মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

মামনি দত্ত




অবুঝ বিষণ্ণতা
মামনি দত্ত
-----------------
তুমি ভুলে থাকো আগামী পথের দিকে তাকিয়ে।
প্রতিদিন শূন্য ঘরে আমি কুড়িয়ে রাখি
আমাদের অস্ফুট কথা...
নরম ঠোঁটের উষ্ণতা...
নীরব চোখের ভাষায় সম্মতি। সেদিন ছড়িয়েছিল লালমাটি উত্তাপ
আর বৃষ্টি হয়ে ঝরেছিলাম তোমার তৃষ্ণালু বুকে।
তারপর কতদিন বদলেছে ক্যালেন্ডার।
ছুঁয়ে দেখিনি তোমার প্রলাপী ঠোঁটের মায়াময় অক্ষর...
এপ্রিল হাওয়ায় মহুলের নেশা গান
শিউলি গন্ধ হয়ে গেছে।
এখন জমেছে  নিভৃত বিষাদ
অতীতের সুখে এবং বর্তমানের দাবদাহ।
ওগো উদাসীন...
বৃষ্টি আঁকতে আঁকতে তুমি কি বুঝতে পার অন্য কারো পাতা ঝরা হৃদয়
তৃষ্ণাতুর হয়ে উঠতে পারে যেকোন এপ্রিলহীন মাসে?
---------------







পথ
মামনি দত্ত
_____________
নদীর গন্তব্যের কথা বলেছিলেন ভূগোল ম্যাডাম
গ্লোব থেকে দেওয়াল মানচিত্র হয়ে খাতার পাতা ভেসেছিল।
চিকচিক জল পরিমিত ভ্রমণ বোঝেনা,
অথচ কাগজের নৌকা বানানো ছিলো শ্রেষ্ঠ অভিনয়।
অভিনয় সংক্রান্ত কথা ইদানীং ভেসে থাকে চিলেকোঠার আয়নায়-
সদ্য নবিশের মতো ভুল হয়ে যায় স্ক্রিপ্টের কতকথা।
এতো ভুল নিয়ে পথচলা কেন?
উত্তরের অন্তর্গত বিন্যাস ঝুঁকে দেখেনি নিরপেক্ষভাবে আজও।
আমি কেবল নিচু হতে হতে দেখি - জলের পাখি উড়ে যায়,
জলের গান পরে থাকে আঙুল জড়িয়ে।
মানচিত্র ধরে হেঁটে যাওয়া পুনরায় - এ তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য নয়,
কেবল মাঝেমধ্যে দেখি,
মর্মাহত নদীটির পাশে ম্যাডাম একাই বসে আছেন।
----------------








বরষা একটি ঋতু নাম
মামনি দত্ত
----------------
একটা বরষার অপেক্ষা। অপেক্ষা ঐকান্তিক।
সারিবদ্ধ বকের মতো আকাশের গায়ে উড়ে উড়ে পুড়ে যায়
ঋতুমতী মেঘ,
ছাই থেকে জন্ম নেবে আরেকটি ঋতু.....
এই বিশ্বাসে।
বিশ্বাস একটা ব্যক্তিগত আয়না।
যার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নারসিজম এর প্রাবল্য...
কেউ কোথাও ভিজে যায় লজ্জায় অথবা বরষায়।








অরণ্যবাস ()
মামনি দত্ত
---------------
ভালবাস? আকাশ, নদী অথবা স্বপ্নের কলতান?
গতকালও রাতের পাশে হেঁটে গেছি
কাঁধে কোন হাত ছিলনা...
তোমার চলে যাওয়ার ঘ্রাণ ইউক্যালিপটাস পাতায় উড়ে যায়
আমি একাই পথ ধরে খোয়াই পাড়ে
তোমাকে চিৎকার করে ডাকি।
অরণ্য, তুমি নেমে আসো আমার প্রতিটি প্রবাহে
মৃদুমন্দ ছন্দে লেগে থাকো আমার উষ্ণতা জুড়ে।
প্রতিধ্বনি কাঁপিয়ে দেয় নিশাকাল,
নদীজ কান্নার থরথর দুচোখ।
দ্যখো অরণ্য! তুমি কি দেখতে পাও আমার পায়ের ছাপ
থেকে বন্যতা জন্ম নেয়
তোমার পথ অনুসরণ করে?
---------------------------------








অরণ্যবাস ()
মামনি দত্ত
----------------
সম্পর্কগুলি ভাঙতে ভাঙতে অরণ্য উপত্যকায় দাঁড়িয়ে আছি
যেমন তুমিও দাঁড়িয়ে আছো মৃত খরগোস শরীর আঁকড়ে..
গাছের গাঢ়রূপ ভেঙে
আমরা কেউই আর এগোতে পারছিনা।
অমলিন চোখে ঝাপটা লাগে...
মৃত নিশ্চল কাঁচ সম্পর্ক।
অথচ অথৈ জলে নেমে আমরা ভিজেছিলাম বহুদিন
সেগুলি আদতে ছিল সম্পর্ক কে জুড়ে রাখার ক্লান্তিকর ঘাম।
আমরা বুঝিনি... 
আমরা বুঝিনি তাইতো
সমগ্র জলাধারের নাম বৈষ্ণবী পুকুর নাম দিয়েছিলাম।
তোমার সোহাগ চিহ্ন নিয়ে ডুবে যেতে যেতে
আমি নিজেকে সাজিয়ে ছিলাম অপরাজিতা ভোর নামে।
নামের মাহাত্ম্যকথা তুমি বোঝনি বলে কোনএক ভোররাতে
বেজে উঠেছিল পায়ের নুপুর...
সেছিল আমার পলায়নকাল।
আজ হারিয়ে গিয়ে দেখি আমাদের বিবশতায়
লেপটে আছে দৃষ্টির সন্দিগ্ধতা। অবিরল।