মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শর্মিষ্ঠা গুপ্ত



শর্মিষ্ঠা গুপ্ত

স্বপ্ন

কোনো এক প্রত্যুষে
অথবা কোনো প্রদোষে
মেঘমালায় ছড়িয়ে পড়ে
অপূর্ব রঙিন আলো
ছায়া ফেলে প্রাণের জলাশয়ে
সমস্ত উচিত-অনুচিতের দ্বন্দ্বকে দেয় ঢেকে


লেখা হয় নাম

চারিদিকে কতোনা দ্বিধা,জীবনের জটিলতা
অন্ধকার থেকে ফিরতে চায় আলোয়
সারাদিনের সঞ্চয় বুকে নিয়ে
যেভাবে পাখীরা ফেরে কুলায়
সেই দুরন্ত চিলের ডানায় ভর করে
মন বেরিয়ে পড়ে ঘরছেড়ে সূর্যোদয়ের পথে
ঘরের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ফিরে আসে সূর্যাস্তে।                
---------------------------





বনবিহারী

জংগলে যাই বৃক্ষ তোমাকে পাবো বলে
তোমাকে জড়িয়ে তোমার বুকে
মাথা রাখি মনে মনে
যেমন রাখে দেবদারু পাইনে শাল মহুয়ায়
জংলি লতারা
আকাশ ছোঁওয়ার ইচ্ছে নিয়ে
ঋষিকেশ থেকে কেদার
পেঞ্চ সাতকোশিয়া বা জয়ন্তীর পথে
শান্তিনিকেতন বা আরো অন্য বন
ছিলে পাশে সারাক্ষণ         থাকব
হারিয়ে যেতে বুনো পথে
অরণ্যচারী জাগো সাড়া দাও
যাব না আর কখনো
উলঙ্গ মোচ্ছবে।                           
---------------------------





সময়

সময়ের অভিঘাতে পালটে যায় দ্রুত
যা কিছু বিশ্বাস সম্পর্ক বা সযত্ন যাপন
আর কিছু চিন্তা
যার সম্ভাবনা তোমাকে ভাবায়নি কখনো
সেইসব অপ্রত্যাশিতের অমোঘ আগমন
সয়ে যেতে যেতে যখন ভুলে যেতে চাওয়া
এ জীবন     আজীবন
আজন্ম মুহূর্তমাত্র এই বোধ সত্যি
জেগে থাকে প্রতীক্ষায়
যদি হয়  হোক মৃত্যুবধি।
---------------------------





ভালোবাসা

ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশঃ
যেভাবে মেঘেরা পড়ে ছড়িয়ে
আবারো হয় একত্রিত দেয় ভিজিয়ে
মনের মধ্যে যখন জমে মেঘ
নিজের থেকে নিজেকেই করে আড়াল
কি চলছে সেখানে অহরহ
সব জিজ্ঞাসাগুলো দমচাপা
ঘিরেছে ঊর্ণাজাল।
---------------------------





ছক

বহু চেনা যে জীবন মুহূর্তে অপরিচিত
কাঙক্ষিত হলেও যে আগন্তুক
তার সংকেতে জাগে ভ্রম
পাখীর ডানায় চেপে আকাশ দেখা
ইচ্ছেগুলো একটু সামলে রাখো
শব্দগুলোকে দিও না উড়তে যেমন তেমন
বাতাসে না দিলে ভাসিয়ে স্বপ্নের উড়ান
রাতের অন্ধকারে যখন স্মৃতিরা ভিড় করে
হিসেব মেলাতে যেতে দেখি
নক্ষত্র বাঁকা চাঁদ আর জোনাকিরা
হাসে মিটিমিটি।
---------------------------





মা কে দেখা

মা       কোথায় গেলো তোমার সাধের
           তিনটে পুতুল
মা       কেমন করে আজকে তোমার
           দিনগুলি যায়
মা      কেমন আছো পালটে ফেলে
          পুরোনো অভ্যাস?

