বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

পার্থ সারথি গোস্বামী



পার্থ সারথি গোস্বামী

বুঢ়া দের হস্টেল

বলি হ্যাঁ মানিক খুড়া - শুনল্যে ন কি ?
শহুরা নতুন খেল ট শুনল্যে ?
বিস্তর ব্যাপার হে বাপ , বইলছে ন কি -
বুঢ়া লোকের  ল্যাগে হস্টেল কইরেছে হে ।
শুইনলম বাপ মা বুড়াইলে আর ঘরে লয়,
সবাই ন কি বুঢ়া বাপ মায়ের টুঁটি গিলাইন -
পকাপক ধইরছে আর হস্টেলে ঢুকাই দিছেক ।
ইখেনে উখেনে খ্যাখর খ্যাখর কপ-থুতুর বালাই নাই
বুঢ়া-বুড়ির হাগা মুতের গন্ধ নাই ,অপদ বিদায় ,
ঘর থ্যাকে মন সব একেবারে ঝকঝইকা তকতইকা ।
জনম দিয়ার দেনা শোধ কইরছন সুপুত্তুর সব ,
মাস পুহাল্যে হস্টেলের বেতন গুন্যে ।

গাঁয়ে ঘরে আমরা বড সুখেই আছি ,ন কি হে খুড়া ,
বলি আমরা কি ছেইলা মানুষ করি নাই ,
তুমার ট ইঞ্জিনিয়র ,আমার ট বড় অফিসর,
কই উয়ারা কি আমাদিকে বারকইরে দিয়েছে ,
বরং নিজেরাই বেরাই গেছেক - দূরে- শহরে ।
সকাল সাঁঝে নিয়ম করে ফোন কইরবেক ,
হ্যাঁ বাপ নিয়ম মতন ওষুধ ট খাও ত !
মায়ের বাতের বেদনাটা টুকুন কমেছ্যে !
পতিদিন দু বেলা খবর লিয়া চাই ই চাই ,
আবার বইলবেক পয়সার লাগে ভাইবনা ,
ডাক্তার দেখাই লিবে নিয়ম কইরে, ভুইলনা,
আমার ত আর সময় নাই যে যাইয়ে দেখাই দিব ।
হঁ রে বাপ জানি - তোর সময় নাই -
কাজের চাপ , বেটার ইস্কুল , বৌ এর বরাত
আর সময় কুথায় পাবি বল ন ।
আর একটু আধটু ছুটি পাল্যে
বৌ লিয়ে ঘুইরতে যাওয়া  , সিনমা দেখা -
সেগুলাও ত দরকার ন কি ।
আর আসবি বা কি কইরে ,
গরম কালে - ছানাটর নতুন কেলাস শুরু ,
তার উপরে ইখেনকার যা কারেন্ট - বল্যে লাভ নাই ।
বাদলে কুলি কুলি ভদভদানি কাদা,
আর দুগ্গা পূজাতে -
বৌ-ছা লিয়ে শ্বশুর ঘর যাবি ন ইখেনে আসবি ।

গাঁ ট জইমে যায় জাড়হা কালটয় ,
পুবের বিলটতে -পালেপালে উইড়ে আস্যে বাইল হাঁস ,
বলে ন কি,উগুলাইন আসে কোন দূরদেশ থাক্যে
তরাও আসিস -
বিলের মতন গাঁয়ের ঘর গিলান ভইরে যায় ।
খেজুর গুড় , গোরুর গাড়ি , ধানের পালুই
সব কিছু ছানা গিলানকে দেখাস ।
এমনটা লাগে যেমন -
তোর ছানাবেলা আর আমাদের কে, গারদে ঢুকাই-
ছানাটকে চিড়াখানা দেখাছিস ।
জাড় কাটে - বাইল হাঁস উইড়ে যায় ,
ছুটি ফুরায় - তরাও উইড়ে দিস ।
সাঁঝের বেলা , ওই শুখতারাটর নীচে
শুনা বুক ট লিয়ে, গটা গাঁ ট কে মনে হয় -
ওই বুঢ়া দের হস্টেল রে বাপ বুঢ়া দের হস্টেল ।

