মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মৌ মধুবন্তী



মৌ মধুবন্তী


পুর্ণগৃহ আহবান

-যুগের উত্তোরণে তোমাকে দেখতে চেয়েছি অযুগের মণিবান্ধব রূপে।
তোমার চাওয়ার ভেতরে যে আঁশযুক্ত সুক্ষ্ম চারুকাজ, তা যুগের
সমিল বন্ধন। এবার তুমিওই বলো, মণিবান্ধবের ভেতর কি কি রূপ তুমি দেখতে চেয়েছ। তোমার জন্যই । দেবী, প্রেয়সী এইসব বড্ড সেকেল। মানায় না তোমাকে। তুমি হচ্ছো আমার দিগদর্শন।
'দিগদর্শন' থেকে 'পুর্ণচন্দ্রোদয়' দেখে 'নবজীবন' লাভ করে
তুমি হয়ে ফিরতে চাইলাম 'বিবিধার্থ সংগ্রহ' করে; পেলাম না
শুধু এই তোমাকে খুঁজে; নিজের করে।
পেয়েছিলে বটে; বুঝতে পারোনি। তবে হারিয়ে ফেলনি একেবারে
এই যে সামনে বসে আছি , তোমার প্রিয় বংগভূমি।
হ্যাঁ তা যা বলেছ। এমনি করেই যুগ আর মাইলের পর মাইলের ব্যবধান পার হয়ে , মনের পাঁচিল উতরে এসেছি
বংগদর্শনে। এসে জ্ঞানাঙ্কুর রহস্যের জট খুলতে চেষ্টা করে
অতঃপর আর্যদর্শনে মনোনিবেশ করলাম। গেলাম ভারতীর প্রচার কর্মেপেলাম অসস্র সফলতা। অর্জন করলাম তোমার আস্থা ।
তাইতো পাড়ি জমালে আরো দূরে, নিতে চাইলে সঙ্গে করে।
পড়ে রইলাম পেছনে আমি জন্মভূমির পুণ্য মেখে গায়ে মাথায় ও
অন্তরে । তুমি শেষ পর্যন্ত প্রবাসী হলে আর্য্যাবর্ত ভান্ডার পুর্ণ করে মানসী ও মর্মবাণী বয়ে আনতে এই ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশে।
ওদিকে নারায়ন তার সবুজপ্ত্র জুড়ে লিখে দিলো যাবতীয় প্রেমপত্র
আমার নামে । এতো এতো খাম আর চিঠি! একদিন তুমি আবিষ্কার করলে সে আমি নই। নারায়ন ছদ্মনামে লিখছিল প্রেমপত্র। বড় দুঃখ হয়ে বেচারা নারায়নের জন্য। তার আর দেশে ফেরা হলো না। কে তার নাম প্রচার করে দিলো, বিস্ময়ের সীমা রইল না।
এক বিকেলে কলোল্ল বলে গেলো, নাচঘর দেখতে এসো, না যাওয়া হলো না। আমাদের বন্ধুত্ব ছিল পদ্মপাতার মত নিটোল। ধারহীন। সুবর্ণ মসৃণ
আমার ভেতরে সাহস দানা বাঁধতে থাকে।
কেন গেলে না? নাচঘর দেখার আনন্দই হতো আলাদা। বড় রকমের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করলে চারিপাশ, সমাজ চিন্তা করে।
কোন কিছুই কি দেখা হয় নি তোমার?
হয়েছে। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে কোন এক শেষ বিকেলে ঘর থেকে পা দিলাম কঠিন পৃথিবীতে দেখব বলে শনিবারের চিঠি। পথে যেতে যেতে দেখি কৃষক তখনো লাংগল চাষ দিচ্ছে, মাটির ঢেলা ভাংগছে ফসলের নবযুগ দেখার আশায়।
আমার হৃদয় জুড়ে উচ্ছ্বাস আর ভয়ংকর এক জল ভাঙ্গার শব্দ।
আর কি কি দেখলে, ? আকশের রঙ কি মনে আছে?
আকাশএর দিকে তাকিয়েছি বলে মনে পড়ছে না। তবে আড়চোখে
দেখেছি
কেউ কেউ কালিকলম হাতে যাচ্ছে পাঠাশালা থেকে বাড়ি অভিমুখে
আমি শুধু উদয়ন স্কুলের পাশ ঘেষে দেখা করলাম পুর্বাশার সাথে।
মনে হলো যুগ যুগ ধরে কতরকম বিচিত্র অভিজ্ঞতার সংবাদ বহন করে করে আমি আজ এইখানে তোমার সামনে। তুমি আমাকে চিনলে।
আজ আমি কালোতীর্ণ পুর্ণগৃহ আহবান।



