ত শয্যায়
সহস্র শিমূল আর পলাশ ভাষায়  
পরিণত মেঘে বড় বেশি খয়াটে আস্বাদ  
আনাড়ি রোদ কুড়াতে বাড়িয়েছি যেই হাত -
সেই স্বাধীনে কি ভীষণ ছায়া অপবাদ !  
সত্তাহীন জেগে থাকি হ্যাঁচকা প্রহর
হয়তো চাঁদ নেই হয়তো মৃত্যুগন্ধে ফেরারি চক্কর
তবু এইখানে অপরূপ জোছনারা  
সামাণ্য উষ্ণতা মোড়া ফিসফাস  
আলগা চাওয়ার ঘেরে ফ্যাকাশে ইজেলে  
ভালবাসা ছুঁয়ে নামে ইহকাল
যে মেয়েটি বৃষ্টি আর আঙুল আয়োজনে বৃষ্টি ছিল যার  
ছায়ার আলসে নিরিবিলি শেষঘুমে  
বৃহন্নলা স্বপ্নসুখে আজ সে একা বা একাকার ।







লালটিপ
অদিতি চক্রবর্তী

এতো বড়ো লাল টিপ পরিনি কখনো
সওয়াতে পারিনা তাই।
স্নানঘর খেলিয়েছি সবটা কপালে
যাতে করে বিনা কসরতে  
পোড়ো বাড়িটায় ঢুকে যাই।
নূপুর পরিনি, পাছে সময় হাঁটতে থাকে সাথে
পৃথিবীর বহু মেয়ে ঝুমঝুম বেজে গেছে
প্রতিটি অন্তরঙ্গতম রাতে।?
দুলুনি ভঙ্গিমায় ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে রাখা অনামিকা'টায়
(যার সুখে জটিলতা ক্রমাগত কামড় বসায়)
এতোবড়ো আংটিটা কখনো পরিনি
ঘুম ভেঙে মনে হয় যদি গরবিনী!
দু'হাতের কবজিতে চুড়িরাও করেনি উৎসব
আওতার দোষে নিটোল জামিতি থেকে টান মেরে
সরিয়েছি বৃত্তের পরব।
সাক্ষ্য দেবেনা তাই ঝুমকো দুলের জোড়া
আঁধারে মুখ গুঁজে সিন্দুকেই
খোঁপা খোলা চুলে অবিকল্প জ্বলে কবেই--
নাকফুল হারিয়েছি অভ্যাস দোষে!
এতোবড়ো লালটিপ মানায়না
কাজলের কালি দাগি সাদাথানে দিনান্তে একঠায় বসে।







চালতাবাগান
অদিতি চক্রবর্তী
*********************************
তোমার চিবুক ছুঁয়ে উঠে গেলে চালতাবাগান
জানলে না বাগানের মালিকানা কার?
কতখানি ভরসার জন্মপ্রমান।
শুধু মানো আঁশবটি, টুকরো খোসার কারিগরি,
আঙুলের চটপটি চাকুম চুকুম
গাঢ় রংএ বসালেই দাঁত
ফাল্গুনী সুরে বাজে শ্রাবণীর ঘুম
শিল্প শেখালে প্রেম, শিল্পী মাতাল
অরণ্যের অপাপ অলীক অবধি
তবুও হেঁদিয়ে মরো এ ডাল ও ডাল?
অক্লেশে ব্যয় করো লম্বা সময়
পোকা বেছে, খুঁটে,চেটে, তালুর মাপে
যুতসই হলে তবে জোটে বরাভয়।
তবুও কি সুখী বলো চালতাবাগান?
বাগিচা সাজিয়ে তাতে একে একে দান
চার, ছক্কা, পুঁট,মই,সিঁড়ি----
লুকিয়ে গুঁমরে কাঁদে নীল খেয়ে লাল মৃত্যুপুরী।
তোমার চিবুক ছুঁয়ে চালতাবাগান
হৈ হৈ রক্তের চৈ চৈ কুমারী ভার্সান ।







আলো
অদিতি চক্রবর্তী

হাত ধুয়ে এলি আলো?
তুই আজ কী ভীষণ অন্যরকম!
কি যে ভালোলাগে তোকে -
বচ্ছরকার ঠিক এই দিন
ঝুলকালি মাজাঘষা মুখখানি মায়াবী রঙিন।
তোকেই চেয়েছি আলো
সুখের কথাই কেবল লিখিস ক্যালেণ্ডার
মুঠোর ধুলো, কাজললতার কালি
বাতিল সময়টুকুর ফেলে আসা সাল-ই
কেটেকুটে মুছে দিস্ আলোর আঁধার।
যেসব শাড়ি, জামারা হা-মুখো থাকে
সেই সব পথঘাট দিনেও রাতের চাদর মুড়ি
খেইহারা হলুদ পাতারা ফরফর কানাগলি বাঁকে
ভালোবাসা দিস্ আলো
তাদের সকলেই আমারই মায়ের ইচ্ছেসোনা

মুখপুড়ি এলি যদি,দশদিকে ছড়াতে পারছিসনা ?