      





গাড়ি - ১৩৮ চাকা

গুরুবারের বাস্যাম বেলা , জাঁকে সান্যেছি এক জাম মুড়ি ,
কুথার লে আস্যে মাত লাগাইল,  মাইতর বাউন খুড়ি 
শুন্যেছে কুথায় , জামবেদ্যার কাছে মেন রোডটর পাশে
একট ধুমসা পারা মটর দাঁড়াইছে, কেজানে কুথারলে আস্যে ।
এমন মটর যার  নকি বাপ, সাত-কুড়ি আছে চাকা ,
কাড়া একট গল্যে যাবেক , তার তলটা এমন ফাঁকা ।
বলি হেঁ খুড়ি , তুমি কুথায় গেছল্যে, আর কুথায় লে
আল্যে ।
শেষে ফুলা বাত গিল্যান ঝাড়ার লাগ্যে আমার ঘর টই প্যাল্যে ।
হঁ বলত্যে পার এক কুড়ি চাক , নাল্যে আর দশটা দিলে জুইড়ে -
তা বল্যে খুড়ি , সাত কুড়ি চাক , বলি আল্য কি পাতাল ফুঁড়ে ।
ব্ল্ল্য খুড়ি হাঁই শুন বাপ , ইট লয় মোটেই ফুলা বাত,
এই একটু আগেই, সেট দেখ্যে -আল্য টেঁপির বাপ ।
এই ন শুন্যে বউট আমার এমন কাঁদনা দিল জুইড়ে
বলে দেখব গাড়ি,কন হুঁশ নাই ,গেল রাঁধনাট পুঁড়ে ।
যতই বুঝাই , যতই ভুলাই , ভেবি আর নাই ভুইলল ভেকে ।
শেষে ভটভটি তে বৌকে চাপাই , দিলম ইস্টাট জাঁক্যে ।

হঁ রে বাপ , সে এক মটর বঠে ,  তার দালান পারা গতর
দু কুড়ি হাঁতি ঢুক্যে জাবেক,সেটর এমন প্যাটের ফাঁপর ।
সকাললে গিনলে দুপুর হবেক, এত গিলান তার চাক
এমন ভিড়ের ভিড় লাগ্যেছে , নাই নিশ্বাস লিবার ফাঁক ।
ভাবলি তেল পুঁড়াই আলি যখন , ঘরেরলে এতটা দূরে
চাক গিলাইন না গিনেই , ঘর যাই কি কৈরে ঘুইরে ।
তারপর একখান বিড়ি ধরাই , গিনতে লাগলি চাক
একটু বাদে এক পুলিশ আস্যে ,দিল একখান হাঁক।
বলে তুমি কি কর ভাই , অমন আঙ্গুল তুল্যে তুল্যে
বললি আমি চাক গিনছি , চেঁচাইয় না যাব এখুনি ভুল্যে ।
পুলিশ বলে পাইছ মগের মুলুক , লিবে ফিরি তে গিনে চাকা
গিনতে হল্যে চাক পিছু ভাই , লাইগব্যেক এক টাকা ।
টাকা ট দিয়ে দৌড়ে আস্যে , ভটভটি টয় দিয়ে ইস্টাট
হাঁস্যে হাঁস্যে উল্টে গেলি , বৌ এর হইল চক্ষু-চড়াক গাছ ।
বলে- ই বাবা - হ্যাঁইসছ কেনে - গেলে নাকি খ্যেপ্যে ?
ক্যানে?বলিস বকা আমি,আজ পুলিশ গেল ঠক্যে ।
পুলিশকে বললি গিনেছি পঞ্চাশ , দিলি মোটে পঞ্চাশ ট টাকা ।
ততখনে আমি গিনে লিইছি , উ গাড়িটির দু কম সাতকুড়ি চাকা ।



           



সিভিক

বাপ বইলল থাম ইবেরে - বহু দেখালি খেল ,
এমনলে আর নাই টানলি - লেখাপড়ার রেল ।
উয়ার চাইয়ে যা হোক একটা, কাম-ধান্ধা কর
টাইনতে আর লারছি রে বাপ একা,এতবড় ঘর ।।