প্রশ্ন

একটি প্রশ্ন করেছিলাম বহুবার
জবাব দাও নি ঠিক মত, গোঁয়ারের মত গঁৎ গঁৎ করে
করে চলে গেলে অন্যদিকে হেঁটে, এমন ভাবে হাঁটলে যেন রেলগাড়ি দেখনি কোনদিন; অথচ রেললাইনের পাশেই তোমাদের বাড়ি, সেই ন্যাংটা কাল থেকে রেললাইনের উপর দৌড়ঝাঁপ করেই বড় হয়েছ।
আমিও নিরুত্তাপ থাকবার মত নই
বারে বারে প্রশ্ন করি, শোন, সংসার কবুতরে কোন সুরে গান গাইবে?
বলো আমাকে? আকাশে উড়ানো ঘুড়ি কি মাটিতে নামাবে, নাকি লুঙ্গির কোচায় ঝুলিয়ে দিন পার করে দেব।
নিরুত্তর তুমি আবারো হেঁটে গেলে গোয়াল ঘরের দিকে, গরুগুলো ঘাষ খাওয়া বাদ দিয়ে তোমার দিকে চেয়ে আছে। এইভাবে মাছ-নদী সবাই কে নিজের দিকে তাক করিয়ে রেখে এবার আকাশের দিকে মুখ তুললে, আকাশ বৃষ্টি ঝরাতে গিয়ে থেমে গেল। সে আমার প্রশ্ন ধুয়ে নিতে চায় না, আকাশ চায় , তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও, আমি সংসারের কথা বলছি, আমি অনুরূপ বিশ্বের আবদারের কথা বলছি, আমি প্রতিনিয়ত রঙমঞ্চে অভিনয়ের কথা বলছি, আমি স্পস্টবাদী , স্পস্ট করে কথা বলতে বলতে আমার জিবের ডগা ধবধবে ফর্সা রঙ ধারণ করেছে। কালো রঙ্গের জিহবা কখনো দেখিনি বটে, তবে এমন রঙ বাহারী ও দেখিনি।
তুমি মার্বেল ঘুরাতে ঘুরাতে , এপাশ থেকে ওপাশে যাও, আমি দোকানে গিয়ে এই দোকানে ঢুকি, ওই দোকানে ঢুকি, তুমি একটু দেখলে, তারপর গেলে কফি শপের দিকে, একমনে কফি পান করলে, আমার কিছুই কেনা হলো না
আমি খালি হাত নিয়ে ফিরে গেলাম হোটেলে।
তারপর তুমি এতো এতো ভালোবাসার গল্প বলা শুরু করলে, আমি উঠে গিয়ে তোমার পকেটে হাত দিয়ে উষ্ণতা অনুভব করলাম, না খরচ হয়নি একটি ডলার ও, আর তাই তোমার মুখে এখন যাবতীয় কাব্যগ্রন্থ, ভালোবাসা এখন পঁচা বাসী রুগ্ন মাছের মত গন্ধ ছড়াচ্ছে তোমার জিহবা থেকে, এই প্রথম আমি কালো জিহবা দেখলাম।
শান্ত হয়ে জানালার কাঁচ ভেদ করে দৃষ্টি ছড়িয়ে দেই
অবারিত উন্মুক্ত প্রান্তরে
না পাওয়ার বেদনা নেই
না দেখার অতৃপ্তি নেই
শুধু জানলাম সত্য করে
ভালোবাসা
ভিখারির কাছে জমা রয় কিভাবে ।
৮ মার্চ , ২০১৪ সাল
টরন্টো, কানাডা, পৃথিবী



