শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯

তাপসকিরণ রায়


তাপসকিরণ রায়

বর্ষা ভেজা প্রেমিক প্রেমিকা

বৃষ্টিতে ভিজে যেতে যেতে তোমার কথা খুব করে মনে পড়ছিল।

সেদিন উদাসী বিকেলে মেঘ জমে ছিল,

তোমার মনে শেষ জ্যৈষ্ঠের তৃষ্ণা জমা ছিল।

আমি ছিলাম তোমার চোখের বাইরে, কিন্তু মনের গভীরে।

অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম, তুমি যে অনেক দিন পর ফিরবে!



সহ্যের তো একটা সীমা আছে, 

বেশ কদিন পর তুমি ফিরে এলে।

তুমি যেন অনন্ত প্রতীক্ষায় ছিলে। 

সে দিনের মেঘ জল উদাসী বিকেল আবার ফিরে এলো--

তখন তুমি আমি অন্তরালে দাঁড়িয়ে, মাথার ওপর কালচে আকাশ,

গ্রীষ্মের শেষ দিনটাই হবে বোধহয় অথবা বর্ষার প্রথম দিন !

মনে মনে বর্ষাকে স্বাগত জানিয়ে ছিলাম।

বাইরে ধোঁয়াশা অন্ধকার, নির্জনতার মাঝে তুমি আর আমি।

দুজনের দৃষ্টিসন্ধি চলছিল--জানতাম না তা শুভ না অশুভ !



বাকহীন আমরা।

চেয়ে দেখলাম আমার প্রেমিকার মুখে ম্লান হাসি,

--কি হল, বকুল?--আমার আধবোজা গলা।

বকুলের মুখে কথা ফুটল না, ওর অস্ফুট শব্দে তাকালাম আমি।

অঝর জলধারা বকুলের চোখ বেয়ে নেমে আসছে

গাল বেয়ে তা গড়িয়ে পড়ছে আরও নিচে...

হঠাৎ ও ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার দেহে, 

প্রবল প্রতিবাদে সে ঘুষি ছুঁড়ল আমার বুকে, বলল কত দিন দেখিনি তোমায় !

অন্য দিকে হঠাৎ ঝমঝম শব্দে, বৃষ্টি ঝেঁপে এলো।

প্রিয়ার চোখের জল মুছে দিতেই বুঝি বা বৃষ্টি নেমে এলো ঝেঁপে!

আমি বকুলের চুলের গন্ধ নিচ্ছি, ও আমার বুকের গন্ধ নিচ্ছে।



এদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে।

আমাদের ছায়া ক্রমশ মিশে যাচ্ছে--একে অন্যের গভীরে।

প্রবল বর্ষণ চলেছে--নিজেদের মধ্যে আমরাও ক্রমশ ভিজে যাচ্ছি।   









অভ্যন্তর থেকে বৃষ্টি

বিছানায় তুমি আমি, বাইরে মুখর বর্ষণ

তুমি বললে, চলো বাইরে গিয়ে দুজনে ভিজি !

আমি তখন উতলা, শরীরের ভাব বোঝা যে দায় !

উমশ বিছানার সান্নিদ্ধে মনে হয়

এখানেই বুঝি বর্ষার আমেজ ধরে রাখা যায়!

গ্রীষ্ম চলে গেছে--দেহের গুমর আছে, কিন্তু দাবদাহ নেই !

তোমার দেহের ওম আমার দেহ ছুঁয়ে আছে।

আমি বললাম, দেখো মনে রঙ ধরছে,

ধরে নেও, ঘরের অন্ধকারটুকু বাইরের আকাশের জমাট মেঘ।

তুমি শরীর দুলিয়ে বললে,

আর তা হলে বৃষ্টিতে ভিজবো কি করে ?

আমি চুপি চুপি বলি, এস না, আমরা দুজনে ঘন মেঘ হই  !

তুমি বললে, না না, আমি বাইরের বৃষ্টিতে ভিজতে চাই !

তুমি বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে চাইলে,

আমি তোমায় আবার শুইয়ে দিলাম,

বললাম, দেখো, এখানেই বৃষ্টি আসবে, 

ঘরের ভেতরেও আমরা বৃষ্টিতে ভিজতে পারবো !

তুমি বিস্ময়ে চেয়ে থাকলে আমার দিকে।  

বর্ষা মুখর শব্দের মাঝে আমরা মিশে যাচ্ছিলাম।

পরস্পরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

আমি কাছে টেনে নিলাম তোমায়।

তুমি তখন খানিক বুঝি বিবশ হলে।

আমি জানি, এমনি থমথমে ভাব এলে তারপরই বৃষ্টি আসে--

আকাশে একটা ধরন ধারণ চলে।

একটা ঠান্ডা লড়াই চলে--আকাশে বাতাসে মেঘ-মল্লারে।

তারপর বসন্তের বাতাস প্রবাহিত হয়।

এবং শেষটায় সমর্পন।

তুমি আমি তখন ভিজতে লেগেছি।

দেহের অভ্যন্তর থেকে বৃষ্টি কেঁপে কেঁপে ওঠে,

বোঝা যায় এবার ভিজে যাবো প্রবল বর্ষণে--

খেপে খেপে এবার আমরা বুঝি বর্ষাস্নাত হবো।
  







বর্ষণের মাঝে এক নারী-পুরুষ

এক কৃষ্ণ শায়ের, খটখটে মাটিতে দেখো জলাভূমি ছিল।

একদিন প্রবল বর্ষণ হল, নদী সাগর বান ডাকল,

উলঙ্গ এক নারী ভেসে এলো তীরে--

সে তার নাম ঠিকানা হারিয়ে ছিল--তুমি বললে, উলঙ্গ নারী !

আমি বললাম, এক নারী !



আবার বর্ষা এলো ঝেঁপে--

বর্ষায় ভিজতে ভিজতে কখন যে নিজেকে হারালাম !

তুমি তখন আমায় চিনতে পারলে না--

আমার সমস্ত দেহবাস কখন যে সব ধুয়ে মুছে গেছে--

আমার নগ্নতায় তখন তুমি চোখ বুজলে,

সত্যি বুঝি তুমি আমায় চিনতে পারনি।

তুমি আমার নগ্নতার পরিচয় দিয়ে ছিলে, পুরুষ ! একটি পুরুষ !



বাইরে প্রবল বর্ষণ চলেছে, কানে তালালাগা ঝমঝম শব্দমুখরতা,

আর গুরুগম্ভীর মেঘের গর্জন,

দাপট ঝড়ের কাছে নিজেকে হারাবার ভয়ে তুমি বারবার কেঁপে উঠছ।

এ সব কিছুর মাঝখানে কোন এক স্থানে উষ্মা জমে উঠছে।

বল্কল বাসের নিচ থেকে উঠে আসছে চিরন্তন এক নারী-পুরুষ।