কাজ বইললেই কাজট কুথায়, শুরু বেকার জীবন
সকাল বিকাল আড্ডা মারার বিরাট আয়োজন ।
বাপের চোখের বালি হইলম,খারাপ হইলম সবার চোখে
ভাতের থালট বাড়াই দিত মা , সে এক বেজার  মুখে ।।

শুধু আড্ডা মারাই কাজ তখন, আর ফুটবল খেল
তিন বেলা পেট ভাতাইতে -আছেইত বাপের হোটেল ।
ছেঁড়া পকেট আর ফুটা কপাল - দুটিতে হইল সাথী
বিড়ি খাতেও দুবেলা তখন - বাপেরলে হাত পাতি।।

পাড়ার কারু হল্যে ছানা , কেউ তুইল্যে পটল
শ্মশান কিংবা হাসপাতালে, আমিই তখন বহাল ।
এত দুঃখের মাঝেও , তবু ছিল টুকুন সুখ
দেইখলেই মন জুড়াই যাত , আমার বাতাসির মুখ ।
পাঁচ বছরের গভীর পেরেম, এই ছয়ে দিবেক পা ,
বাতাসির বাপ আইনল খুঁজে, এক চাখরি করা ছা ।
চোখের জলে বুক ভিজল, ভাইঙ্গল মনের ভূল ,
বাতাসি গেল শ্বশুরঘর , আমকে দেখাই বুড়া-আঙ্গুল ।
ভাবি কুথায় যাব-কি কইরব, মনটা কুথায় জুড়াই
পাড়ার যত উঠতি মাইয়া , দেখ্যেই মু ট লেই ঘুরাই ।

ভাবছি লিব গলায় দড়ি, ঘুচাই দিব জীবন
এমন সময় বইলল আস্যে , পাড়ার দাদা 'সুজন'
বলে, থানায় যাইয়ে নামট লেখা-হত্যে পারে কাজ
তাই ছুইটলম , যদি ঘুচে বেকার থাকার লাজ ।

কাজ জুইটল,মান ও পাইলম-দিব্যি যাইচ্ছে চল্যে
লোকে এখন আমাদেরকে , সিভিক পুলিশ বলে ।
ছোটবাবুর পারা ডেরেস পইরে-যখন ডিউটি যাই চল্যে
তখন মু ঘুরান বিটিছা গিলানও - দেখি আড়চোখে ভালে ।
ঘরে সেদিন গাদা লোক , ভাবি কি হইল আবার
মুচকি হাইসে মা বইলল , সম্মন্ধ আইছে আমার ।
মাইয়ার বাপটু শুধায় বাপকে , ছানাট কি করে তুমার ,
ছাতিট ফুলাই বাপ বইলল , ব্যাটা আমার সিভিক-ভলান্টিয়ার ।







বেড্যা আছি

বেড্যা আছি - বেড্যা আছি , লাচ্যে কুন্দেই কাটচ্যে দিন -
সুখের ঠেলায় জীবন এখন , না লেড়ির ত্যেল না কেরাসিন ।।
বাজার হইল আগুন পারা , চাল ডাইল হোক কিংবা মুড়ি ,
উ সব নাল্যে ছাড়ই হে ব ,   শুধু আলুই কেজিতে কুড়ি ।
তাও ভাল তাও ভাল , বাপ ফুটাক কেনে বেঁত ট ফ্যাইড়ে ,
ছানারা বেশ মাত্যে আছে, হয় ধম্ম না হয় ফ্যাসবুক পইড়ে ।
মনের সুখে লিলি চিবাই , নাম না জানা ভাগাড় মাশ ,
তার পরেও দিব্যি দেখি , সেই রাম-রহিমের নামেই চেঁচাস ।।
বেড্যা আছি - বেড্যা আছি , লাচ্যে কুন্দেই কাটচ্যে দিন -
সুখের ঠেলায় জীবন এখন , না লেড়ির ত্যেল না কেরাসিন ।।