কামকন্যার দেশে

প্রেম ঘুরে ভবঘুরে কাম কন্যার দেশে
বিবেক রক্ষী বাহিনী তাকে আগলে আগলে রাখে
এইসব কথা পুঁথিতে পড়তে
বড় ভালো লাগে
জীবনের পুথি প্রতি রাতে, হীম শীতল একাকীত্বে
কেঁদে মরে; কে পড়ে ? সেইসব পুঁথি দিনের আলোতে!
বিভোর সবাই যার যার নিজস্ব জগত নিয়ে ।
কিছুটা আবেগ মন্থন করে
কিছুটা কান্না বালিশের নীচে রেখে
সকাল আসে আবেগে উচ্ছ্বাসে;
সুর্যের প্রলোভনে ইন্দ্রপুরী
তখন ভিন্ন সাজে সাজে।
সমুদ্রে ঢেউ জলের সাথে কেলি করে
আকাঙ্ক্ষার নতুন সরোবরে।
তবু রাজহাঁসগুলো পরতে পরতে
শিৎকারের তরে চিৎকার করে করে
বিহবল পথ হাঁটে।
একবার আয়! প্রাণের দোসর নিভাইয়া যা !
গতরের সকল লেলিহান শিখা
মাইনাস চল্লিশের শীতেও যা দাউ দাউ জ্বলে...
জানুয়ারী ২৫, ২০১৪
টরন্টো, কানাডা, পৃথিবী



পোড়া ত্বকের গন্ধ

এই ফুল ফুল দিন
পুড়ে যাওয়া রোদ
মাখনের গরম ফেনার মত
জাগিয়ে তোলে ময়ুর চিত্ত
অনাবিল সুখের আবেশে
আল্ট্রা ভায়োলেট খাই ত্বকের নীচে
হারেম বাদশার শোক মনে গেথে রয়
তবুও জানাল খুললেই দেখা যায়
নগর সভ্যতায় উড়ছে ধোঁয়া
তরবারি খোলা ফিগার গুলো
মেলে দিয়েছে উন্মাদ রোদের
কোলে নিজেকে ; ভাবেনি
আগুন্তক দিনের কথা।
সেই থেকে অনাবিল পথ চলা।
পুড়ছে জীবন, দৈন্যতার কড়া আগুনে
বাতাসে ইতিহাস পুড়ছে , নদীতে
জলের আশা, সব কিছুই
অদ্ভুত সুন্দর শুধু তোমার ভালোবাসা।
মেখে নিয়েছি দুচোখে
কাজল আঁকার মত।
জুলাই এর এই তপ্ত তরংগ
আজ বাজাবে নতুন সানাই
খুলে দিয়েছি মনের জানালা,
কিছুটা বাতাস আসুক একান্তে,
সঙ্গোপনে, ক্যামেরা টা বন্ধ থাক দূরের ঘরে।
জুলাই ১৮, ২০১৩
টরন্টো, কানাডা, পৃথিবী




কাউন্ট স্কেম

ঝুলন্ত বেগুণের উপর
উড়ে এসে বসে হিলিয়াম বেলুন
ককটেল, ভালোবাসার সাথে
মিশিয়ে পান করছে স্ক্রু ড্রাইভার
মার্গারিটা আজকাল কারো ধার ধারে না;
সুধারাম থানা থেকে বেরিয়ে গেছে খুনি
নিত্য নতুন বিলাসের ভারে
গ্লোভাল সমর্থন এখন বিলিয়নে গোনে
হেনরি ফোর ডুডগনন শ্যাম্পেইন
পরবর্তি সেশানে কোলাকুলি করে
বোতলের কর্ক খুললেই এক পয়েন্ট নয় মিলিয়ন,
হুস করে ওড়ে।
বেগুণটা আগের চেয়েও শক্ত গন্দম
অবিরাম নতুন ছিপির খোজে ভুগর্ভ খোঁড়ে।
মিনারেলগুলো বুদবুদ হয়ে বেরিয়ে আসে
হাসতে হাসতে মানসিক ব্যাধির সমাপ্তি, নতুন ওর্গাজম!
আত্ম বিশ্বাস ফিরে আসতেই
সর্বশেষ বীডে দাম ওঠে দুই মিলিয়ন।
ডিসেম্বর ২৪, ২০১২
টরন্টো, কানাডা, পৃথিবী




