বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অভিজিৎ পাল





অভিজিৎ পাল

রাই-কৃষ্ণ পদাবলী

রাধার বুক চিরে বেড়িয়ে আসে চেনা জানা একটা ব্যথা। বিরলে বসে একা পড়তে থাকে ভাবী জীবনের পাঠ। ধ্যানবৎ স্থির হয়ে আকাশের ঔদার্য দেখে। সেখানে লেগে রয়েছে লাম্পট্যের ঘনরঙ। স্থির চোখে একা দেখে মেঘের যাপনকলা। যোগিনীর মতো স্থিতধী হয়ে ওঠে গৈরিক আবহ। খাদ্য বস্ত্র পরিবারের জৈবিক চাহিদা মুছে আসছে ক্যানভাসে। ত্রস্ত বেণীর থেকে খসে পড়ে বেদনাকাতর ফুলের আলপনা। কেশের মধ্যে কেশবের রঙ খুঁজতে চেষ্টা করে একাকিনী। মরে শুধুই মরে। পোষা ময়ূরের গলায় আদরের আকাশী নীল স্বপ্ন সাজায়। দূর থেকে এক অননুমোদিত কৃষ্ণাতুরার ছবি আঁকে চণ্ডিদাস।
...............................................................




রাই-কৃষ্ণ পদাবলী

সখীসম্মুখে চেনা কথাগুলোর ব্যাখ্যানের পর সামনে এসে দাঁড়ায় প্রশ্নচিহ্ন। অনুভূতি বিবর্তিত হয়। নতুন ভাবনার মতো প্লট বদলে যায় ক্রমশ আকাশের ছন্দে। আজীবন চেয়ে দেখব আমি, আজীবন শুনব আদিম প্রেম জড়ানো ধ্বনিগুচ্ছ। শুধু অতৃপ্তি আর অতৃপ্তি বাঁধব আমার দু'হাতে। এখনও বাসন্তী রাত কাটে অজস্র ক্রীয়াকৌতুকে। বদলে উঠি প্রতিদিন। লক্ষ লক্ষ যুগ অতিক্রম করেও একটা অজানা অতৃপ্তি জমে থাকে বুকের ভিতর। সংজ্ঞা বদলে আসে প্রেমানুসঙ্গের। কুঞ্জবনে পাহাড়া দেয় কবিবল্লভ। নীচু স্বরে সহমত জানায়।
...............................................................




রাই-কৃষ্ণ পদাবলী

ঘরের দরজা কঠিন হয়ে আসছে। নেমে আসছে অধরা মাধুকরী মাখানো বৃষ্টির দল। দুর্গম পথ হাঁটি অভিসারে। একা কৃষ্ণাভিমুখে। নীলাম্বরে আবৃত হই। মিশে যাই বর্ষার ক্যানভাসে। নির্দিষ্ট পুরুষ স্বাক্ষরিত চিহ্নায়ক দৃশ্যে অপেক্ষা করে হ্রদের ধারে। শঙ্কিত হয়ে উঠি। আকাশ কেঁপে ওঠে ভয়ে। ধাঁ ধাঁ লাগে আলোর। ধুলোর সাথে মিশিয়ে ফেলি আমার মৃত্যুমুখীচেতনা। কবি গোবিন্দদাস পথ চেনায়। ক্ষীপ্র বাণ হয়ে উঠি।

...............................................................




রাই-কৃষ্ণ পদাবলী

মায়াজাল আঁকো নারীর সম্মুখে। সম্পর্কের ঘোষণাহীন ফাঁদ পাতো। বিরামহীন আভিজাত্যের সঙ্গে বৈপরীত্য সাজাই ঘর-বাহির, আপন-পর, রাত-দিনের সংজ্ঞায়। বদলে ফেলি সব। সব কিছু। চেষ্টা করি প্রেমজ আনন্দবিহারে সমাহিত হতে। নদীর বুকে ভেসে যায় শ্যাওলার দাম্পত্য। ভয় নেমে আসে । এক অজানা অতৃপ্তি ভয়। আমিও শ্যাওলার মতো বিচ্যূত হয়ে চলেছি গহনের পথে। কঠোরতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো সামনে। মৃত্যুমুখী শরীরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকো স্থবিরতা মেখে। দ্বিজ চণ্ডিদাসকে সাক্ষি রেখে আমি মৃত্যুবিলাসী হতে চাই।

...............................................................




রাই-কৃষ্ণ পদাবলী

সখির সামনে মেলে বসি দুঃখীর ইমান। ভরা বর্ষা মাখানো ভাদ্রদিনে শূন্য হয়ে আসছে গেহ। চিত্রকল্পে জমে উঠছে মেঘ। আকাশ বাতাস ব্যাপ্ত হয়ে নেমে আসছে শরীরে। প্রবাসী কৃষ্ণের অপেক্ষা করি। খেদ জমে ক্যানভাস জুড়ে। বর্ষার দৃশ্য মনে উঠেই নেমে যেতে চায়। ময়ূরের সোহাগ দেখি। মেতে ওঠে দাদুরী। ডাহুকীর হাতে তুলে দিতে থাকি আমার দুঃখিনী বর্ণমালাদের। বুকে জমে ওঠে কষ্ট। অন্ধকার আর অন্ধকার জমে। দিগন্তে লেগে থাকে গোঙানীর দাগ। বিদ্যাপতি এসে সান্ত্বনা মাখানো বাক্যিক বিন্যাস সাজায়।
...............................................................