বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

রত্নদীপা



রত্নদীপা


এক
সমুদ্রের গা ঘেঁসে অনুবাদ করছি জল
ঘাঁটতে মন করে না, না ভিজলেই নয় এমনভাবে তুমি শুকনো হয়ে উঠলে ডাঙা মিহি যেন হরতনের বিবিটি সদ্য কোয়েলপ্রাপ্ত জোনাকি রঙের সাঁতার
আকাশ কেমন মাছ আঁকার বড়শি গত সাঁতার থেকেই আলাপ জমাচ্ছি জলের সাথে চাঁদের সাথে হাত ধরাধরি, প্রকাশ্য সমাবেশ জমিয়ে নিচ্ছি মৃদুপেগের  হাইফেন,..হরবকত বৃষ্টি জলের তলায় দাঁড়িয়ে তালুকলম
চোখের পাতায় দুলে উঠছে নানা ধরণের কাব্যনাটক যারা রোদের নীচে শুয়ে ছিলো এতোকাল তাদের ঝিমুনি আসছে মিশ্রকলায়,.. তোমার বুঝি রাতে ঘুম হয়নি? নাকি ঘুমের বদলে ফেলে এসেছ লাল ফ্রক, সাদা গ্রহণ নেটপূর্ণিমার সনেট
কার যেন সোনালি ভাসান ফসলে,.. অনেক জন্মের পর জ্বর এলে যেমন বুঝে যাই মনসুন আসছে, জল থইথই শিরদাঁড়া,.. ধাপে ধাপে চলে আসি,.. কানের লতিপাড়া,..জিভের দেওয়াল জলের লংজাম্প বুনতে বুনতে তুমি কী এখন বৃত্তের অনুবাদক হবে?
হাসির গন্ধ উঠবে জলের তলায়,.. যেখানে তুমি থাকো, যেখানে সূর্যাস্ত দিয়ে রঙ করো নদী,.. প্রথম অক্ষরে তুমি কোনোদিন রাত্রি ছিলে না তবু এখন একটু একটু রাত্রি লাগবে তোমারও






দুই
কথারা নাকি সবুজ আলো,.. নাকি জোনাকিরা খেয়ে নিয়েছে আমার সমস্ত  প্রাদেশিক স্পঞ্জ সকালের গাঢ় অন্ধকার? টেলিফিল্মের বিষাদ গড়িয়ে,.. কে যে আমাকে এত বিষাদের ইচ্ছে দিয়েছে,..
দূরবীনে গলে যাচ্ছে সব ধুয়ে যাচ্ছে কার্তিকের নাতিশীতোষ্ণ দেওয়াল পোকায় কাটা মিউজিয়াম লালউড়ানের মমিতে আমি বুঝি তোমাকে আঁকার কথা ভাবছি খুব,..  পিরামিডের মরশুম
তবে কী আগুন আঁকবো মোমবাতির ধুলোজারণে,..
তোমাকে অনুভব করি ঘ্রাণ, লেবুফুলের মন্থরতায় সেইসব হাঁটা ট্রেনের সুড়ঙ্গ স্রোত ঘুরে ঘুরে ছায়া নিচ্ছে সবুজ দৌলত,.. এমনকি একটাই বৃষ্টি গাঁথা সিরিয়াল... যেন সাদাকালো ব্রিজ অপার রুমালে একটি নদী ভরে ছুটছে প্রাণপণ,..
আর অবুঝ প্যাস্টেল কোনো কথাই শুনছে না  জোরদার ফ্লেভারে দাঁড়িয়ে পড়ছে অবাধ্য,.. কালো ভ্রমর পিঠ কাটা ব্লাউজ,.. হেমন্তব্যাধের ম্যুরাল শিকার,.. যেমন পাখিদের পালক ছাড়া মানুষের স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয় না,.. যেমন পরাগের চোখ ছাড়া ফার্নপাখিদের কুমারীরোগ হবার সম্ভাবনাই নেই,..
এই যেমন এখন বন্ধুরা বসে আছে পাশের ঘরে,..ফুকো লাকা দেরিদার ককটেল ঝরে পড়ছে নামে বেনামে ভদকাচাঁদের আক্রমণে দিশেহারা রবিবাবু কিম্বা শ্যামল মিত্তির,..
কোনো প্রয়োজন ছিল কী? তবু অথৈ মদরক্ত
তোমার শিরীষফুলের বাঁশীটি জন্মেই যাচ্ছে শুরু থেকে,..