ভাবনার শর্টসেল

বাড়ি ফিরতে ফিরতে
বাড়ি ফেরা হয় না, নখাগ্রে বসে থাকা মাছিটা
কাল ভিসা হারিয়ে দেশান্তর হয়েছে; বিবমিষা
আক্রান্ত মশাটাও হাতির পিঠে বার কয়েক গোত্তা
খেয়ে মাটিতে নেমে দাঁড়ালো, মাঠ জুড়ে পেচ্ছাবের
ধারা বয়ে যাচ্ছে, উজান ও সুজন মিলে পাঠখড়ি ভাঁঙছে
এখন সোনার দেশে সোনালী আঁশ নেই আর।
পাহাদার গেটের বাইরে বসে ঝিমুচ্ছে
জোছনা পেটিকোট খুলে এখন সীমান্তে
লুটপাটে ব্যস্ত। অমাবস্যা ছুরি ধরে রেখেছে
সকালের আলোকে সে কেটে কেটে টুকরো
করে ল্যাম্বারঘিনি বাজারে বিক্রি করবে-
টিনের কৌটা খুললেও এখন মিলিওন
খসে পড়ে, দেশটা কি উভ্রান্ত চোখে চেয়ে আছে।
স্বামী ও পিতার গেঞ্জি ও কোট টানাটানি বাদ দিয়ে
এবার নেমেছে পথে " আমার সন্তান স্বপ্নবাজ
স্বপ্ন বসায় রাজপথে-সব কিছু ডিজিটাল-আমন ধান থেকে শুরু করে
স্বদেশী মাতাও এখন মিস ডিজিটাল--বেগম নেটবুক, খাতুন টেবিল।
নোবেল প্রাইজ এখন দশ টাকা শেয়ার দরে বাজারে ছাড়া হবে
বন্ড যাবে ফ্রন্ট এন্ড লোড-এ--কে কার কমন স্টক কিনবে?
শর্টসেল এ লঙ রান প্রফিট দিয়ে বাঁজা গাছে ঝুলিয়ে দেবে
মার্চ ফাস্ট, মার্চ লঙ
অতএব সুতরাং সব মিলে একসাথে
আমি ও এবং।
তথাস্তু!
দেশ যাক
আমি তো আছি
নভেম্বর ২০, ২০১২
টরন্টো , কানাডা, পৃথিবী




চালচুলায় সভ্যতা

এরা কারা? মেরুদণ্ডের উপরে এমন ঘুপচি মেরে বসে আছে?
পিঠের উপর দিয়ে সভ্যতা গড়াতে গড়াতে
এক অসভ্য বুনো জানোয়ারের মত গোঁ ধরে
শিরদাঁড়ার উপর চালবাজি করে ডিগবাজী খেয়ে
কারকের ভেতর ঢুকে আমার পথ আগলে ধরেছে।
এমন সরু রাস্তায় যেখানে একজন একাই হাটতে কষ্ট হয়
সেখানে পাশাপাশি দু'জন কি করে একসাথে স্বপ্ন দেখে?
বলো তো অনুমতি ধারা, কি করে পাশাপাশি
বসে না বলা কথার ঝাঁপি থেকে পুরনো সাপ বের করে
সাপুড়ে নাচ দেখাই?
পথ চলা থেকে শুরু করে পায়ের আঙ্গুল হারিয়েছি
সাপুড়ে বাঁশী থেকে নাচের মুদ্রা সবই তো হারিয়েছি
একে একে, তবে আর পশ্চিমে কাৎ হয়ে থাকা কালে
কেন এই মেরুদণ্ডের উপরে এসে এমন ঘাপটি মেরে থাকা?
ইচ্ছে করছে পিঠটাকে পুরো তিনশ ষাট ডিগ্রী উলটে দেই--মুখ দেখা যাবে-
এ কাদের মুখ?
আগস্ট ১৭, ২০১২
টরন্টো, কানাডা,পৃথিবী