সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯

পিয়া ব্যানার্জী


পিয়া ব্যানার্জী

আমার অনিয়মে

অনেক দিন নিয়ম করে তোমাকে ভালোবাসা হয়নি।
হয়তো বা দেখা হয়নি নিয়ম করে।
নিয়ম করে যখন আম গাছে মুকুল ধরেছে,
বসন্তের রঙ ছড়িয়ে পড়েছে সবুজের আঙিনায়,
যখন নিয়ম করে পড়ন্ত বিকেলের সোনালী আভা
ঠিকরে পড়েছে বলাকার গায়ে,
তখন হয়তো নিয়ম করে
তোমার ভিজে ঠোঁটে ঠোঁট রাখা হয়নি।
আমার বরফ কঠিন রাতে
তোমার ওমে মিশে যাওয়া হয়নি
আর নিয়ম করে।
তবু আমার সব অনিয়মের মাঝে
তোমার বুকের বাঁ দিকটায়
যেখানে আছড়ে পড়েছে কালবৈশাখীর ঝড়,
সেখানে মাথা রেখেছি বহুবার।
আমার অনিয়মের রাতে
জানালার ঝাপসা কাঁচের আবছায়াতে
তোমার প্রতিকৃতি কল্পনা করে
আমার আঙুল ছুঁয়ে গেছে।
আর তখনই আমার অনিয়মের রাজ্যে
হাতড়ে বেরিয়েছি তোমার একফালি ভালোবাসাকে।






নীল ঘুড়িটা

লাল, সবুজ, হলুদ ঘুড়ির মাঝে
স্বপ্নের নীল ঘুড়িটা উড়ে বেড়ায়
বোহেমিয়ার জীবন থেকে ছাড়পত্র নিয়ে।
কোনো এক বেপরোয়া ইচ্ছা ওর মনে দানা বাঁধে।
আসমানী রঙ লাগে ওর মনের গভীরে।
ওর শরীর ছুঁয়ে যায় সোনালী রোদ্দুর।
আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের মাঝে
ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসে ব্যস্ত শহরের ক্যানভাস।
দামাল বাতাসটা
ওর নিকোটিন ফুসফুসে প্রাণের সঞ্চার করে,
মেঘবালিকারা
ওর বুকে আঁকে প্রেমের নকশিকাঁথা।
ওর দুচোখে তখন স্বপ্নের মসনদ।
পরিযায়ী সুখে ও তখন আত্মমগ্ন।
অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের গন্ডী পেরিয়ে
ও তখন বাঁচার রসদ খোঁজে।
টালমাটাল নীল ঘুড়িটা
ভুলে যায় ওর অস্তিত্বের বন্ধ্যাত্ব।
ভুলে যায় ওর ব্যাপ্তির সীমা-পরিসীমা।
অস্তরাগ সূর্যের শেষ আভাটা
ওকে রাঙিয়ে যায় শেষবারের মতো।
জোনাকি রাতটা
ওর স্বপ্নের আকাশটাকে ঘিরে ফেলে।
একে একে নেমে আসে
লাল, হলুদ, সবুজ ঘুড়িরা।
নীল ঘুড়িটা তখন একাকীত্বের স্বাদ নেয়।
সঙ্গী হারা অস্তিত্বে টান পড়ে।
ওর ভোকাট্টা স্বপ্নগুলো তখন দলছুট হয়ে
এলোমেলো ছড়িয়ে পড়ে।
ও আবার ফিরে আসে
স্যাঁতসেঁতে সেই চার দেওয়ালে,
সামিল হয় বেঁচে থাকার জীবনযুদ্ধে।






ছবি

আমি তোমার ছবি আঁকি,
সাদা ক্যানভাসে মনের রঙ মিশিয়ে।
তোমার চোখে ঢেলে দিই সমুদ্রের গভীর নীলকে।
ডুব দিই সেই অতল নীলের গভীরে।
তোমার চিকন গাল বেয়ে নেমে আসা
সমুদ্রের নোনা জল আমি শুষে নিই।
তোমার ঠোঁটের পিঙ্গলতাকে
গ্রাস করি আমার ওষ্ঠ দিয়ে।
তোমার ঘন মেঘলা চুলে ঢেকে যায়
আমার সাদা দৃশ্যপট।
সেই গভীর কালিমায়
আমি খুঁজে যাই আমার মনের সুখ তারাকে।
তোমার বক্র ভ্রূযুগলের মাঝে
আমি রাতের অন্ধকারে
সূর্যের রক্তিমতাকে খুঁজি।
ক্রমশ এগিয়ে চলে আমার তুলির আঁচড়।
একরাশ কালো মেঘরাজিকে সরিয়ে
স্পষ্ট হয়ে ওঠে তোমার উন্নত গ্রীবা।
আমি আরো লোভী হয়ে উঠি।
ক্রমশ ডুব দিই তোমার বক্ষ উপত্যকার গভীরে।
আবিষ্কার করি তোমার মনের সবুজকে।
তুমি লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠো।
তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকো
অব্যক্ত জিজ্ঞাসা নিয়ে।
আমার আঙুল তোমার শরীর স্পর্শ করে।
তোমার সমুদ্র নীল চোখে
আছড়ে পড়ে উত্তাল ঢেউ।
আমার কামাতুর মনটাকে আমি ধমক দিই।
তোমার বেআব্রু শরীরটাকে ঢেকে দিই
একের পর এক ভালোবাসার মোড়কে।
তোমার ঠোঁটের কোণে তখন হাসির হিল্লোল।
তুমি হয়ে ওঠো অনন্যা, অপরূপা,
লিওনার্দো দার মোনালিসা,
আমার প্রেয়সী ক্লিওপেট্রা।