সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯

রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়


রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

নামাবলি

সারাদিন বৃষ্টির ফোঁটায় লেগে থাকে অভিমানের মন খারাপি ঘ্রাণ৷ বড় বেশি আক্ষেপ যখন উৎসব করে বেড়ায়  আমার এই উদাসী উঠনে, সামনের শিউলি গাছটায় বিদায়ী গন্ধ জোড়াল হয়ে ওঠে৷ পৃথিবীর যে প্রান্তে তুমি নতুনের সাথে সহবাস কর, সেই প্রান্তে আমার উপোসী চোখ উপড়ে উপঢৌকন সাজাই তোমার নতুন জীবনের৷ অপরাধ যা তা নির্ধিরিত সত্য৷ যে জীবন নিজেকে বন্ঞ্চিত করে, অপরকে দিয়ে যায় ভালোবাসার নজরানা, তাকে কাঁটার জ্বালা সইতেই হবে৷ অনাদরে বেড়ে ওঠা আগাছা তিতিক্ষার যাপনে নিজেকে নিঃশেষ করে, চন্দনের বনে আর ঘুরে আসা হয় না৷ আমি বর্ণমালার বুক চিরে বেরিয়ে আসা বন্ঞ্চনাদের নামাবলি বানিয়ে ঢেকে দিই আমার শরীর৷ এবার অপেক্ষা শুধু অন্তিমের দিনের .....    






সন্ধ্যা রাগ

পৃথিবীর শেষ প্রান্তেও জীবন আস্বাদ্য৷ জীবনের দিকে ঝুঁকে পরা অসহ আগুন প্রশান্ত মোহমায়ার নিম-জরী বৃষ্টির ফোঁটায় কখন অজান্তে অভ্যাস হয়ে যায়৷ ঘরের আগড় খুলে বানজারা বাতাসের  দমক, মৌ ঢেলে দেয় তৃষার গালিচায়৷ ভালোবাসায় বাঁচতে শিখতে হয়না৷ আকাশ সঙ্গী হলে রাজনর্তকীরা মেঘের আড়াল-আবডাল থেকে পুষ্প বৃষ্টি করে৷ ভালোবাসারা তখন বাঁচার মৌতাত৷

কচ্ছপের পিঠের মত বনভূমির আত্মমগ্ন উল্লাস, আশাবরীর সুরে বেজে চলে অনন্ত প্রকাশে৷ মুক্তির প্রতিবিম্ব একটা থেকে দুটো, দুটো থেকে  তিনটে ছড়িয়ে যায়  আসমুদ্রহিমাচল ৷ আহ্লাদী চাঁদ আবক্ষ ভরে পান করে  বাষ্পীয় বৈবভ ৷ চতুষ্কোণী পৃথিবীর,জন জলাধিপে উল্লোল ওঠে উল্লাসী স্পন্দনের৷

পানকৌড়ির ভেজা ডানায় বিমর্ষ অসুখেরা জলজ উদ্ভিদের মত আটকে থাকে অবাঞ্ছিত আশ্রয়ে৷ প্রত্যয়ী আকাঙ্ক্ষারা মগ্ন সাধনায় বিলোল আবেগ বেড়ে দেয় জীবনের ঘ্রাণে৷ গোধূলির মাঠ পেরিয়ে ফাল্গুনী অনুষঙ্গ জীবনকে বাঁধে৷ গাঢ় চিবুক বেয়ে সন্ধ্যা রাগ শালুকের বুকে পরাগ হয়ে ঝরে ৷






ভাঙ্গা আয়না

আমার মাথার কাছের ড্রয়ারে ইচ্ছেগুলোকে বান্ডিল করে রেখে দিই৷ সিলিংয়ের গায়ে অসংখ্য ফাটল, রোজের নুন ভাত বাড়ন্ত হলে উনুনে জল ঢেলে দিই, পুকুরের জলে ছিপ ফেলে মাছেদের হা খুঁজে বেড়াই, খাদ্য খাদক শৃঙ্খল অহর্নিশ চক্রাকারে সময়কে প্রদক্ষিণ করে, গত রাতের বাজারে পরে থাকা মাছের কানকো, নাড়িভুঁড়ি,বেড়ালগুলো চেটেপুটে খায়, ইলেকট্রিকের বিল দিতে পারিনি, তাই আমার ঘরে জমাট অন্ধকার, বৃষ্টির দিনে ফাটল চুইয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে, আমি বালতি পেতে রাখি ড্রয়ার থেকে বান্ডিল খুলে ইচ্ছেগুলোকে একটা একটা করে বাতলির জলে ফেলে দিই, বৃষ্টির জলে ইচ্ছেগুলো সব ধুয়ে যায়, আমি বাস্তবকে এড়াতে - ঘরের সমস্ত আয়না ভেঙ্গে চুরমার করি ৷