মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

রিয়া রিয়া




রিয়া রিয়া


সম্পর্ক

হাজার বছরের পুরনো মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে
স্পষ্ট শুনতে পারছি পুর্বপুরুষদের আর্তনাদ
সারি সারি মৃত দেহের ওপরে এক রাজা
বানিয়েছেন তার অহংকারের রথ
অবাক হয়েছিলাম সেই অহমিকার নিদর্শনে
খুব ধিরে ধিরে পরম মমতায় ছুঁয়ে দিচ্ছিলাম
সেইসব মৃত পাথরের শরীর

হঠাৎ কিছু শব্দ তীব্র ভাবে এগিয়ে এল
ওই দুরে সারি সারি গাছেদের কান্না
ডানা ভাঙ্গা পাখির ডানা মেলে ওড়ার চেষ্টা
স্পষ্ট দেখতে পেলাম একজোড়া দাম্ভিক
অনিচ্ছুক, তীব্র চোখ আমার দিকে এগিয়ে আসছে
আদিম যন্ত্রনায় অথবা প্রচন্ড রাগে আগ্নেয়গিরির
লাভার মতো এগিয়ে আসছে

আমি একটু একটু করে সরে যাচ্ছি
মৃত্যুর উপত্যকার দিকে
ভালবাসা ও বিদায় আমার
রক্তের প্রতিটি কনার সাথে মিশে গেছে
তুমি ময় হয়ে পুর্ণ হয়ে ওঠার ইচ্ছেকে
মন্দিরের হাড়িকাঠে বলি দিয়েছি.
সন্ধ্যের আয়োজনে পোর্সেলিনের টুকরোয়
ছেঁড়া সম্পর্কের দাগ থেকে যায়







স্বপ্নসবুজ মায়াটান

গত তিনদিন একটু একটু করে অনেকটা
ভালোলাগা জমা দিয়ে গেলে চোখের পাতায়
মনের খাতায়, স্বপ্নের মতো ছিল দিনগুলো।
ঘষা রঙে যেমন বৃষ্টির জল ছাপ জমা হয়ে যায়
কাঁচের খাতায়, গাছের পাতায়, মেঘের আরশিতে।
ঠিক তেমনই স্বপ্ন এঁকছিলো আমার চোখ।
হয়তো সব কাঁটাছড়ানো পথগুলো
আজও আছে আনাচে কানাচে ছড়িয়ে।
অচেনায় অজানায়, বোঝা না বোঝার সাথেই ,
শুধু শুরু হল নতুন গল্প লেখার পালা।
জানি না কবে আধেক ভোরে, মন রাঙিয়ে
ঘুম ভাঙিয়ে,শিশির কুড়িয়ে ফিরবে স্বপ্নগুলো।
দৃষ্টি আজও  থমকে আছে সেই ধুলোর বাঁকে,
হাওয়ার পথে,মেঘের সাথে,আলো মেখে।
জানি সব পথ মুছে দিয়ে পলিমাটি
ধুয়ে নিয়ে গেছে নদী সেই ভোরেই।
ভালো লাগা ফেলে গেছে পাথর-কণায়,
মনের কোনায় এই কুয়াশা হিমে।
আমি আমার রং ছড়িয়ে  দিয়েছি,
আবছা হতে হতে ধুপের গন্ধের মতোই
একদিন মিলিয়ে যাবো সেই স্বপ্ন ছায়ে।








চলে যাওয়া

পুরনো জীবনকে ঝেড়ে মুছে গুছিয়ে
 বিশ্বাসের চাদরে মুড়ে নতুন করে বাঁচতে চাওয়া
আফ্রোদিতির আর ফিনিক্স হওয়া হল না।
একলা ভেসে যাওয়া দ্বীপের মতো
অকুল সাগরে ভাসতে ভাসতে,
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি আমার আমি থেকে।
অবিশ্বাস আর উপেক্ষার আগাছায়
ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসছে নিশ্বাস।

নির্ভরতার পালতোলা নৌকো আমায় ছেড়ে
ভেসে গেছে মাঝ সাগরে, অন্য যাত্রী নিয়ে।
ভেঙে যাওয়া নোঙর আর শুকিয়ে যাওয়া,
মুখের লালা নিয়ে একলা আমি দেখছি চলে যাওয়া।

মৃত্যু আমার খুব প্রিয় বন্ধু
জীবনের জ্বলন্ত অঙ্গারের ছাই মেখে
আমি স্বপ্নভঙ্গের পথকে  অনায়াসেই উপেক্ষা করে একলা আমি ডুবে যেতে পারি
রাতের আঁধার কে সাথী করে সাগরের জলে।








প্রতিচ্ছবি

আজকাল গভীর রাত পর্যন্ত তারাগুনি।
চিনে নিতে চেয়েছি বারবার নিজেকে।
আমার আমিকে আমার কাছে মেলে ধরে
সবটাই বুঝতে চেয়েছি,হয়তো যুঝতে চেয়েছি।
ঝড়ের আগের রাঙা মেঘের মতো
শব্দেরা একে একে নেমে আসে
হৃদয় চিরে আঙুলের রেখা বেয়ে।
কবিতারাও অনেকটা আমারই মত
স্বচ্ছ, নির্মল,আর অনায়াস অভিমানী ।
বেশি কিছু চাওয়া ছিলোনা কখনো,
হতাশাও নেই, কোন প্রত্যাশাও নেই।
আজকাল আমি হঠাৎ করেই শব্দ হারাই,
বাক্যেরাও মাঝ পথে চুপ করে থেমে যায়।
তবুও আমি চেয়ে থাকি,প্রায় মিলিয়ে যাওয়া
আলোর রং স্বচ্ছ করে অপেক্ষা করি,আর
খুঁজে বেড়াই আমার আমিকে গোচরে, অগোচরে।








আমার ভাষা

আমাদের অনেকেই তোমাকে অস্বীকার করছে।
অনেকেই তাদের শিকড়কে উপড়ে ফেলতে চেয়েছে।
তুমি তো সেই প্রাচীন, প্রায় বৃদ্ধাশ্রমে অপেক্ষারত
আমার প্রিয় ভাষা,প্রানের ভাষা, আমার  বাংলা ভাষা।
কিন্তু আমি তো তোমাতেই লিখছি, তোমাতেই ডুবছি।
জানি আজ ভাষার অন্ধকার হয়েছে, কিন্তু রাত্রি নয়।
একদিন আবার দেখবে পতন থেকে উৎসার পর্যন্ত
আগামীর বাসনা তুমি ময়, আবার শ্রেষ্ঠ আসন তোমার।
শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারীই কেন ,
আমি যে তোমায় রোজ লিখছি,
দেওয়ালের উপর, খাতার পাতায়,মনের খাতায়।
আমার শিকড়ের ভাষায় আমি রোজ লিখছি।
ভালোবেসে তোমায় , আমি অন্ধকারের
একেবারে গভীরে নাভিমূলে তোমাকে লিখেছি।
কিন্তু যারা তোমায় ভুলে গেছে যেনো,
তারা একদিন ফিরে আসবেই।
কেননা কিছুতেই তোমার ভরাডুবি হবে না।
এবং আমরা যাবো আবার তোমার হাত ধরে

আরোগ্য সাধ্য আলোর অভিমুখে।