        বাবা ওঠেন কোন সকালে
        নাওয়া খাওয়ার নেইকো সময়
        সংসারে আজ কাজ থৈ থৈ
        আটহাত মিলে আমরা সবাই

মা   আমার ঘর আজ তোমার ই মতো
সখ ছিলো যে কবে হবো মায়ের মতো
যেমনটি মা করতে তুমি বাবার বেলা
তেমনটি কই পারছি আমি
হচ্ছে না তো পুতুল খেলা

ঘুম ভেংগেই মুখটি দেখা
চা এর কাপে একটু সময় দুটিতে থাকা
ভাত বাড়লে ম-ম গন্ধে
সারা ঘরে ছড়ায় ধোঁয়া

রুমালটা গেছে ভুলে বারান্দায় ছুট্টে যাওয়া
কোনোদিন -----
শুনছো"টিফিন কৌটো রয়ে গেলো যে"
যাহ! হয়ে গেল পেছন ডাকা
যাত্রায় বাধা মনে ভয় খনার বচন
দুগগা দুগগা দুগগা
অলস দুপুর গড়িয়ে এল বিকেল
ছেড়ে যাওয়া জামার গন্ধ খোঁজা
সন্ধ্যায় শাঁখের শব্দ আর ধূপের ধোঁয়া

"লাবণ্য, দরজা খোলো"
দুহাত বাড়িয়ে গলাটি জড়িয়ে
ঘরের ভেতরে আসা
কপালের শ্রান্তি পড়ছে কপোল গড়িয়ে
আঁচলের খুটে মুছে নিলে তুমি
সব ক্লান্তি গেল জুড়িয়ে
সংসারের সাতকাহনে অনুযোগ অভিমানে
এভাবেই তো তোমাকে দেখেছি মা
তোমাকে এভাবেই খুঁজে পাওয়া।
---------------------------






স্বপ্ন

কতদিন পর কবিতা এলে তুমি
যন্ত্রণাই তো ভালোবাসার খনি
স্বপ্নগুলোই নিয়ে নাড়াচাড়া
স্বপ্নেই তো বসত     ঘরবাড়ি
স্বপ্নগুলো উড়লেই বেশ ভালো
মেঘ হয়ে দ্যায় ধরা
ধরতে গেলেই তাকে
বৃষ্টির ঝরে পড়া
তোর সাথেই তো যাবো
মেঘেদের পাড়া
যেখানে জীবন পালকের মতো ওড়ে
আর ছুঁয়ে দিলে তুই
আরো বৃষ্টি ঝরে।
---------------------------





মন

সম্পর্কে যৌনতা ঠেকে পানসে
যদি দায়িত্ব ছিটেফোঁটার চেয়ে
বেশি যায় এসে
বহুগামী মন নতুন শরীর খোঁজে
বোঝা না হয়ে যে শুধু সুখ দেবে
প্রতিক্ষণ শরীরি উদযাপন
পৃথিবীর আদিমতম এ খেলা
নির্মাণ ভাঙন শেষে নির্বাসন।
---------------------------





সাধ

ও মেয়ে     সাধ হয় বড়ো সাধ হয়
তোর ওই কপাল থেকে দেই সরিয়ে
আলতো হয়ে নুয়ে পড়া চুলের রাশি
গোপন যতো দুঃখ নিয়ে ঝরতে থাকুক
তোর ওই হাসি।
                       
ও মেয়ে       বড়ো সাধ হয়
তোর ওই দীঘল চোখের জল
একটু দেখি ছুঁয়ে
হাতের পাতায় ছিন্নমালার মতো
টলটলে সেই মুক্তো জড়ো করি।

নারী ছাড়া বুঝবে কে আর তোর আকুতি
পড়বে কে সেই ভাষা
যা আছে তোর বুকের পিঞ্জরে
জন্মান্তরে আমি হবোই মেয়ে
থাকতে ও মেয়ে তোর আদরে।
---------------------------





ঋণ

কি পাঠ নিলাম পেলাম কি পাঠ
যদি বলি জীবন কি করে চাইতে হয়
দিতে নয়   সেই পাঠ
যদি বলি একসময়ের বলা কথা
অন্য সময়ে কি করে
হয়ে ওঠে প্রলাপের অপলাপ
শিখেছি আমি
যদি বলি সত্যের বিকৃতি বা বিকৃত সত্য
কি করে ছলনা দিয়ে ঢেকে দিতে হয়
শিখেছি সে পাঠ
জীবনের সাথে মিশে যেতে চেয়ে
বেড়ে গেলে প্রত্যাশা
কি ছলে তাকে দিতে হয় বাঁধ
শিখিয়ে গেলে তুমি
সেকথা বোঝার বা মেনে নেওয়ার দায়
কিছুই কি আছে কবি
তোমার অনুভবের অভিধানে

এইসব শিখে ও শেষে
জীবনে মেলাবো আমি জীবন
আর কতো জন্ম নেবো আমি

এ জন্মে হোক শোধ হাতেনাতে।