মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

সুমনা পাল ভট্টাচার্য্য



শুধুই তার
~সুমনা~

*********
রাত-জাগা বৃষ্টি সুর-
মাখছে আদর মেঘলা-মন
ঠোঁটের আগুন দাবানল
পুড়ছে, ভিজছে সারাক্ষণ....
জিভের লালায় জীবনসুখ
ঢাকবে এবার মৃত্যূদাগ-
দগ্ধে ওঠা জ্বালামুখ-
মাখছে রাঙা সোহাগ-ফাগ।
গলছে বরফ, ভাসছে হিম
ছাপিয়ে ওঠা মাতলা সুখ-
নদীর বুকে তপ্ত ঢেউ-
চোখের তারায় উৎস-মুখ..
বুকের কানে বুকের গান-
সুখের ছাদে উজান স্নান
তোমার মুখে গোপন নাম
মোহনা ছুঁয়ে প্রেমের তান।
চাদর ঘেরা অন্ধকার-
আঙুলে আঙুল একাকার-
মল্লার বোনা ইন্দ্রজাল-
এবার আমি 'শুধুই তার'।।
                                ****************************







মুখোশ নয়, মুখ
~সুমনা~

*-----------*

লজ্জা আগল সরিয়ে যখন সাড়া দিলাম ডাকে-
কদর বুঝি কোমলো আমার নির্ভরতার বাঁকে-

তোমার আনাগোনায় ছিল আমার অভ্যেস-
এখন তোমার চৌকাঠে ভয়, সম্ভ্রমেরই রেশ।

হঠাৎ করে বদলে যাওয়া ঋতুর মরিচীকা-
সুহৃদ আবার দেবে কথা, বলছে দিগন্তিকা।

জ্বালিয়ে আলো গলছে যে মোম, নরম রক্তময়-
অপেক্ষার তীব্র সুখে লোকানো মৃত্যূভয়।

দিন -প্রতিদিন দূরত্বে পা, কাছের কথা নেই-
মুখোশ নয় তোমার জন্য, মুখ ফিরে আসবেই।
***---------------------------***







মা
~সুমনা~

****
মনখারাপের ঘরের ভেতর আমি যখন একা-
তোমার সাথে অন্ধকারে মুখোমুখি দেখা।

এখন আমি অনেক বড়, কান্না লোকাতে পারি-
অভিনয়ের বিরাট কদর, জীবনের ভাব-আড়ি।

এখন আমার চোখের ভাষা আর পড়েনা কেউ-
বুকের ভেতর উথাল-পাতাল, ঝরাপাতার ঢেউ।

এখনও আমি রাতের বেলা দু:খে তোমায় খুঁজি-
অনেকখানি কাঁদার শেষে, তুমি আছো বুঝি।

আহ্লাদী ঠোঁট আশ্রয় চায়, তোমার আঁচল ঘিরে-
তোমার শেষ চুমুর শব্দ আসছে ফিরে ফিরে।

শক্ত করে জড়িয়ে ধরো, বুকের শব্দ শুনি-
ক্লান্ত অবশ আঙুল দিয়ে হিসেবের কর গুনি।

তোমায় আমি প্রেম, ভরসা, বিশ্বাসে ফিরে পাই-
তুমি আমার স্বত্তা সামিল, একমুঠো কালো ছাই।।
**************************************







যদি...
~সুমনা~

*****

নদীর মত বয়েছি বুকে কত গল্পের স্রোত-
আমার পথের বাঁক ঘুরে দেখি অবাক জীবন-বোধ,
জমেছে হাজার হাজার মাটি, পলির পরে পলি-
জীবনের এই উজান-ভাঁটা নীরবে বয়ে চলি।

কখনো তাপিত পিপাসা আমায় করেছে শুষ্ক, ক্ষীণ-
কখনো রোদের দগ্ধ চিতায় পুড়েছি দ্বিধাহীন-
তবুও আমার শরীরে-মনে কত আঙুলের ছাপ-
মুখের মলাট সরে সরে গেছে, মরেছি ধাপে ধাপ।

কখনো কারোর প্রেমের পরশে হয়েছি স্রোতস্বিনী -
কখনো কেউ ছুঁয়েছে সুরে, বেজেছি রিনি-ঝিনি..
কখনো কারোর আত্মশুদ্ধি,আমাতেই অবগাহন-
কখনো আমি হয়েছি কারোর মৃত কবরের বাহন।

