মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

রঞ্জনা রায়




 মাটি কথন
 রঞ্জনা রায়

ছিন্ন লতা গুলো লাল মাটিতে পড়েছিল,
উগ্র কালবৈশাখী সাজে ঝড় এসেছিল।
  মাটির অন্তরে অনন্ত কাঁপন,
 ঝড়ের শিরায় উষ্ণ উন্মাদক্ষণ।
সুড়ঙ্গ গভীরে এক বিপন্ন কানীন অন্ধকার,


মাটি চৌচির, লাঙ্গলের অশুচি ফালায়,

 হৃদয় খনিতে মরণ হাহাকার।

মাটির নিভৃতে বইছে উতপ্ত লাভা স্রোত,
   আদিগন্ত অপমান ইতিকথা।
মাটি পোড়ে, মাটি ভেজে,
ভঙ্গু্র পাঁজরে স্থান পায়
  অসংখ্য দুঃখলগ্না সীতা।
মাটির স্বচ্ছ্ব চেতনায় শিকড়ের,
  নিবিড় বন্ধন প্রার্থনা।
মাটি চায় মায়াময় ঘাস ফুল শাড়ি,
   সজীব শস্যের আলপনা।








        
অন্বেষণ
রঞ্জনা রায়

প্রতি রাতে মুখোমুখি হই সেই প্রশ্নের,
পাই না উত্তর !
ভোরের সূর্য নিয়ে যায় আমায় অতলে
এক অন্ধকূপে দ্বিখন্ডিত সত্ত্বার অসহায় চিৎকার,
কোথায় সমাধান ?

দিনে রাতে সেই স্বর্ণবিন্দুর সযত্ন সন্ধান ;
কেন লিখি?
কোন ঈশ্বরের দৈবী মন্ত্রের বানী্রূপ -
অক্ষরের তুলি তে আঁকি ?

তারই খোঁজে হারাই
টাকলামাকানের কাঁটাঝোপে,
এক চির জাগ্রত গুহামানবের জ্বলন্ত উত্তপে।
কালো মেঘের কোল ঘেঁসে উড়ে যাওয়া,
চঞ্চল বকের ডানায় সূর্যের জ্যোতি,
হতাশার বেড়াজাল ভাঙে,
মনে হয় হয়তো এরই জন্য জ্বলে,
জীবনের শাশ্বত বাঙময় বাতি।  








        
কাঁটাতার
রঞ্জনা রায়

যেমন করে আমি ধরেছিলাম তার হাত
সেও হয়তো তেমনি করেই ধরতে চেয়েছিল এই মণিবন্ধ।
যেমন করে আমি লিখেছিলাম সেই চিঠি,
সেও হয়তো তেমনি করেই লিখতে চেয়েছিল সেই কাব্য।
সূর্য প্রদক্ষিনের সেই স্মরণীয় মুহূর্তে পৃথিবীর,
বুকে কখনো কি ঘনায় তমসা ঝড়
ভূমিকম্পে কাঁপে মাটি, গাছেদের শরীর জুড়ে,
বৃষ্টি নামে, অনুভূতি মন্দ্রিত মেঘ স্বর।
সেই জুঁই ফোটা রাতে সে এমনি করেই চেয়েছিল,
তার নিজস্ব আড়াল সেই বন্য হিংস্রতার অন্ধকারে।

আর ঠিক তেমনি করেই আমি আটকা পড়েছিলাম
সাত পৃথিবী ডিঙিয়ে
সেই বাসন্তী সাতপাকের কাঁটাতারে।




  


মেঘপরী
রঞ্জনা রায়

                সূর্য হয়ে জ্বলে ওঠা কোন চোখ যদি তোমায় দেখে
দেখবে তোমার অবগুণ্ঠনের ঐশ্বর্য।
হরিৎ প্রান্তরে হাওয়ার বন্যতায়,
পেয়েছি সেই সুগন্ধের মাদক স্পর্শ।

মরুভূমি  চিরদিনই হতাশ,
         তৃষ্ণার অশনি সংকেতে।
মেঘপরী হয়ে এসো তুমি,
         এই দহনের বনপথে।
নদী হও তুমি, ওগো মেঘপরী,
      ভাসুক উন্মুক্ত দুইপাড়।

শৃঙ্গ মুখী ঐ দুটি টিলা,
      সৃষ্টির পূজা উপচার,
নেশা আর নিশি যেন একাকার।

মেঘপরী আজ এসেছে, ঝড়ের রাত,
রাতের গভীরে আরব সাগর গর্জায়।
অবগুণ্ঠন আজ রং ফানুস ঐ আকাশের বুকে।
মেঘপরী মেলে দাও তোমার ঐ শীতল ডানা ,
প্রিয় মানব দেবে উষ্ণতা সৃষ্টির স্পর্শ ।   








সম্মানীয় এক থালা গরম ভাত
রঞ্জনা রায়

কল্লোলিনী কলকাতা অপূর্ব শহর,
পরতে পরতে মায়া রাংতার সাজ, অদল বদল।
শহর জুড়ে অগুনতি চাকা, দু পায়ের গভীর জঙ্গল।
দিশাহারা নাবিক মাঝ সমুদ্রে, শুকতারা দেয় না পথের সন্ধান,
দামাল স্রোতে ভেসে থাকা শুশুকের চোখে, যন্ত্রণার ক্ষরণ।
বলিরেখা আঁকা কুঞ্চিত ত্বকে,
   কলকাতা কখনো বা হতে চাও বেহেস্তের পরী !!
তোমার হৃদয় ঘিরে তিনশো বসন্তের গিলটি করা সাতনরী।
গঙ্গার ধার ঘেসে পবিত্র রাজপথ, ঝলমলে আলো,
ভজুরা চিরদিনই নর্দমার পাশে,নোংরায় কালো।
 জীবন যুদ্ধে ওরা নিবন্ত রংমশাল, পায় না সম্পদের স্বাদ,
ছেঁড়া জামা , ছেঁড়া চটি, আধখানা রুটি, মেলে ডাস্টবিনে,
কুকুরের প্রসাদ।
শেফালী প্রতিদিনই দাঁড়ায়,-
বিশেষ পোস্টারের নীচে, অন্ধকার কোণে,
জীবন ওর কাছে বাসি, ঘামে তেলচিটে,
অনেকেরই খিদে পায় নীল খিদে,
বিনিময়ে একথালা ভাত, শেফালীর ও জোটে,
সুন্দরী কলকাতা তোমার চাঁদ - চাঁদ শরীরের খাদে,
বিকলাঙ্গ কঙ্কাল, বীর্যহীন অন্ধকারে।
কলকাতা তোমার কোলে ওরা পাবে কি,
সম্মানীয় একথালা গরম ভাত শীতের দুপুরে ?