মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সুবর্ণা গোস্বামী



সুবর্ণা গোস্বামী

মৃত

ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে, বেহালার মত ... একটা গ্রে হাউন্ড অনামিকা থেকে এক্ষুনি লাফ মারলো হাওয়ায়। মিলিয়ে গেল... একজন তুমি বিকেলের মত ঝড় তুলছ বৈশাখে। আমার সতেরো বছরের পুরনো শাঁখা ভেঙ্গে পড়ছে যেন শঙ্খের ফসিল।
ঘর একটা বিপরীত শব্দ কোন অজানা মাদকগ্রন্থির ।
কন্যারাশিরা ফুল আঁকতে আঁকতে কখন যে এঁকে ফেলে গোখরো, তারকাঁটা কাফের কাগজে! কাগজের পোশাকে জরিয়ে বেড়ে ওঠে অদ্ভুত আগুন।
ভ্রমর জ্বলে যায় মৃত্যুর মুদ্রায়।





অভিমান

আগে নীল ছিল এখন ধূসর। জলের পাঠ এমনই জননী! বির্সগের পর পড়ে থাকে বিষণ্ণ পেনসিল । তামার শহরে নাভি থেকে ঝরে অলৌকিক ঘুম।এই ঘুম বয়ে নিক কোন সোনালি হরিণ।
আমি পালকের কাছে চেয়ে নেব উত্তরাধিকার, অরণ্যে চলে যাব আর
ঘুমিয়ে পড়ব ডাহুকের বুকে মায়ের উত্তাপ জেনে; ধীর মায়ামন্ত্রে বিলুপ্তির স্পন্দন।
দক্ষিণে পদশব্দের হেলুসিনেশন, গাঙের রূপালি তাবিজ আর চিবুকে মোহের চুমুক-
ভুলে যাব। বয়ে যাব যেন গাংচিল... অভ্যন্তরে মৃত্যুর তীব্র সম্মোহন।
পাখিদের শিলালিপি সমুদ্র পড়ে নি।





ভুলের বিজ্ঞান

আমার বরাবর সোনালী ফ্রেমের চশমার শখ। তবু পরেছি নীল, খয়েরি, শান্তি ও শোক। রঙ তো পাল্টাতেই হয়; কেননা জীবন...।এ শহরের প্রজাপতিগুলি নিশ্চয় স্কুলে পড়ে, তাই সাদা ইউনিফর্ম। আমরা যখন দেখেছিলাম তখন ওদের রঙিন কামিজ ছিল, সাথে নীল স্কার্ফ।
মাথায় ঘুরছেন দক্ষিণারঞ্জণ মিত্র,মনে পড়ছে না তার রচনার নাম। জলের কাগজে যে বৃদ্ধ লিখেছিলেন আমার অন্তাক্ষর তাকেও মনে নেই...
ঘুমিয়েছেন হস্তরেখাবিশারদ।
দড়িতে উপুর হয়ে শুকাচ্ছে টেডিবিয়ার, রোদ নেই। শীত করছে না ওর ?
ভুল হয়ে যাচ্ছে সমুদ্র! আমাদের সমতলে একমাত্র পাঠ্যবই ভুলের বিজ্ঞান।




কাঁঠালিচাঁপার শৈশব

কাঁঠালিচাঁপার একটা গাছ, ঠাকুরঘর আর কাগজফুল ঘেরা একটা বাগান...শৈশব!
দুপুরে মিষ্টিদি খাইয়েছিল জর্দাপান আর আমরা পৃথিবীর সমূহ কোলাহল পান করে কী
অদ্ভুত নীরবতায় ডুবে ছিলাম।কেঁদেওছিলাম আমাদের একদিন বিয়ে হয়ে যাবে বলে।
পরদিন বউ বউ খেলায় নিরঞ্জন আমাকে জড়িয়ে রেখেছিল অনেকক্ষণ...
বাগানের সাথে বনিবনা না হওয়ায় জেঠিমা কেটে ফেলেছিলেন ওদের ইহজন্ম। পরজন্মে ওরা হয়ত পাখি হয়েছে কিংবা হয়েছে শ্মশান। আমার আর কোনদিন দেখা হয়নি ওদের সাথে। একটা সাপ, কেউটে...হঠাৎ আমাকে কেটেকুটে বড় করে তুলল।
কাঁঠালিচাঁপায় ফুল ফুটলো একদিন। বড় হয়ে উঠল আমাদের সন্তানাদি...
বাগানটা এখন নেই। কেবল সাদা থান পরে শূন্যে শুয়ে আছে এক অমীমাংসিত মাটি।




পালকের প্রোফাইল

মেয়েটার মন খারাপ। কাঁদছে না সে... গাল বেয়ে নেমে আসা দু এক ফোঁটা কচুরিপানার ফুল- আসলে চোখের এক অমোঘ দীর্ঘশ্বাস। দীর্ঘশ্বাসের নির্দিষ্ট কোন দুঃখ নেই। নিরাময়হীন অসুখের আচ্ছন্নতায় সে প্রবেশ করেছে বহুদিন আগে।
তারপর স্পর্শের ওপারে হীরের নাকফুল হয়ে ফুটে উঠেছে মেয়েটির নীলাভ পালকে।