ভটভটি টাও ধুইয়ে মুছ্যে , ভাবছি দিব কঠায় তুল্যে ,
পেট্রলের দাম ট শুন্যে , বাপের নাম তক  যাচ্ছি ভুল্যে ।
আমরা হল্যম জগা মাধা , সুখ অসুখ কি আমরা বুঝি,
বিদ্ব-জন সব আছেন বস্যে , তাঁরাই উপায় দিবেন খুঁজি ।
তাঁরাই দিবেক বিধান, নীতি , শ্যাম রাখবি না রাখবি কুল ,
আমাদের আবার মত ট কি রে, তুই আমি  ছেঁড়া চুল ।
তাঁদের কি আর সময় আছে , তাঁরাই কুথায় সময় পাবেক,
মদ-মাতাল নাবালক মরলেও, মিছিল ট ত করত্যে হবেক ।
ক্যামেরা লাগাই খাবেক মাশ, মোমবাতিট জ্বাইলে দিবেক ,
পাতাল রেলে আদর চুমু , উচিত কি ন তেনারাই বলব্যেক ।
বাড়ুক ক্যেনে গ্যাসের দাম , দ্যাশের টাকা লিয়ে কেউ যাকন ফুট্যে,
তুই আর আমি দাঁত ট কেলাই , দিব জীবন হরির লুট্যে ।।
বেড্যা আছি - বেড্যা আছি , লাচ্যে কুন্দেই কাটচ্যে দিন -
কানা ঘুইস্যা বলছ্যে সবাই, ইটই ন কি আচ্ছে দিন ।।

          






স্বাধীন দ্যাশে

লাচছি রে ভাই - লাচছি সবাই - ঠ্যাং ট তুল্যে তা ধীন ধীন ,
স্বাধীন রে তাই - আমরা সবাই - দ্যাশেতে আইজ সব স্বাধীন ।।
মাস্টর স্বাধীন - জীবন রঙিন - ঘরেঘরে সব খুলছ্যে টোল ,
ইস্কুল যাকগে - মায়ের ভোগে - ছাত্ররা বলুক হরিবোল ।।
আজ শিক্ষকতা - হৈছে পেশা - মিড ডে মিলেই কাটছে দিন ।
চালের বস্তা - আলুর খসা - আইসছে কটা ত্যালের টিন ।।

স্বাধীন পুলিশ - খাচ্চ্যে ইলিশ - স্বাধীন রোডে হাত পাত্যে ।
বাড়ছ্যে চুরি - পকেটমারি - সময় কুথায় চোর  ধরত্যে ।
শান্তিরক্ষক - হৈছে ভক্ষক - দেখল্যে পুলিশ জীবন উড়ে ।
নিজের চাল্যে - পুলিশ চলে - তুই-আমি ফুটাই বেঁত ফাঁড়ে ।

ডাক্তর ভাই - হৈছে কসাই - সব স্বাধীন স্বাধীন চেম্বারে ।
হসপিটালে - ডিউটি ভুল্যে - রুগী কে পাঠায় যম ঘরে ।
রক্তে, মলে - রিপোর্টের ছলে - কমিশনের লাফড়া কেস ।
ওষুধ লেখ্যে - বখরা লুট্যে - অফারে যায় ঘুরত্যে বিদেশ ।

আলু স্বাধীন - পটল স্বাধীন - স্বাধীন রে ভাই বাজার দর ।
ত্যাল ও বাড়ে - গ্যাসও বাড়ে - ফাটছ্যে পিছু , চালাত্যে ঘর ।
নেতাও স্বাধীন - মন্ত্রী স্বাধীন - স্বাধীন দ্যাশে তারাই পিতা ।
ভুখা পেটে - গরিব খাট্যে - রেডুয়ায় শুনে মনের কথা ।
ছাত্র স্বাধীন - যুবক স্বাধীন - মাত্যে হোয়াটসএপ আর ফ্যাসবুকে ।
দ্যাশট লুট্যে - নীরবে ফুটে - আমরা ভাগাড় চুষি স্বাধীন সুখে ।।