তিন
ধানসিঁড়ি নদীর সাথে আপনি আমাকে আলাপ করিয়ে দিলেন
দেখলুম, জল যত ঘন হয় নদীর ততো ছুঁচলো ঠোঁট লাখ লাখ জোনাকি লাল রঙের নৌকো বাঁধা আকাশ,.. দুপাশে পাখিরা ফুটে আছে,..
আপনি বললেন বাইরে থেকে ধানসিঁড়ির সৌন্দর্য বোঝা যায় না,.. চল ভেতরে যাই, কাহনের পাড়ে একটু বসি,..গা থেকে নামিয়ে রাখো পালকের ওয়াটার প্রুফ,.. ভয় পেয়ো না যুবক বয়েসে কত আর ভিজবে,..আর যদি ভুল করে ভিজেই যাও, প্রজাপতির সম্ভাবনায় আমি তো রয়েছি,..
ধানসিঁড়িকে চিনতে হলে ভেতরে যেতেই হয়  তুমিও তেমনি করেই সাজো,.. না না, শতকরা হারে আয়ুবৃদ্ধি নয়,.. তুমি বরং কামরাঙা ফলের বিবাহজ্যোৎস্না গায়ে মেখে নাও , মধুগোপন সাঁকোতে আরও প্রকাশ্য হও,. ধানসিঁড়ির কোষে কোষে কত মুগ্ধ নওলাখা,.. তুমি তো খেয়ালই করলে না  স্কুলফেরত একটা মেঘ আলতো স্বরে টোকা দিয়ে গেলো,.. রূপোর কৌটোয় আজ যে সকালটি নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে আর তাকে খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে গেছে জলদেবি, পাপ পুণ্য রোদ রঙিন মেজাজের অন্ধকার,..
 অই শোনো ধানসিঁড়ি ডাকছে আমাদের পূর্ব জন্মের নাম নিয়ে ডাকছে,.. ক্ষতচিনহের ঝরাপাতামাসের মল্লিকাগলি কোনো অজুহাত নয়,.. ভুলে গেছ সব?  বড় বেশি নীল,.. নক্ষত্রের বোঁটাহীন আপেলফল সূর্যাস্তে অনেক বেশি দুঃখগল্প ভেঙে ভেঙে আমার সাথে ধানসিঁড়িতে এসো,.. সকল পলাশের গুটিপূর্ণিমা উপড়ে,.. প্রণামের সুগন্ধে,..
... এখন গোধূলি নয় তবু গোধূলির অল্প দূর, সাতটি জন্মের বৃষ্টি হয়েছে কিছক্ষন আগে জোয়ারের হাততালি ফেটে গেলে আমি আবার ছবি আঁকবো,.. তারাদের ভালো বাসতে বাসতে অন্ধ হয়ে গেছি,..ছবি আঁকা হয়নি বহদিন,.. একের পর এক চোখ ভেসে গেছে তুলিতে,..
চোখ থাকলেই জল,.. নদী চাইলেও জল  অই যে আমাদের ছায়া,.. বানভাসি অপর পারে বসে আছে মেঘ,..একতারার নাভি ছড়ানো, খোলা ত্বক,.. খেলাধুলোর বুক খুদকুঁড়োর সব কটি জল নিভে গেলেও ঘড়ির কাঁটায় এতোটুকু ধানসিঁড়ি লেগে থাকে,..
কমলাপুলির অলীক জ্বর টপকে এই তো পৌঁছে গেছি,.. এসো,.. ধানসিঁড়িতে ভিজে যাবার আগে কচি কলাপাতা রঙের বাদলে আধখানা বনলতা এঁকে রাখি,..






চার
আজকাল মেয়েরা গিটার বাঁধতে শুরু করেছে চুলে ঠোঁট থেকে নামিয়ে রেখেছে  বাচ্চাদের নাচ শেখানোর স্কুল  টবে ফুটেছে অজস্র গান,.. গানমেয়েরা মেঘ থেকে ধার করেছে বৃষ্টির টগবগ, তেপান্তরের রোপ ওয়ে ছড়ানো গল্পফুল,.....
নদীরাও আজকালকার গোলাপি টপ, জলরঙের জিন্স সেলফোনের হাসি কমলালেবুর বাচ্চারা গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যায় আলিশান তেত্রিশের দিকে,.. তেত্রিশ পেরোনো নদীতীর আমপাতা জামপাতা,..
এই সমস্ত পাতারা ডবল ডেকার, ভিজে ভিজে কণ্ঠে মেয়েরা হঠাৎ থামিয়ে দ্যায় দেনা-পাওনার খোঁপা সে তারার পাখিটিও নিজস্ব তাঁতের,.. লকারে দলবৃত্ত,.. শিশুআঁকা  গিটারের দুফোঁটা চোখ,.. সাতখানি পেন্সিলের নির্জন হাত পা,..
... সব দৃশ্য কবিরাই দ্যাখে, নোট ন্যায় আর মাতাল হয়,..
আর আগুন নেভানোর ছলে প্রার্থনা করে,.. চোখের সামনে দুলতে থাকুক আজকালকার মেয়ে  ঝিরি ঝিরি বুক,.. সাইরেনের কচি ঝর্ণা,.. গ্রীষ্মচাঁদ ঠিকরে কালো,..ছায়াকর্ণিকায়  গিটারের স্রোত, এইসব মেয়েদের খোকাখুকু হোক






পাঁচ
গ্রহাণুর তারকাঁটা পেরিয়ে সূর্য উড়ছে,বালি ফুটতে থাকা সিঁথিঝিনুক। রাঙা মটির কুলুঙ্গি। ছাইরঙে উপুড় বেহুলা,..
ওরা সব অতিথিপাখি ওদের সুবাস,ছবিআঁকা হয়ে যাচ্ছে রক্তলতায়।
ওরা কিশোরী গহনামেঘ ভিজে উঠছে অসময়ের পিস্তলকেবিন মিছিলের সরু কোকিল লক লক আগুনগাছের ডগা,..
যে মেয়েটি নদী ছিল, যে আকাশটি শরৎ,..যে ভুরুর ছিলায় তুমি রাঙিয়ে দিলে ধানক্ষেত,..যে ভুলের ভূমিতে আসমান সমান চিত্রকর একমাত্র তুমি,.. ওগো দোনলা খয়েরি বৃক্ষ,.. তোমার কী দিক ভুল হবে আর?,.
শবদেহ থেকে যত নদীর জন্ম ভুলে যাও কী করে বৃষ্টিহীন মৃত্যু, অবাক জলপান,..
তবু ভোর হলে গান গায় অন্ধপাখি কনক সিঁদুর পড়ে জোনাকি-জোনাকি খেলে বিবাহিত দুপুর তবু শিশুফকির, চাঁদের গেরুয়াতে বেজে ওঠে শ্যামলীর বধূবারান্দা,..