শনিবার, ২১ মে, ২০১৬

ইন্দ্রাণী সরকার




যখন তুমি আসো
ইন্দ্রাণী সরকার

ভেজা শিশিরের টুপটাপ ছন্দ নিয়ে
যখন তুমি আসো
তোমার পায়ে জড়িয়ে ধরে কুয়াশার
কাজল কালো ঋণ
তোমার গা থেকে খসে খসে পড়ে
এক একটা মাণিক
তোমার হাসির ঝিলিকে বেজে ওঠে
নূপুরের সুরেলা বীণ
হাতের মুঠোয় একরাশ জোনাকির
আলো জ্বেলে নিয়ে
রোজ সকালে যখন আমার জানলা
ছুঁয়ে দিয়ে যাও
তখনো তোমার দুচোখের পাতায় লেগে
রাতের মধুর স্বপ্ন
গোলাপ পাপড়ি ঠোঁট থেকে ঝরে যায়
মেঘেদের নরম হাসি |




ঋণ
ইন্দ্রাণী সরকার

চালসে পরে আছে চোখে
কাজলটাও তেমন যত্ন করে
পরাতে পারি না, হাত কাঁপে
শোনো তুমি এত কেঁদ না
তোমাকে আমি চিনি না
চেনা দিয়ে যাও কখন সখন
নয়ত আমার হাত এগোয় না
আজানুলম্বিত আমার হাত
বিবর্তনবাদ ঠিক মত মানতে
পারি নি হয়ত, তাই পরিবর্তনশীল
জগতে আজও বেমানান
ভয় কি এসো, না হয় সুরমাই
এঁকে দেব, কাজলের ঋণ
এখনো যে শোধ করতে পারি নি |




পরিচয়
ইন্দ্রাণী সরকার

মোমের কোনো ভঙ্গি নেই
তাই স্তব্ধতারও নিজস্ব কোনো আকার নেই
পরস্মৈপদীতে বেঁচে থাকা
পিতৃমাতৃপরিচয়ও ভুলে থাকা
পিলসুজের ঘি ফুরিয়ে যায় অন্যত্র পাবার সংস্থান করি
আসলে পরিচয় নামক অলংকার
বহুদিন আগে থেকেই জলাঞ্জলি দিয়েছি
শ্বাদন্ত বার করে বা লুকিয়ে
ধারালো চোখে একলা তরবারির খোঁজে নিম গাছ হয়ে যাই
তেমনি তেঁতো তেমনি মধুর |




নাগরিক
ইন্দ্রাণী সরকার

ওরা কি শুনেছিল  ঘুম ভাঙা সকালে
এক মৃত্যুপুরীর আহ্বান ?
দেশভক্ত নাগরিকের দল
কবে জানি একটা মৃত কুকুরের লাশ নিয়ে
পঞ্চায়েত ডেকেছিল

কুকুরটির সনাক্তকরণে তার পরিচয়
পদিন কাগজে কলমে সম্পাদক
প্রথম পাতায় ছেপে দেন
তার আজীবন দেশভক্তির কথা পড়ে
মানুষও লজ্জা পেল

কিছু মনখারাপ আর বিদ্রুপের রং তুলি নিয়ে
এক চিত্রকর সমাজের হিংসা আর দ্বেষ
ক্যানভাসে এঁকে তাতে আগুন জ্বেলে দেয়
তারপর সবাইকে ডেকে বলে
কুশপুত্তলিকা দাহ করছি
এর পর থেকে কলহ, দ্বেষ সব ধুয়ে মুছে
থাকবে শুধু দেশভক্ত আর দ্বেষবিবর্জিত  নাগরিক

ভিন্নতায় প্রবাহিত গতিহীন সময়
দুর্বলতা কাটিয়ে নাগরিক জীবন
পুনরায় স্বত:স্ফূর্ত ধারায় প্রবাহিত হয় |




তুমি  যে ইন্দ্রাণী সরকার
এত সুন্দর

নুড়ি-চমকানো পথে নিত্য
তোমার অবুঝ যাওয়া আসা
গোলাপী তোমার এত প্রিয় কেন ?
গোলাপের সৌরভে ভরে থাকো তাই ?
চোখে স্বপ্ন নিয়ে চলে যাও শুধু,
যমুনায় দেখো বসে আছে রাই
রূপের ভিতর থেকে ফুটে ওঠে
লাবনী মাখা গোলাপের পাপড়ি
আমার মুঠোয় ভরা একরাশ
ক্রিসেনথিমামের ঝরা কলি
মৌন পরিক্রমায় পৃথিবী ঘুরে নেয়
তার আমিকে এক দিন এক রাত
নিঃশ্বাসে তোমার গন্ধরাজ
মেঘ কালো চুলে পাহাড়ের নীরবতা
রক্তিম ঠোঁটে ঝরা মেপলের আল্পনা
একদিন ঠিক খুঁজে নেব সেই পথ
যে পথে শকুন্তলা হরিনশিশু খুঁজে নেয়
যে পথে ডাকহরকরা ভৈরবী গায়
দেখো একদিন ঠিক তোমায় ছোঁব
এই সমস্ত আমার আমিকে নিয়ে
আকাশের নীলিমায় ভরে যাবে
সোনালী সুখের অপরূপ কারুশিল্প
উজ্জ্বল আলোর অবাক ছন্দময়তায়
খুঁজে পাব আরব্যরজনীর চুম্বন
তুমি যে এত এত সুন্দর,
তাই তোমায় চেয়ে চেয়ে দেখি |