বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

সুশোভন ব্যানার্জ্জী



সুশোভন ব্যানার্জ্জী

চরিত্রহীন

বারবার লোডশেডিং এ অভস্ত দুই চোখ
ঠিক খুঁজে নেয় ঠাকুরঘরে রাখা দেশলাই বাক্স
বর্ষাকালে
চরিত্র খুইয়ে ধরা পড়ে যায়
কয়েকটা দেশলাই কাঠি
ফস করে জ্বলে মুহুর্তেই নিভে
প্রমাণ দেয় গোপন অভিসারের
একটা দেশলাই কাঠিও জ্বালাতে পারে না
রাস্তায় থুতু ফেলার মতো স্বগোক্তি
আমার প্রাক্তন প্রেমিকার, বর্তমান স্ত্রী
ওর অতীত প্রেমিকটিকে
পার্কস্ট্রীটে দেখেছিলাম
সেই ঝড়বাদলের দিনে
নিপুন কায়দায়
একটি মাত্র কাঠি খরচ করে
সিগারেটে জ্বালাতে
বাড়ী ফিরে সেকথা বলতেই
অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিল
ও এখনো সিগারেট খায়”?








পরিবর্তন

এখন আর ঘাড় ঘোরাতে পারেন না সেজজ্যাঠু
ডাইনে থেকে বাঁয়ে বা
বাম থেকে দক্ষিনে
উঁচুতে টাঙানো রঙিন ফ্লেক্স আর পড়তে পারেন না
নিচেই পড়ে থাকে শাদা রুমাল

একসময় দারুন ফুটবল খেলতেন
অভ্রান্ত হেডারে ছিঁড়ে যেত প্রতিপক্ষের জাল
তারপর এক সময় হঠাৎ
ময়দান বদল, খেলাও

এখন কয়েক কোটির মালিক সেজজ্যাঠু
নামি ডাক্তারের দামি পলিক্লিনিক
রক্ত, এম আর্ আই, স্ক্যান
সব স্বাভাবিক সূচকের এর কাছাকাছি
জ্যাঠু জানেন তাঁর ভয় নেই
স্পন্ডেলাইসিস তো মেরুদন্ডের অসুখ আর...








যদি জানতে

নিস্তব্ধতার গন্ধ শোঁকে বন্ধ সিলিং ফ্যান
বিছানার চাদরে মন কেমনের কবিতা
ক্ষয়াটে চাঁদের দুর্বল আলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
ঝোলা বারান্দার এককোণে
যেখান থেকে দেখা যায় সদর দরজা
দেখা যায় যাওয়া-আসা
সেই আবছায়ায়
লোহার রেলিং খোঁজে মেহেন্দীর নক্সা আঁকা হাত
পেলব কনুই

ভুলতে চেয়ে তোমাকেই মুখস্ত করে ফেলি রোজ...








চিরন্তনী

বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে নিরামিষ সংসার,
মাসকাবারি খুচরো অসুখ,
মাঝে মাঝে নিয়মভঙ্গের
দ্বন্দ্ব, আনন্দ।
হঠাৎ
আত্মীয়ের বেশে, এসে,
শেষে
চিংড়ি মিশিয়ে দেয় লাউয়ের তরকারীতে,
তারপর...
গুনগুন, ফিসফাস,বিশ্বাসভঙ্গের কান্না
দিনভর, সারারাত।
আর এখন?
সাড়া পাড়া জুড়ে আঁশটে গন্ধ।







সত্যি!

সত্যি কি...
আজও বুঝতে পারলাম না
বর্ণ, স্বাদ, গন্ধ মায় আকার অবধি
খুনপুরের দুপুরগুলোর পোলিও রোগ,
রাতগুলোর চোখে ছানি,
হাড়হাবাতে সকাল শুধু হাহাকার করে,
সিঁদূরমোছা বিকেলে শাঁখাভাঙার শব্দ

জামার কলার চিবানো ভাই একদৃষ্টে চেয়ে ফ্রকের ফিতে নিয়ে হাতের আঙুলে জড়ানো
আনমনে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটিতে আঁকিবুকি আঁকতে ব্যস্ত একবছরের বড় দিদির দিকে

পাথর মায়ের কোলে বসে চোখের জল মুছে, ছোট কাকার শক্ত চোয়ালে হাত রেখে জানতে ইচ্ছে হয়
ঠিক কি হয়েছে...

পরদিন সকালে শ্মশানে পোড়া কাঠকয়লা, মর্গের আধপোড়া রঙীন প্লাস্টিক,
সব মিথ্যে হয়ে যায়
সত্যি বলতে কি...
এতোটাই কষ্ট হয়?