বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

শীলা বিশ্বাস



শীলা বিশ্বাস

হেমিংটনের জন্য

একশো বছরে চা বাগান
ঘোড়ার খুরের খট খট
কিংবা সাহেবের বুটের হুট হাট
একদিন যা ছিল
অতি পরিচিত আওয়াজ।

বুধার মা দিদিমারা চার নারী
একটি পাতা দুটি কুঁড়ি
নব জাতক বুধার চোখ নীলমণি
তাই আজ গুঞ্জন কানাকানি ।

বুধার মা কুড়িয়ে পাওয়া
না জানি কোন সাহেবের ভালবাসার চিহ্ন
সাক্ষী চা বাগান
চা শ্রমিকের পরিচয়ে আদিবাসী রমণী
কাছে রাখতে পারেনি।

নীল চোখের মা সমাজ ভ্রষ্টা
সময়ের ব্যবধানে সাহেব ফিরে গেছে
আটকাতে পারেনি তার শত চেষ্টা
দিয়েছিল ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি
আজও অপেক্ষায় হেমিংটনের বাগদত্তা ।

অন্তরালে থাকা রমনী খবর পায়
চা বাগানে ফিরে এসেছে হেমিংটন
চুপি চুপি দেখে যায়
চোখের জল পড়ে গাছের পাতায়
ভেসে ওঠে সাহেবের ছবি ।

তার আজ বড় আনন্দের দিন
ক্ষনিকের জন্য হলেও
ফিরে পায় যৌবন
এখন সে আরও বিশ বছর
বাঁচতে চায় তার হেমিংটনের জন্য।






ক্ষুদ্রতার ঝাঁপি

সূর্যের কী নরম আলতো ছোঁয়ায় লজ্জাবনতা
লাল কমলা শাড়ির আঁচলে মুখ ঢাকা সাগরিকা
বালুতটে ছবি কাঁপে জল আয়নায়
ছোটো ছোটো গহ্বরে লাল পরি কাঁকড়া
নুন মাখানো মাছ রোদে শুকায়
আছড়ে পড়া ঢেউ জ্যাজ সঙ্গীত শোনায়
পায়ের পাতা ছুঁয়ে চলে যায় দূরে
ডাবের খোলা নৌকার মতো ভাসে ধাক্কা খায় পাড়ে
মরা জেলিফিসে কঠিন সমুদ্রফেনা লেপ্টে লেগে আছে
বন্ধ প্যাকেট ঠুকরিয়ে খাবার খোঁজে কাকের দল
নুলিয়ারা জাল ফেলে নিপুন কায়াদায়
রুপালি চমক বিকোয় পাড়ে
সারিবদ্ধ সী-গালের ছন্দবদ্ধ মাছ শিকার
দেখি প্রকৃতির সুচারু কোরিওগ্রাফি
শহরের কোলাহল থেকে পালানো মন
সমুদ্রের বিশালতার সঙ্গে নিজেকেই বুঝি মাপি
লোনা জলে মিশে যায় ক্ষুদ্রতার ঝাঁপি ।।






জ্বর
আমার জ্বর হোক ঠাকুর
ছেলেবেলার প্রার্থনা
জিলাপি আর ফুচকা
এসব এমনি কেউ দ্যায় ?
স্বাদকোরকের ঘুম ভাঙায়
দই সন্দেশ কামরাঙায়

সেদিন তোমার প্রবল জ্বর
জল পটি দিতে দিতে
কান রেখেছি তোমার মুখে
বলেছিলে কি যেন নাম
আমার নাম ছাড়া অন্য কোনও নাম
নেই তো তোমার বুকে ?







হঠাৎ দেখার পর

তুমি তা জান না
বালির মধ্যে মুক্তো চমক
অপ্সরীদের খেলা থেমে যাওয়া সন্ধ্যায়
বাতাস থেকে আগমনীর গন্ধ নিয়ে
কিশোরী নদীর মত কেঁপে ছিলাম

লুঠেরা মন বশ মানে না
কুহকিনী দুয়ারে মন খারাপের তালা
মনখারাপি তালা বাঁশীর সুরে ভাঙো
সুর শিখে নাও চৌরাসিয়ার কাছে

জীবন জুড়ে লেখা ভালবাসার গল্প
জমতে জমতে পাথর
পাথরে পাথরে ঘষে  আগুন জ্বালা
অপ্রাগৈতিহাসিক
দহনজাত ভালোবাসায় বেদনাহুতি

অবিরত দহন আর দহন
হঠাৎ দেখার পর ।






মোমঘর

নিষ্প্রদীপ ঘরে একলা মন
অযাচিত কিছু আনন্দ
বেঁধে রাখে মোমঘর
প্রশ্নের ঢিল চাক ভাঙে
শ্বেতপত্রে লেখা এপিটাফ
ছায়া হারায় অন্ধকারে
বেদনার বিনীদ্র ঝরোকায়
প্রাসঙ্গিকতা খোঁজে
জীবনের ।