সময়ের ধারা বয়েই চলেছে অবিচল, অবিরত-
আমার দেহ যৌবন খোঁজে, ঢেকে সময়ের ক্ষত;
সব চরামাটি সরে সরে গিয়ে এখনো গুনছে ঢেউ-
হঠাৎ যদি মায়া-আঙুলে তরঙ্গ তোলে কেউ!!
***********************************








খদ্দের - উৎসব
~সুমনা~

***************


ষোলোর শেষে আজ সতেরোয় পা দিলাম
এক বাটি দুধ, ছটাক চাল, 'খানা কিসমিস
তোর হাতের পায়েসে আমার জন্মদিনের লোভ-
মা রে, তোর আঁচল পেতে একটু খাইয়ে দিস্।

বালিকা থেকে কিশোরী হওয়ার সদ্য মূহুর্ত
যত্নে আগলে বেড়া দিয়ে রাখার ছিল দিন-
আমার মাংস ওজন করে বিলিয়ে দিলি তুই
এমন দিনে তোর গর্ভের শুধতে যে হবে ঋণ।

ফুঁটো বাসন, ছাল ওঠা হাঁড়ি,ভাঙা মেঠো উনান
এখন সেখানে টগবগ করে ভাত ফোটে দুইবেলা..
আমার পেটের নীচে জটবাঁধা ভীঈষণ যন্ত্রণা
তবুও আমায় খেলতেই হবে 'শরীর-শরীর' খেলা।

তোর অভাবী শরীরটা ছিল হারাণ কাকার লোভ
আর নেকড়ের চোখ ছিল মা, আমার বকুলবনে
ব্লাউজের হুক লাগানোর আগে টাকা গুনতিস্ তুই
লালসার জিভ লেহন করেছে আমায় যে প্রতিক্ষণে।

আমি যে তোর বড় মেয়ে মা,পরে আরও চারজন
বুভুক্ষু চোখ, দোমড়ানো পেট, অভাব শত ঢের..
কি করে তুই সইতিস্ মা রে এত সব হাহাকার
তার চেয়ে ভাল চোখ মেলে দ্যাখ আমার 'খদ্দের'

আমার হাতে নীল নীল চুড়ি, ঠোঁটে লাল লাল রঙ
চুলগুলি সব সর্পফণা, রক্তের মৃদু ঘ্রাণ-
আমার শরীর ঠমক শিখেছে, ভুলেছে যে উচ্ছ্বাস
বেশ্যা-পাড়ায় আমার এখন হাজার গুণগান।

বনবন করে মাথার ওপর ঘুরছে সিলিং-ফ্যান
টেবিলেতে রাখা কাঁচের গ্লাস আর দামী মোগলাই
এখন আমার বুকের ভেতর পেরেক পোঁতার ক্ষোভ
মন কেমনের পাহাড় ডিঙিয়ে তোর কোলটুকু চাই।

আস্তে আস্তে চোখ বুজে আসে, নুন শোষে দুই গাল
নেশা নেশা মাথা, টলমলে পা, সুদূর কলরব
তারপর কাল সূর্য উঠলে সাজাবো শয্যা-চিতা-
জন্মদিনের শেষে আবার " খদ্দের - উৎসব"।
*************************************








আমার "তুমি"
~সুমনা~

************
তুমি আমার হীরে-জহরৎ, সোনার খনি নও
খোলা চুলে নরম আঙুল বুলিয়ে - বাতাস হও,
তুমি আমার সাজানো কথা, নয় জমানো পুঁজি-
আমার রাতের বালিশে তোমায় মা এর মতন খুঁজি।

আমার সকল সুরা তোমার মাতাল হওয়া বোঝে,
আমার চোখের ঘাঁটা কাজল তোমার রুমাল খোঁজে-
আমার ঘরের দামী আসবাব তুমি যেন হোয়ো না -
আমার গায়ের ঘামের গন্ধে রাত-জাগা বায়না।

রূপালী ছবির নায়কের মতো নাই বা হলে তুমি
রোদ-পোড়া এই মনের ঘরে তুমিই সবুজ ভূমি-
তুমি আমার ছুটন্ত প্রেম; দুরন্ত সব আশা-
তুমিই আমার একফালি সুখ, আমার ভালবাসা।

তোমার আদর মত্ত পুরুষ, মাদক রাতের শেষে
কখন যেন দু-হাত বাড়ায়, বাবার বুকে মেশে
তোমার চুমু চুঁইয়ে পড়ে, আমার জিওন-কাঠি-
তোমার বুকের রক্তে মিশে একসাথে পথ হাঁটি।।
**************************************