বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

সোমা রায়



সোমা রায়

দোতারা

বাদামী প্রায় ধূসর দুটি চোখ
কালো কাজল অন্য মাত্রা দিয়েছে
আমি অপলক চেয়ে রইতাম
লোকে বলত প্রেতিনীর চোখ
আমি দেখতাম টলটলে দু ফোঁটা জল
আলাপ হতে গেলাম বিদেশিনীর ঘর
নির্ভুল উচ্চারণে দোতারা বাজিয়ে
বাউল গান শুনে আমি অবাক।

এর বহুদিন পর মেলায় দেখা
ধূসর চোখ আরও ফ্যাকাসে
সত্যিই শিরশিরে তীব্র দৃষ্টি
চেনা একগাল হাসিতে স্বস্তি
বেসামাল কৌতূহলে শুনলাম ইতিহাস
যার হাত ধরে ঘরছাড়া সে বেইমানের
দেখা মিলেছে এই মেলায় স্ত্রী সন্তানস।

আমার স্তব্ধ দৃষ্টিতে দুটি ধুস্র ধূসর চোখ
মিলে যেতেই জানলাম দোতারাটি হাত বদলেছে
যে দিয়েছিল তার হাতেই
আজ দেখলাম নতুন একতারা
বাজাতে বাজাতে শোনালেন মনের মানুষের গান
আর বহুদিনের অদেখা দুটি বৃষ্টি ফোঁটা
ঝরে পড়ল ধূসর দুটি চোখ থেকে।







অপেক্ষা

সন্ধ্যে নামছে কচুরিপানার খাঁজে
পুকুর ছোঁয়া জলতরঙ্গ
ফড়িঙের চঞ্চলতা
ঝুঁকে পড়া গাছের
টুপটাপ ঝরা পাতা
কলসি কাঁখে কোন বধূ
নেই এ পথে।

সন্ধ্যে নামছে আজও
শীতের কাঁপন নিয়ে
বাতাসে এলোমেলো কান্না
কচুরিপানার নীল ফুল
আজও অপেক্ষায়
কলসি কাঁখে আসবে কোন বধূ।







মহাকালের নারী

রাতদুপুরে একা ব্যালকনি
অন্ধকার মৌন চরাচর
মাঝে মাঝে কালো আকাশে
দু একটি বিদ্যুতের ঝলকানি
ফিসফিসে হাওয়ায় ভেসে আসে
এক জীবনের হিসেবের খতিয়ান
জনক জননী আলোকবর্ষ দূরে
আত্মজ আত্মজা সাগরপার
শয়নকক্ষের পুরুষালী নাসারব
আনে একাকীত্ব অবসাদ
একা এক মহাকালের নারী
হেঁটে চলে জীবনবৃত্তের পথ







কাস্তে

একফালি চাঁদ আমায় দেখে হাসে
একফালি চাঁদ আমায় দয়া করে
একফালি চাঁদ আঙুল তুলে দেখায়
ওই ওই ওই দেখ তোর শত্রু
তোর পরমাত্মীয় তোর পরানসখা
একফালি চাঁদ আমায় সতর্ক করে
চোখে আঙুল দিয়ে শেখায়
বলে একফালি বটে কিন্তু শাণিত ক্ষুরধার 







বসন্তবরণ

তমালতরুছায়ে দু দণ্ড জিরিয়ে আমি চলি
বিসর্পিল বনের গহন পথে
পদতলে পত্রমর্মরে ওঠে শিহরণ
শীতশেষের সোনারোদ দ্রুত সরে যায়
পশ্চিমান্তরে।

আমি চলি আনমনে নীপবন সন্ধানে
 অরণ্য হাতছানি দেয়
নিয়ে যায় বন থেকে বনান্তরে
অবশেষে নীপবন।

তরুতল শুষ্ক পল্লবে ছাওয়া
খসে পড়ে টুপটাপ নীপপল্লব
বেদনায় হাহাকারে
শিউড়ে উঠি শীতার্ত নিঃশ্বাসে
যেন কী এক সম্মোহন
ছুটি প্রাণপণ  বিসর্পিল পথ ধরে।


ফিরি সেই তমালতরুছায়ে
তমালের কালো দেহে কপোল জুড়োই
দু ফোঁটা শিশির ঝরে পড়ে
বলে এসো এসো বসন্ত
তোমাকেই দিয়ে যাই
আমার বরণমালাখানি।