রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

বিভাবসু দে



বিভাবসু দে

অহল্যা

ছদ্মগোলাপের সিংহাসনতলে
সোনার গোধূলি কালো মেঘে ছায়, অজানা চুম্বনে ;
প্রেমের দেবতা তার ঘৃণার রং ভরে অন্ধ আদর্শে |
পাথুরে ফলকে জীবন কাঁদে, ছিন্ন পাণ্ডুলিপি তার ,
রক্ত-কুয়াশা ভিজিয়ে যায় তপ্ত শিলালিপি,
দারুণ বসন্তদিনে নীরব হাহাকার ;
পাষাণী যৌবন ধূসর শ্বাসে ভরে ক্লান্ত ফুসফুস,
অজানা প্রতীক্ষা চলে দিগন্তের মরীচিকায় ,
বহু বসন্ত কাটে মৃত্যু শীতল নীরবতায় |
অপেক্ষা তার, পক্ষাঘাতে ভুলেছে সময়,
বরফঢাকা পাথরে তবু তপ্ত ব্যথা ,
নীলাভ শীতলতায় গুমরে মরে ব্যর্থ প্রেম তার ;
দিগন্তপারে তবু স্বপ্ন , আবার বাঁচার |
সময়ের চক্রপথে ভিজেছে পাষাণ,
কালো মেঘ ভেঙে বৃষ্টি , আকাশে সোনালী সকাল ;
প্রেমের দেবতা এসেছে আবার ,
গতিহীন শ্মশানপথে আজ স্বপ্নকলির ষোড়শী যৌবন ,
পাষাণী হৃদয় তার সেজেছে শিউলিহারে,
দেবতা পাষাণবুকে মৌন অভিসারে |






চেতনা

অসীমের পথে লাস্যময়ী আগ্রাসন ;
কাঁটাতার চেপে ধরে ধমনীর রক্তস্রোত ,
সসীম পিঞ্জরে চলে স্বার্থের নিশিযজ্ঞ ;
স্বপ্নদেখা চোখ, হলদে বাস্তব খুঁজে
সবুজের দগ্ধ ভাগাড়ে ;
ক্ষুধিত যৌবন ভাতের ফ্যানে চোখ ধুয়ে
তবু দেখে পুবের আকাশ |






ঘাম

ধানের শিষে তোমার রক্তবীজ ,
আমি আকাশ ছুঁয়ে স্বপ্ন দেখি দিনে,
কানে গোঁজা হেডফোনে থেমে যায় তোমার হাহাকার ;
তোমার কাদা-ঘামে ভেজা সন্ধ্যায়
আমি পার্কে বসে রাতের স্বপ্ন বুনি ;
তুমি যেদিন রোদে পুড়ে ইট ভাঙো ,
আমি ইটের প্রাসাদ গড়ি এ.সি-র আমেজে ;
মাইক হাতে মঞ্চে উঠি, সমাজের শির হয়ে,
আমার শিরদাঁড়া বেয়ে শুধুই তোমার  ,
রক্তশোষা ঘাম |






মরীচিকা

বসন্ত সন্ধ্যা ,
          দুয়ারে কড়া নাড়ে,
পাঁজরের শুকনো খাঁজে আবার কিশলয়
হাসে উল্লাসে ওই দখিনা মলয় |
ছুটে যাই দ্বারে ,
            প্রণয়ের হারে,
বসন্ত আস্বাদন |
সবুজ স্বপ্ন ভাঙে
নীরব অভিমানে ;
বাসন্তী-যামিনী মোর, তুষার মরীচিকা |







রাধা

কে যেন একা দাঁড়িয়েছে কদমের তলে,
বাঁশির বিষে নীল শাড়ি তার,
কাজলের কালিতে আজ কালোর কালিমা ;
যে ঠোঁটে বেজেছিল বাঁশি,
ছিন্নমস্তা উল্লাসে আজ শুধুই নীরবতা |
পাতাঝরা বসন্তদিনে একাকী ষোড়শী ,
স্বপ্নে তার রাতের আঁধার ,
তারার জোনাকি জ্বলে চোখের তারায় |
যে কালো অঙ্গারে এলিয়ে পড়েছিল কিশোরী-ললাট,
আজ একাকী চিতায় তার দগ্ধ প্রেমের ব্যথা ;
সোনালী যৌবনে শুধু কালিমার হার,
ভিতরে বাইরে তার কৃষ্ণ অভিসার |